বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিপিং এজেন্টদের বাড়তি চার্জ আরোপ নয়

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০৫-১৮ ২৩:৫৪:২১  

আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশ, চট্টগ্রাম বন্দরের স্টোর রেন্ট মওকুফের সময় বাড়ানোর চিন্তা

হাছিব হোছাইনঃ

আমদানি ও রফতানি পণ্যের ওপর নতুন করে চার্জ, বাড়তি চার্জ বা জরিমানা (ডেমারেজ/ডিটেনশন) আরোপ করতে পারবে না শিপিং লাইনের এজেন্টরা।

২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত এসব পণ্যের ওপর বাড়তি চার্জ বা জরিমানা আরোপ না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদফতর। রোববার অধিদফতরের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে এ সংক্রান্ত সংশোধিত সার্কুলার জারি করেছে সংস্থাটি।

করোনার এই দুঃসময়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সচল রাখতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার স্টোর রেন্ট শতভাগ মওকুফের সময় ১৬ মে শেষ হয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে এটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।

জানতে চাইলে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, করোনার এই সংকটে আমদানি-রফতানি চেইন সচল রাখতে বাড়তি চার্জ বা জরিমানা আদায় না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত স্টেকহোল্ডারদের জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এই সংকটে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যবসা-বাণিজ্য না টিকলে শিপিং লাইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও টিকতে পারবেন না। তাই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বলা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র বলছে, নৌপরিবহন অধিদফতর এর আগে ২৯ এপ্রিল বাড়তি চার্জ আদায় না করার জন্য অ্যাডভাইজারি পত্র জারি করে। এরপরও কয়েকটি এজেন্ট বাড়তি চার্জ আরোপ করে আসছে। এমনকি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে ওই অ্যাডভাইজারি পত্র প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দেয়া হয়।

এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে অধিদফতরে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে চার্জ মওকুফে আপত্তি জানিয়ে শিপিং লাইন এজেন্টরা বলেছেন, আমদানি-রফতানি পণ্য বন্দরে অতিরিক্ত সময় আটকে থাকলে বিভিন্ন খাত-উপখাতে বাড়তি চার্জ ও জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে।

এমনকি বিদেশি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নোঙর বা অভ্যন্তরে বেশিদিন অবস্থান করলে পরিচালনার খাতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে শিপিং লাইনগুলোকে।

তারা উদাহরণ টেনে বলেন, একটি মধ্যম আকারের সমুদ্রগামী জাহাজের শুধু পরিচালনা খাতেই দৈনিক ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার খরচ আছে। অন্যান্য খাতেও খরচ রয়েছে।

জবাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ ও নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, করোনার এ দুঃসময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবসায়ী ও শিপিং লাইন এজেন্টদের বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জ মওকুফ করেছে; যা টাকার অঙ্কে ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

এছাড়া করোনাপ্রবণ দেশ থেকে আসা ফিডার জাহাজ ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন করছে বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশ তা শিথিল করেছে।

এতে শিপিং লাইন এজেন্টরা ওই ১৪ দিনের জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য খরচ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। তারা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য টিকে থাকলে শিপিং লাইনও ব্যবসা করতে পারবে। এভাবে যুক্তি-পাল্টাযুক্তির পর শিপিং এজেন্টগুলোকে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত আমদানি-রফতানি পণ্যের ওপর নতুন করে কোনো চার্জ আরোপ, নির্ধারিত সময়ের বেশি হওয়ায় বাড়তি চার্জ বা জরিমানা আদায় না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২৬ মার্চের পর যেসব পণ্যের ওপর বাড়তি চার্জ বা জরিমানা আদায় করা হয়েছে সেগুলো সমন্বয়ের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। যদিও বৈঠকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টের প্রতিনিধিরা বিষয়টি প্রিন্সিপাল (প্রধান) কোম্পানির ওপর নির্ভর করবে মত দেন। তবে বৈঠকে তাদের সরকার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, ব্যবসা করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। পরে নৌপরিবহন অধিদফতর এ সংক্রান্ত সংশোধিত সার্কুলার জারি করে।

সার্কুলারের কপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ব্যবসায়িক শীর্ষ সংগঠনগুলো, শিপার্স কাউন্সিল, শিপিং এজেন্ট ও মেইন লাইন অপারেটরদের এজেন্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের এই সংকটের সময়ে শিপিং লাইন এজেন্টগুলোকে বিভিন্ন খাতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে সরকার। এরপরও কয়েকটি এজেন্ট বাড়তি চার্জ ও জরিমানা আরোপ করে আসছে। লোকসানের ভয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অনেক ব্যবসায়ী কনটেইনার নিচ্ছেন না। এতে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। শনিবারও এ বন্দরে প্রায় সাড়ে চার হাজার কনটেইনার আটকে ছিল।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীরা কনটেইনার নিতে শুরু করবেন। এতে বন্দরের জট কমবে। পণ্য ওঠানামার গতি বাড়বে।

চট্টগ্রাম বন্দরের স্টোররেন্ট মওকুফ : এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার স্টোররেন্ট মওকুফের সময় ১৬ মে শনিবার শেষ হয়েছে।

সূত্র বলছে, সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে স্টোররেন্ট আগামী ৩০ মে পর্যন্ত অর্ধেক মওকুফের চিন্তাভাবনা চলছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্টোররেন্ট শতভাগ মওকুফের এখতিয়ার বন্দর কর্তৃপক্ষের নেই।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা