বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজাকারের সন্তানরাই আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক !

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-০৮-২০ ১৯:১৬:৩৭  

কক্সবাজার ২০ আগস্ট ১৯ ইং

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধ চলাকালিন সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলো কক্সবাজার টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার রাজাকার মৃত এশাদুল হক প্রকাশ এশা মেম্বার। সে সময় তার অত্যচারে তটস্ত ছিলো আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তবে দেশ স্বাধীনের সাথে সাথে তার সন্তানরা সুকৌশলে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে।

বিশেষ করে ৯৬’ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ পরিবারটি উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন যুবলীগ, ছাত্রলীগের মূল পদ ভাগিয়ে নেয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগে তাদের এতই প্রভাব যে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করে না। এক কথায় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক রাজাকার এশা মেম্বারের পরিবারটি। এমন অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এ পরিবারটি সব সময় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাই বলে অত্যান্ত কৌশলে তারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। অথচ ভোট আসলেই নৌকার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। সর্বশেষ গত উপজেলা নির্বাচনে এ পরিবারটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো বলে জানিয়েছেন, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মো: আলী।

তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতার রাজনীতি করি বলে অনেক সময় সুযোগ সন্ধানি এসব পরিবারের লোকজন দলে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পায়। শামলাপুরে রাজাকার এশা মেম্বারের পরিবারের সদস্যরাও সুকৌশলে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। আগামিতে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী এসব লোকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। দলকে রাজাকার পরিবার ম্ক্তু করা হবে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৭১ মালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এরশাদুল হক প্রকাশ এশা মেম্বারের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। তার দলের সদস্য ছিলেন, স্থানীয় মৃত ছৈয়দুল হক মিয়াজির ছেলে আজিজুল হক, মৃত অলি আহম্মদ, ফজল করিম প্রকাশ বান্ডু, মোক্তাফিজুর রহমানের ছেলে মৃত মওলানা সিরাজুল হক, মওলানা সোলতান, মওলানা ফজলুল হক। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় শামলাপুর প্রাইমারি স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করেন পাকিস্তানের সেনারা। এ ক্যাম্পে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজন ধরে এনে নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি নারী ধর্ষণ করা হতো। শামলাপুরে বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান প্রকাশ শফিত খলিফার দোকান ও ঘর, ইবনে আমিনের দোকান, মওলানা নাছির উদ্দিনের দোকানসহ, শিলখালীতে আওয়ামী লীগ কর্মী মৃত হাসান আলী মেম্বারের বাড়ি, হিাফেজ আহম্মদ চৌধুরী প্রকাশ হাফেজ মিয়া, রশিদ আহম্মদ চৌধুরী প্রকাশ রশিদ মিয়া, জাহাজপুরা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম প্রকাশ খুশিত মেম্বারের বাড়িসহ প্রায় অর্ধশত বাড়িতে আগুন দিয়েছিলো এরশাদুল হক ও মওলানা সোলতান গ্যং। অথচ সে পরিবারটি এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক ! আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের মতো সংগঠনের মূল পদগুলো সুকৌশলে ভাগিয়ে নিয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তথ্য মতে, এশা মেম্বারের ছেলে মো: ইসলাম প্রকাশ ইসলাম মেম্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তার ভাই জাফরুল ইসলাম প্রকাশ কালু ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং অপরভাই মো: আয়াছ উপজেলা যুবলীগের সদস্য। ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন এশা মেম্বারের নাতি ও মো: ইসলামের ছেলে আমজাদ হোসেন খোকন, তার ভাই শাহ জালাল মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, সহ-সম্পাদক হিসেবে আছেন মেয়ের নাতি ফকির মোহাম্মদের ছেলে কামাল হোসেন, ছৈয়দুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মোনাফ, সদস্য হিসেবে আছেন শামসুল ইসলামের ছেলে সাকের উল্লাহ, ছৈয়দুল ইসলামের ছেলে মো: ইসমাইল। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে আছেন মো: ইসলামের পুত্র মো: জিয়া উদ্দিন। তার ছোটভাই জিল্লুর রহমান আছেন আইন বিষয়ক সম্পাদকে। উপ-ত্রান ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম। আজিজুল ইসলামের ছেলে ইউনিয়ন সোহেল আনসারী সহ-সভাপতি ও সদস্য হিসেবে আছেন তার ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন।

সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মওলানা নাছির উদ্দিন (৭০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৭১’সালে যারা সাধারন মানুষকে নির্যাতন করেছিলো। আওয়ামী লীগকে নিধন করতে চেয়েছিলো সে রাজাকারের পরিবার কিভাবে এত ক্ষমতা পায়। আওয়ামী লীগের মতো দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের পদ কিভাবে পায়। দেশে কি আওয়ামী লীগ করার মতো আর কোন মানুষ নেই।

৭১’ সালে মনখালী গ্রামের কিশোর বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধকালিন সময় শামলাপুর থেকে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মনখালী গ্রামের ছৈয়দ হোসাইনের পরিবারের গৃহপালিত গরু খেয়ে উল্লাস করেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরে নির্যাতন চালিয়েছিলো। রাজাকার বান্ডু ছৈয়দ হোসাইনকে গুলি করেছিলো। এখনো সে দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে।

শিলখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম বলেন, এশা মেম্বার রাজাকারের ক্যাম্প করে এমন কোন অপরাধ নেই করেননি। এখন তাদের ছেলে ও নাতীরা আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা। দলের সব পোস্ট তাদের দখলে। ভাবতে কষ্ট হয়। আমি মনে করি দলকে রাজাকার পরিবারের প্রভাব মুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।

জানতে চাইলে মৃত রাজাকার এশাদুল হকের ছেলে মো: ইসলাম প্রকাশ ইসলাম মেম্বার তার পিতার বিরুদ্ধে অনিত অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে আমার পরিবারটি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধের সময় জঘন্য কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো না। মূলত ভোটের রাজনীতির কারণে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

সূত্রঃ আলোকিত কক্সবাজার

পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা