মৃত্যুর আগেই কুলখানি

প্রকাশিত: ১২:১১ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১

কেউ মারা গেলে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের সদস্যরা মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। যা ‘কুলখানি’ নামে পরিচিত। সাধারণত মারা যাওয়ার ৪০তম দিনে এই বিশেষ আয়োজন করা হয়। তবে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালেন নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজলার ধামগড় ইউনিয়নের কামতাল এলাকার ৮৮ বছরের বৃদ্ধ হাজি মোসলেম প্রধান। তিনি মৃত্যুর আগেই ১০ গ্রামের লোকজনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অতিথিদের নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করলেন।

মোসলেম মিয়া তার কুলখানি অনুষ্ঠানে ১০টি মসজিদের ইমামদের তার বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেন। গত শুক্রবার এমন একটি আয়োজনে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তিনি চট্টগ্রাম মাইজভান্ডারির একজন মুরিদ (অনুসারী)।

হাজি মো. মোসলেম প্রধানের বয়স প্রায় ৮৮ বছর হলেও এখনো তিনি সুস্থ-সবল। পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন। দোকানে বসে সঙ্গীদের সঙ্গে চা-পানের আড্ডা দেন নিয়মিত। এছাড়া ভাড়া দেয়ার বাড়ির তদারকির কাজটিও তিনি করেন।

চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ের বাবা মোসলেম। চার ছেলের সংসারে নাতি-নাতনিসহ বড় একটি পরিবার। পূত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করছেন।

সম্পত্তি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অনেক আগেই ভাগবাটোয়ারা করে লিখে দিয়েছেন। ছেলেরাও সচ্ছল, ব্যবসা-বাণিজ্য করে ভালোই আছেন। বড় ছেলে নবীর হোসেন ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ও প্যানেল চেয়ারম্যান।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজের কুলখানি অনুষ্ঠানের সব ব্যয়ভার নিজেই বহন করেছেন মোসলেম মিয়া। তবে এমন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা তার আগেই ছিল।

মৃত্যুর আগেই নিজের কুলখানি অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে মোসলেম প্রধান বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল, আল্লাহ যদি আমাকে অর্থশালী করে, তাহলে আমি মৃত্যুর আগেই প্রতিবেশী, নিজ গ্রাম এবং আশপাশের গ্রামবাসীসহ আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে বাড়িতে সাজসজ্জা (ডেকোরেটর ভাড়া করে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের মতো) প্যান্ডেল তৈরি করে বাড়িতে বসিয়ে নিজ হাতে সবাইকে খাওয়াব। আল্লাহ যেন আমার মনের ইচ্ছে পূর্ণ করে। যতদিন বেঁচে থাকব শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আল্লাহর দেখানো পথে চলব। যে কারণে মৃত্যুর আগে ১০ গ্রামের লোকদের দাওয়াত করে নিজের খুলখানির আয়োজন করেছি।’

গ্রামবাসীরা জানান, পরিবারের কেউ মৃত্যুবরণ করলে চারদিন পর বাড়িতে দোয়া ও মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কিন্তু মোসলেম প্রধান মৃত্যুর আগেই নিজ গ্রামের পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশপাশের কামতাল, মালিভিটা, দশদোনা, হালুয়াপাড়া, আড্ডা শ্যামপুর, মহজমপুর, যোগীপাড়া, চিড়ইপাড়াসহ ১০ গ্রামের নারী-পুরুষ এবং পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁ উপজেলার আত্মীয়-স্বজনসহ কয়েক হাজার মানুষকে আমন্ত্রণ দিয়ে নিজের কুলখানি অনুষ্ঠান করেন।

কুলখানির ১৫ দিন আগ থেকেই প্রত্যেক ঘরে দাওয়াত পৌঁছে দেন মোসলেম প্রধানের চার ছেলে। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে গরু জবাইসহ রান্নাবান্নার কাজ শুরু করা হয়। সকাল পর্যন্ত রান্নার কাজ শেষ করে শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে মিলাদ-মাহফিল ও মোনাজাত করা হয়। মিলাদ শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত