বাংলাদেশ, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

জার্মানী সুন্দরীর নামে লার পাড়া, কে এই ‘লার’?

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০৯-০৬ ০১:৩৩:৪৫  

 

সিয়াম মাহমুদ সোহেল:

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলাংজা ইউনিয়ের ১নং ওয়ার্ড লার পাড়া। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক হারুন অর রশিদ (সিএসপি) স্ত্রী জার্মানী নাগরিক লাহার বেগমের নামানুসারে সেখানকার বাসিন্দারা ওই এলাকাকে লারপাড়া নামে ডাকা শুরু করেন। আর সেই থেকেই লার পাড়ার উৎপত্তি এবং বর্তমানেও সেটি লার পাড়া নামেই পরিচিত। এই এলাকার নামাকরণের নেপথ্যে রয়েছে এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস। যা এখানে বসবাসরত বর্তমান প্রজন্ম থেকে শুরু করে অনেকের কাছেই অজানা।

১৯৬০ সালে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা চকরিয়া, পেকুয়া, উজানটিয়া, কৈয়ারদিয়া, গোমাতলী, মহেশখালী কুতুবদিয়া সহ টেকনাফের বেশকিছু মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করতেন। এই অবস্থায় তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক হারুন অর রশিদ নিজ ও সরকারী উদ্যোগে উদ্ধাস্তু পরিবারগুলোকে হারবাং, লাইট হাউজ, মহাজের পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নোঙ্গরখানা খুলে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেন।

ওইসময় বর্তমান কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালস্থ পূর্ব ও পশ্চিম লারপাড়ায় অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রায় ১৬৩টি পরিবারকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন। পরে তৎকালীন প্রশাসক হারুন অর রশীদ (সিএসপি) তাদেরকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের জন্যে সরকারের কাছে বন্দোবস্তি পাওয়ার আবেদন করেন।

আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম রাজস্বকে ৫ বছরের সেলামী মওকুফ ও পরবর্তী ৫ বছরের সেলামী গ্রহন করে প্রতি পরিবারকে ১.০০ একর করে জায়গা স্থায়ী বন্দোবস্তি দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু কার্যপ্রক্রিয়া ত্রুটির কারণে তাদের আর স্থায়ী বন্দোবস্তি দেয়া হয়নি।

পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৪ সালে ঝিলাংজা মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের আওতাধীন আরএস ৯৮২ দাগের ভিতর ১৮৩.৯৬ একর জায়গায় বসবাসরত ১১০/১৬৩ পরিবার প্রধানের নামে খন্ড বিএস (অবৈধ দখলদার) হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে পরিবার বর্ধিত হয়ে অর্থাৎ ২০০৭ সাল পর্যন্ত ৪৪৭ পরিবারের উৎপত্তি হয়। ওইসময় এই এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের উৎস ছিল শ্রমিক, কেরানি ও মৎস্য আহরণ।

বাস্তুচ্যুত মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাসের পরও নানা স্থান থেকে আরো অনেকেই এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। এমনকি অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্টানও খুলে বসেন কিন্তু তখনও ওই এলাকার কোন নামকরণ হয়নি।

যেভাবে লার পাড়ার নামকরণ হয়:

তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক হারুন অর রশিদ (সিএসপি) লাহা নামক একজন জার্মানী নাগরিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর লাহা’র নাম দেয়া হয় লাহার বেগম। পরবর্তীতে সেখানকার মানুষজন প্রশাসক হারুন অর রশিদের আন্তরিকতার উপহার স্বরুপ প্রশাসকের স্ত্রী লাহার বেগমের নামানুসারে মৌখিকভাবে ওই এলাকাকে লারপাড়া ডাকা শুরু করে। আর সেই থেকেই লার পাড়ার উৎপত্তি এবং বর্তমানেও সেটি লার পাড়া নামেই পরিচিত।

লারপাড়া উন্নয়ন কার্যকরী পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২০০৭ সালের আগে এই এলাকায় উল্লেখযোগ্য তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। শুধুমাত্র লারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া ছিলনা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চোখে পড়ার মত উন্নয়ন ও অবস্থার পরিবর্তন হয়। বর্তমানে ছোট বড় সব মিলিয়ে ২০টির মত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বাস টার্মিনাল ও কলাতলী সৈকত কাছে হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে একাধিক আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।

পূর্ব লারপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জুনায়েদ উদ্দীন লাবলু বলেন, বিগত কয়েক বছরে এই এলাকায় বেড়ে গেছে মাদক ব্যবসা। স্থানীয় ও অন্য এলাকা থেকে আসা কতিপয় মাদক ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্যের লারপাড়াকে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করছে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী এখানে এসে মাদকের টাকায় আলিসান দালান তৈরি করে বিলাস বহুল জীবনযাপন করছে। তাদের কারণেই মূলতঃ ঐতিহ্যবাহী লারপাড়ার সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্থানীয়দের দাবী মাদকের চোবল হতে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করে এলাকার সুনাম ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা