বাংলাদেশ, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কৃষি বাণিজ্যের উন্নয়নে বেড়েছে আধুনিক যন্রের ব্যবহার

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২১-০২-০৯ ১৪:০০:০৯  

নদীবিধৌত কৃষিপ্রধান জেলা রাজবাড়ী। এখানে বসবাস কারীদের মধ্যে ৭৩% কৃষি কাজের মধ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলার আয়তন ১,১২,৭৭৬ হেক্টর, যার প্রায় ৭৭,৭৪৭ হেক্টর জমি চাষাবাদে ব্যবহূত হয়। এ জেলার প্রায় ৬৮ শতাংশ আয় আসে কৃষি খাত থেকে। জেলাটিতে ধান, পাট, আখ, গম, বাদাম, তিল, যব, ভুট্টা, ইক্ষু, পিঁয়াজ, তামাক এবং ডাল জাতীয় কৃষিজাত পণ্য উৎপাদিত হয় তাছাড়া কলা এবং মাছ চাষ করা হয়।
আধুনিক কৃষি যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে এই অঞ্চলের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭ শতাংশ বিভিন্ন প্রকার ফসল ক্ষতির সম্মুখীন থেকে রক্ষা পাচ্ছে কেবল দক্ষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার ফলে। ফসল মাড়াই ও কর্তনের কাজকে সহজ করতে ১৯ শতকের শেষে এ অঞ্চলে আসে মাড়াই ও কর্তনযন্ত্রের সমন্বয়ে কম্বাইন হারভেস্টার, যা ব্যাপক হারে বাঁচিয়ে দেয় সময়, কমিয়ে দেয় পশু ও মনুষ্য শক্তির ব্যবহার।
একমাত্র কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ নিশ্চিত করতে পারে কম সময়ে, কম খরচে, কম লোকবলের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক শস্যের যথার্থ জোগান।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জমি চাষের পর বীজ বপন, গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ, শস্য কর্তন, শস্য মাড়াই, শস্য ঝাড়াইসহ অন্যান্য কার্যাবলিতে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের গুরুত্ব বেড়েছে।
তাই যান্ত্রিকীকরণের বহুবিধ সুবিধাদির ফলে এ অঞ্চলের কৃষক দিন দিন কৃষিযন্ত্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের ফসল উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে একটা ফসল থেকে আরেকটা ফসল লাগানোর মধ্যবর্তী সময় কমে যাওয়ায় কৃষকরা বছরে বর্তমানে দুটি ফসলের স্থলে তিনটি ফসল পর্যন্ত অনায়াসে চাষ করতে পারছে।
বর্তমানে এ অঞ্চলে জমি তৈরির ৯৯ শতাংশ কাজ পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে করা হচ্ছে। এছাড়াও সার প্রয়োগ ও আগাছা দমনের কাজে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
ফসলি জমিতে আগাছা নিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষক মালেক জানান, আগাছা ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, যা ফসলে প্রয়োগকৃত সারের অনেকাংশই শুষে নেয়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই সার প্রয়োগের পূর্বে আগাছা দমনও জরুরি, কিন্তু আলাদাভাবে আগাছা দমন এবং সার প্রয়োগে সময় ও শ্রম দুটোই অপচয় হয়। সাধারণ ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে ১৫-২০ শতাংশ বেশি ফসল পাওয়া যায়। গুটি ইউরিয়া পরিমাণে শতকরা ৩০ শতাংশ কম লাগে। মৌসুমে একবার গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলেই হয়। তাই এর জন্য এমন যন্ত্র প্রয়োজন যা একই সাথে দুটো কাজই সহজে, স্বল্প সময়ে ও অল্প খরচে করতে সক্ষম।
পাট চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেলার পাংশা উপজেলার কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে রিবন পদ্ধতি বা ছাল পচানো পদ্ধতি আমাদের মতো কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। রিবন পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর অল্প পানিতে পাট পচানো যায়, যা পাটের গুণগত মান বৃদ্ধি করে ও বাজার মূল্যও তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়।
এব্যাপারে রাজবাড়ী জেলা কৃষি কর্মকর্তা গোপাল কৃঞ্চ দাস জানান, বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রধান অন্তরায় প্রান্তিক কৃষকের কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের অনুপযোগী ছোট কৃষিজমি, যেখানে মানসম্মত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যায় না। এ অঞ্চলের অনেক কৃষক ভূমিহীন আবার অনেকে অর্থনৈতিকভাবেও অসচ্ছল। তাদের উচ্চমূল্যে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সামর্থ্য নেই। এছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। তবে এরই ধারাবাহিকতায় কৃষির আধুনিকায়নে সরকার নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি সরকার ৩০২০ কোটি (৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) টাকার একটি মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে প্রায় ৫৬ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা গত ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এই অঞ্চলের অনেককে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং বাকি কৃষকরাও পর্যায়ক্রমে এই সহায়তা পাবে।
এব্যাপারে কালুখালি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানান, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে একসূত্রে বেঁধে সনাতন পদ্ধতি থেকে বের হয়ে প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এতে একদিকে কৃষি শ্রমিক সংকট যেমন কমানো যাবে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। এতে কৃষিকাজে যুক্ত হবে শিক্ষিত তরুণেরা এবং বৃদ্ধি পাবে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমরা এই আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করছি এবং সেই সাথে এব্যাপারে সরকার প্রদত্ত সকল সুবিধা তাদেরকে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা