প্রবাদ আছে ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়’। মানুষ তার প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এমনই একজন স্বপ্নবাজ কিশোরী অ্যালিসা কারসন।
মানুষ জয় করেছে অজানা বিশ্বকে, পাড়ি জমিয়েছে পৃথিবী নামক ভূগ্রহের বাইরেও। মানুষ তার স্বপ্নের পালে হাওয়া দিয়ে অসাধ্যকে সাধন করতে অবিরাম ছুটে চলছে। আর অ্যালিসা কারসন নামে এ কিশোর বয়সী মেয়েটিই প্রথম মানব হিসেবে ২০৩৩ সালে মঙ্গলে পা রাখতে যাচ্ছে।
২০০১ সালের ১০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার হ্যামন্ডে জন্ম নেয় অ্যালিসা। যখন তার বয়স মাত্র তিন বছর তখন সে অ্যানিমেটেড কার্টুন দেখতে ভালোবাসতো। একটি কার্টুন সিরিজ শিশুর মনে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে তার প্রমাণ ছোট এ অ্যালিসা। ‘দ্য ব্যাকইয়ার্ডিগান্স’ নামে ওই কার্টুন সিরিজের ‘মিশন টু মার্স’ পর্বে সে দেখতে পায় পাঁচ বন্ধু মিলে কল্পনার মাধ্যমে লোহার লালচে ঢাকা শীতল গ্রহ মঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছে।
তারপর থেকে ছোট অ্যালিসার মনে লালগ্রহ জয়ের ইচ্ছে জাগে। সে বাবাকে তার স্বপ্নের কথা জানায়। বাবা বের্ট কারসন মেয়ের স্বপ্নে সায় দেন এবং অনুপ্রেরণা যোগান। অ্যালিসার যখন মাত্র ৭ বছর বয়স তখন বাবা তাকে নিয়ে অ্যালাবামার হান্টসভিলেতে একটি স্পেস ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই অ্যালিসার লালগ্রহ জয়ের স্বপ্ন আরও প্রখর হতে থাকে এবং জানার আগ্রহ আরও বাড়তে থাকে।
সদ্য আঠারো পেরিয়ে উনিশে পা রাখা কিশোরী অ্যালিসা কারসন মাত্র বারো বছর বয়সে নাসার সবগুলো ভিজিটির ক্যাম্পে প্রবেশের পাসপোর্ট পেয়ে সর্বকনিষ্ঠ ও সর্বপ্রথম হিসেবে সবগুলো ভিজিটর সেন্টার পরিদর্শনের সুযোগ পায়। পরবর্তীতে একে একে কানাডার কুইবেক ও তুরস্কের ইজমের ক্যাম্পে সে সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় আঠারবার স্পেস ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে অ্যালিসা।
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে সে ডাক পায় ওয়াশিংটন ডি.সির নাসা টিভির এমইআর ১০ প্যানেলে আগমনী মিশন মার্সের জন্য, পরবর্তীতে মঙ্গলে প্রথম মানব হিসেবে পা রাখার মিশনে নির্বাচিত সাতজন ব্যক্তির একজন হিসেবে ডেনমার্ক কোম্পানির অগ্রদূত নির্বাচিত হয় সে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো তার সঙ্গে থাকা বাকি সদস্যদের অনেকে নভোচারী বা ভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রিধারী, কিন্তু সেই একমাত্র সবচেয়ে কনিষ্ঠ। সে সফল হয়েছিল তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলে।
২০১৫ সালে অফিসিয়ালি নাসার কাছ থেকে ক্ষুদে নভোচারী হওয়ার আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করে সে। কিন্তু নাসার নিয়ম অনুযায়ী নভোচারী হতে ১৮ বছর হতে হয়। গত বছর মার্চে আঠারোতে পা দিয়ে সে অফিসিয়ালি নাসার নভোচারী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
ছোট এ কিশোরী নভোচারী বর্তমানে পড়াশোনা করছে লুইজিয়ানার ব্যাটন বোডগ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। মহাকাশবিদ্যার পাশাপাশি সে ফ্রেঞ্চ, চাইনিজ, তুর্কি, স্প্যানিশসহ ভিন্ন ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন করছে।
বর্তমানে স্পেস এক্স এবং মার্স ওয়ান বেশ কোমর বেঁধে মানুষকে মঙ্গলে পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। তাদের সামনের দুটি মহাকাশ মিশনেও অ্যালিসাকে প্রথম ক্ষুদে নভোচারী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা মঙ্গল মিশনের পূর্বপ্রস্তুতি বলা চলে।
২০৩৩ সালে ৩২ বছর পূর্ণ হলে অ্যালিসা পাড়ি জমাবে লালচে মরিচায় ঢাকা সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশে। যেখান থেকে সে ফিরে আসবে কিনা তা অনিশ্চিত, কিন্তু তা নিয়ে অ্যালিসার কোন আগ্রহ নেই। তার স্বপ্নযাত্রার আনন্দের কাছে তা কিছু নয়। সে নিজেকে মঙ্গলের বাসিন্দা মনে করতে শুরু করেছে, আর সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলছে।
অ্যালিসা কোন প্রকার যৌনতা, বিয়ে, সন্তানধারণ, সংসার বা প্রেমে না জড়ানোর অঙ্গিকারবদ্ধ হয়ে নাসার চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছে। যেন কোন মোহ তাকে তার স্বপ্ন হতে পিছু হটাতে না পারে।
তবে তার ইচ্ছে সে যদি কখনো পৃথিবীতে ফিরে আসে তবে সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চায়। আর যদি ফিরে না আসতে না পারে তবে যেন তার ত্যাগের জন্য মানুষ তাকে স্মরণ করে একজন গ্যালাক্সিযোদ্ধা হিসেবে।
প্রচণ্ড স্বপ্নবাজ, আত্মবিশ্বাসী ও ক্ষুদে এ নভোচারী কিশোরী অন্যদের এই বলে অনুপ্রাণিত করে যে- ‘সব সময় তোমার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে রাখো, কেউ যেন তা ছিনিয়ে নিতে না পারে।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুনতাকিম হোছাইন
বার্তা সম্পাদক: ইকবাল হোছাইন
মেইলঃ bangladeshpaper71@gmail.com
অফিসঃ ০১৮৮-৬৬১০৬৬৬ বার্তা প্রধান ০১৮৫৭৬৭১৯৪৩
কপিরাইট আইন,২০০০ © অনুসারে বাংলাদেশ পেপার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত