বাংলাদেশ, , রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

বিদেশে বসে ‘রাজবাড়ীর আন্ডারওয়ার্ল্ড’ নিয়ন্ত্রণ

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-০৪-২০ ১৫:০৩:৪৭  

বিদেশে ও জেলখানায় অবস্থান করে দক্ষিণের জেলা রাজবাড়ী সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে চরমপন্থী অমল ও তার সহযোগীরা। খুন-জখম, অন্যের জমি দখল, চাঁদাবাজি এখনো তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের নির্দেশনা তামিল করছে রাজবাড়ীতে থাকা সহযোগীরা। ইতোপূর্বে ঘটে যাওয়া খুন ও বর্তমানে চাঁদাবাজির একাধিক ঘটনায় অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে এসব উঠে এসেছে।

সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সুবর্ণকোলা এলাকায় তারাবি নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর সুবর্ণকোলা গ্রামের খায়রুল (৪২) নামের এক যুবককে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় জমি দখলের উদ্দেশ্যে এলাকায় অবস্থানকারী অমল বাহিনীর সদস্য কর্তৃক ঘটনাটি ঘটে।

বলছিলাম দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন অমল বাহিনীর প্রধান পাংশা উপজেলার সুবর্ণকোলা গ্রামের বাসিন্দা ভোলানাথ মন্ডলের ছেলে অমল কৃষ্ণ মন্ডলের (৫২) কথা। যার নির্দেশনা অনুযায়ী মূল কিলিং মিশনে অংশ নেয় অমল বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি মিশনে অমল তার বাহিনীর সন্ত্রাসীদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করে। অস্ত্র সরবরাহকারী অমলের বর্তমান অবস্থান হলো কলকাতার বনগাঁওয়ে। কলকাতা সহ ভারতের নদীয়া ও ত্রিপুরায় অবস্থানকারী শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সাথে বর্তমানে তার ওঠাবসা। বিদেশে বসেই শীর্ষ সন্ত্রাসী অমল দক্ষিণের জেলাগুলোতে অবস্থানকারী তার দলীয় সদস্যদের হত্যা, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মাদক পাচারের মতো নানা অপরাধমূলক কাজের নির্দেশ দেয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিদেশে অবস্থান করেই রাজবাড়ীর ঠিকাদার সহ বিভিন্ন খাতের বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি করছে এসব সন্ত্রাসী। শুধু যে বড় ব্যবসায়ীরাই তাদের চাঁদাবাজির শিকার তা কিন্তু নয়। চলতি বছর এপ্রিলের প্রথম দিকে পাংশা উপজেলার সুবর্ণকোলা ও কলিমহর ইউনিয়ন থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদা আদায় করে অমল বাহিনী। ইতোপূর্বে যারা চাঁদা দেয়নি তাদের অনেককেই পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে চরমপন্থী অমল বাহিনী। সূত্র জানায় অমলের জন্য প্রতিমাসে প্রায় এক কোটি টাকা চাঁদা যাচ্ছে এই অঞ্চল থেকে

দক্ষিণের বৃহৎ এই অঞ্চলের প্রধান চরমপন্থী সংগঠন অমল বাহিনীর সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি চারজোট সরকারের আমলে। ওই সময়টাতে অমল ছিল তৎকালীন নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম সদস্য। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্নসমর্পণ করেন অমল ও তার দুই ডজন সহযোগী।

কিন্তু আত্নসমর্পণের পরবর্তী সময়টাতে অমল বাহিনী যেন হয়ে ওঠে আরো ভয়ংকর। ১৯৯৭ সালে পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের বয়রাট গ্রামে দাউদ ও কালাম নামের দুজন ব্যক্তি সহ মোট তিনজনকে একসঙ্গে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৮ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের বাসিন্দা মৃত ওনাই জর্দারের ছেলে মোহনকে কেয়াকগ্রাম গড়াই নদীর চরে জবাই করে লাশটি অর্ধশত টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের শান্তিকোলা গ্রামের মনোহর বিশ্বাসের ছেলে বদিয়ার বিশ্বাসকে হত্যা করে অমল বাহিনী। তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আবু বাহিনীর প্রধান আবুকে উপজেলার মোরাট ইউনিয়নের রুপিয়াট গ্রামে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে পাংশা উপজেলাসহ এর বাইরে প্রায় দেড় ডজন হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অমল বাহিনীর প্রধান অমল কৃষ্ণ। তথ্য বলছে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তার আদায়কৃত চাঁদার পরিমান প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। যার অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছিল অবৈধ অস্ত্র কেনার কাজে।

একাধিক হত্যা মামলাসহ অমল কৃষ্ণ মন্ডলের নামে বর্তমানে ৩০টি মামলা রয়েছে। তবে ১৯৯৭-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংঘটিত প্রায় এক ডজন হত্যার কোনো প্রকার মামলাই হয়নি। হবে কি করে? অমল ও তার সহযোগীদের ভয়ে কেউ মামলা করেনি। এমন কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা হলে নাম গোপনীয়তার স্বার্থে তারা জানান, সরকার, প্রশাসন যদি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে, তবে আমরা মামলা করতাম, আইনের আশ্রয় নিতাম। কিন্তু, মামলার করার জন্য আবার যদি এমন হত্যা হয়, স্বজন হারাবো, নিরুপায় হয়ে চলে যেতে বাধ্য হব। যে ভয় ঢুকেছে মনে তা কি সহজে আর বের হবে?’

২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চারদলীয় জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করে ধরিয়ে দিতে সাড়ে পনেরো লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। সে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল অমল কৃষ্ণ মন্ডলের নাম।

২০০৬ সালে দেশ ত্যাগ করে ভারতে পারি জমান অমল। সেখানে বসেই রাজবাড়ী সহ দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ করে। রাজবাড়ীর পাংশাতেই তার রয়েছে অর্ধশত সহযোগী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অমলের ভাই শ্যামল (৩০), শামিম জর্দার (২৮), হাফিজুল (২৮), বকুল মেম্বার (৪১), ইমন (২২), হাবিব (২৩)। অমলের প্রধান দুই সহযোগী বিপুল ও বিকাশের অবস্থান ভারতে। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ ভারতে গ্রেফতার হন অমল ও তার দুই সহযোগী। এরপর জামিনে মুক্তি পান।

 


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা