বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রশাসনের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি !

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-০৬-১৬ ০০:৪৫:২৪  

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে অবৈধ পারমিট বিহীন চলাচলকারী হিউম্যান হলার (লেগুনা) গাড়ি থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকার চাঁদাবাজি অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসন ম্যানেজ ও লাইন খরচের নামে এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন লেগুনা মালিক সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারীরা এমনটায় অভিযোগ গাড়ির চালক ও মালিকদের।

জানা যায়, কক্সবাজারের ঈদগাহ থেকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পর্যন্ত ৫শ গাড়ি চলাচল করে প্রতিদিন। সড়কে এই অবৈধ গাড়িগুলোর বৈধতা পেতে প্রতিটি গাড়ির চালক ও মালিকদের প্রতিমাসে দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। প্রশাসনের নামে এভাবে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা আদায় করেন কথিত শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতারা।

এসব নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসনের নামে টাকা আদায় করে চকরিয়া থেকে ঈদগাঁহ পর্যন্ত হিউম্যান হলার ফোর হুইলার পরিবহন মালিক সমিতি (রেজিঃ ২৫২৯) এর নামে মোঃ ইউনুচ, মোঃ আলী ও মোঃ কালু, লোহাগাড়া থেকে চকরিয়া পর্যন্ত লোহাগাড়া আরকান সড়ক মাহিন্দ্রা জিতু চালক সমবায় সমিতি লিমিটেড (রেজিঃ ১৩৮৬৮) এর নামে মোঃ এরশাদ ও মোঃ ইফতেখার, আমিরাবাদ থেকে কেরাণীহাট মোঃ সরওয়ার আলম, কেরাণীহাট থেকে চন্দনাইশ পর্যন্ত মোঃ জানে আলম।

প্রতিমাসে লাইন খরচের টাকার ভাগ চলে যায় ডুলহাজারা হাইওয়ে থানা, চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানা, দোহাজারী হাইওয়ে থানা, চকরিয়া ট্রাফিক বিভাগ, লোহাগাড়া ট্রাফিক বিভাগ ও কেরানীহাট ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের পকেটে।

অথচ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষে বলছে এসব লেগুনা গাড়িকে আজ পর্যন্ত রোড পারমিট দেওয়া হয় নি তাদের পক্ষ থেকে। তবুও কিভাবে মহাসড়কে এসব গাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় জানা নাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ড্রাইভার জানান, এমনিতেই সড়কে গাড়ি বেশি হওয়ার কারনে ভাড়া কম। কর্মচারী ও গাড়ির মালিককে দিয়ে অল্প কিছু টাকা থাকে। তার উপর প্রতিদিন লাইন খরচের নামে মাসে ৬ হাজার টাকা দেওয়া খুব কষ্টকর হয়ে যায়। আবার না দিলেও ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়। কেন টাকা দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে ড্রাইভাররা বলেন, এই লেগুনা গাড়িগুলোর রুট পার্মিট নাই। সমিতির সভাপতি সেক্রেটারীর সাথে থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সাথে চুক্তি আছে। তাই টাকা দিলে মামলার ভয় থাকে না। পুলিশও হয়রানী করে না।

কৌশলে লাইন খরচের নামে মাসিক ৬ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে এসব কয়েকজন লাইনম্যান জানান, কেউ যদি গাড়ি সংযোগ দিতে চায় তাহলে ২২শ টাকা দিয়ে লাইনে ভর্তি হতে হবে। এরপর দৈনিক ২শ করে মাসে ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। ওখান থেকে প্রতিমাসে ট্রাফিক, হাইওয়ে ও সমিতির সভাপতিদের কাছে টাকা চলে যাবে। পথে কেউ সিগন্যাল বা গাড়ি আটকালে বিষয়টা লাইনম্যানরা দেখবে বলেও জানান তারা।

এদিকে নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় সদস্য মোজাহিদ হোছাইন সাগর বলেন, সড়কে অবৈধ রোড পারমিট ও অনুমোদবিহীন হিউম্যান হলার (লেগুনা) চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত হচ্ছে দুর্ঘটনা। অধিকাংশ ড্রাইভারের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। তবুও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, শ্রমিক ও মালিক সমিতির নেতাদের কারণে দিনদিন বাড়ছে বিপজ্জনক এই হিউম্যান হলার (লেগুনা)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈদগাহ, ডুলহাজারা, চকরিয়া, লোহাগাড়া ও কেরাণীহাট লেগুনা সমিতির সভাপতিরা বিষয়টি জানেন না বলে জানান তারা।

জানতে চাইলে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওন এর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বাংলাদেশ পেপার’কে বলেন, সড়কে হাইওয়ে থানার কর্মকর্তাদের চাদাবাজির ব্যাপারে আমার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আমার কাছে আসে নাই। যদি অভিযোগ পায় তাহলে তদন্ত করে সর্বোচ্চ ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, সড়কে থ্রি হুইলার ও লেগুনা চলাচল সম্পূর্ন নিষেধ। আমাদের কেউ যদি সড়কে লেগুনার চলার অনুমতি দিয়ে টাকা আদায় করে অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে জানান তিনি।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা