বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোজার আগে কৌশলে বাড়ানো হচ্ছে দাম

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২১-০৩-২০ ০১:৪৪:৩২  

রমজানকে টার্গেট করে পুরোনো সেই সিন্ডিকেট আবার পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজ সরবরাহ সংকটের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কৌশলে বাড়িয়ে চলেছে তারা। এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পণ্যটি সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা বছর ভোক্তাদের কাছে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে। কিন্তু রমজানে এ নিত্যপণ্যটির চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ বাড়তি চাহিদাকে টার্গেট করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তারা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেয় দাম। ফলে প্রতি বছর এ সময়টিতে ভোক্তারা বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হন।

 

অসাধু ব্যবসায়ীরা ধর্মীয় উৎসবের আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ালেও উৎপাদন মৌসুমে কারসাজি করছে। তাদের কারসাজির কারণে ২০১৯ সালে পণ্যটির দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ওই সময় সরকারের পক্ষ্য থেকে সিন্ডিকেট সদস্যদের চিহ্নিত করা হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। যে কারণে পুরোনো সেই সিন্ডিকেট সময় বুঝে বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পকেট কাটছে ভোক্তার। হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা।

 

শুক্রবার রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা এক সপ্তাহ আগে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা।

দাম বাড়ার এ চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে। টিসিবি বলছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ মাসের ব্যবধানে ১০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ মাসের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা বাড়তি দরে।

 

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আশা আরিফুর রহমান বাংলাদেশ পেপারকে বলেন, দেখা যাচ্ছে শবেবরাতের আগেই বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাই মনে হচ্ছে এবার রমজানে বাড়তি মূল্যে এ পণ্যটি কিনতে হবে। তিনি আরাও বলেন, বাজারে রমজাননির্ভর পণ্যসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য সরকারকে আগেভাগে ব্যবস্থা নিতে হবে।

একই বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. জসিম বাংলাদেশ পেপারকে বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ আছে। তারপরও হঠাৎ করে পাইকাররা দাম বাড়িয়েছেন। দাম বাড়ার কারণ পর্যন্ত বলছেন না। জানতে চাইলে বলছেন- নিলে নেন, না নিলে যান। এখন যে দামে পাচ্ছেন পরে সেই দামে পাবেন না। দাম আরও বাড়বে। মনে হচ্ছে এবারও তারা রোজার আগে কৌশলে পণ্যটির দাম বাড়াচ্ছে। সে কারণে বাড়তি দরে পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনতে হয়েছে। আর বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দরে।

রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৮০ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক শংকর চন্দ্র ঘোষ  বলেন, পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন জেলার মোকাম থেকে সে পরিমাণ পেঁয়াজ বাজারে আসেনি। এছাড়া মাঝে মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। তাই দাম একটু বাড়তির দিকে ছিল। তবে সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। সরবরাহ আরও বাড়তে শুরু করলে দাম আরও কমবে।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান  বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সময় অজুহাত দেখায়। তাই এই পরিস্থিতিতে ভোক্তা স্বার্থরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। আর যে বা যারা অতি মুনাফার লোভে পণ্যের দাম বাড়াবে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এভাবেই চলতে থাকবে।

জাতীয় ভোক্তা কার সংরক্ষণ দপ্তরের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার  বলেন, রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দপ্তর বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়োমিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। রমজান উপলক্ষে বিশেষ ভাবে তদারকি কার্যক্রম চলছে। সেখানে সিন্ডিকেট ভাংতে কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে বলা হয়েছে অসৎ উপায়ে পণ্যের দাম বাড়ালে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি অসৎ উপায়ে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমান পাওয়া যায়, তবে ভোক্তার স্বার্থে আমরা ভোক্তা আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করব।

 


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা