গত কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল। পানির অভাবে কৃষকরা পঁচাতে পারছে না পাট। জমিতে পাট কেটে ফেলে রেখেছেন। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে সেখানে পাট পঁচাবেন।
আবার কয়েকজন কৃষক পাটকাঠির আশা ছেড়ে গাছ থেকে আঁশ তুলে স্বল্প পানিতে ‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে পাট পঁচাচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর পাংশায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর এগারো হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এ বছর পাংশায় পাটের আঁশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিকটন।
উপজেলার কুঠিমালিয়াট গ্রামের কৃষক সতীশ চন্দ্র বর্মণ (৬৫) বলেন, ‘এ বছর ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। গত বছর করেছিলাম ৯ বিঘায়। বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলে পানি নেই। পাট পঁচাতে পারছি না। পাট কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছি।’
‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে স্বল্প পানিতে পাট পঁচানো যায় কিন্তু এতে পাটকাঠি নষ্ট হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাটকাঠির প্রয়োজন। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে খাল-বিলে পানি না এলে রিবন রোটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।’
জোনাপাট্টা গ্রামের কৃষক সিরাজ (৬০) বলেন, ‘পানির অভাবে পাট পঁচাতে না পেরে জটিল সমস্যায় পড়েছি। অতিরিক্ত পরিবহন খরচ করে অনেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে নদীতে পাট পঁচাচ্ছেন। আশ-পাশের খাল-বিলে পানি নেই। পুকুরগুলোয় পানি আছে। কিন্তু, মাছ চাষ করায় সেখানে পাট পঁচানো যাচ্ছে না। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। অর্ধেক জমির পাট কেটে ফেলে রেখেছি।’
একই এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘পাট চাষ করতে নানান জটিলতার পড়তে হয়। তারপরও পাট চাষ করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া না গেলে কষ্ট বেড়ে যায়। এসব কারণে দিন দিন পাটের চাষ কমে যাচ্ছে। সঠিকভাবে পাট পঁচাতে না পারলে উৎকৃষ্টমানের আঁশ পাওয়া যায় না। কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পাট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়।’
পাংশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পঁচাতে পারছেন না। রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক সময় সমতলে প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ হতো। এখন সেসব জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে পাট চাষ এখন মূলত পরিত্যক্ত জমি ও চর এলাকায় হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নতজাতের পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এ জন্য আমরা বিভিন্নস্থানে কৃষকের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছি।’