বাংলাদেশ, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২১-০১-১৬ ১৯:৫৬:৫৩  

ওয়াহিদ রুবেলঃ

হামিদ হোসেন একজন রোহিঙ্গা নাগরিক। ১৯৯১ সালে পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের বদন্নতায় তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ানম্যান স্বাক্ষরিত ১৯৯৫০৩১৭৩৫৭১০৬০৪৯ নাম্বার জন্ম নিবন্ধনে ১৫৬ নং জাতীয়তা সনদ দিয়ে ২০১৫ সালে ভোটার (ভোটার নং ৭৩৫৩০৪২১৪১) তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন তিনি । সর্বশেষ ২০১৮ সালে তাকে পাসপোর্ট পাইয়ে দিতে ২৯১১ নং ক্রমিকে দ্বিতীয়বার জাতীয়তা সনদ প্রদান করেছেন চেয়ারম্যান। বর্তমানে বাংলাদেশী BH 0754456 নাম্বার পাসপোর্ট নিয়ে সৈদি আরব অবস্থান করছেন এ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী হলেও সেখানে নিজেকে রোহিঙ্গা পরিচয় দেন হামিদ। অভিযোগ রয়েছে লাখ টাকার বিনিময়ে হামিদকে নাগরিকত্ব পাইয়ে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। জনপ্রতিনিধি হয়ে দেশ বিরোধী এমন কর্মকান্ডের দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কয়েক শত রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে প্রত্যায়ন দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। অবৈধ আয় এবং নিজের ভোট ব্যাংক বাড়াতে এসব রোহিঙ্গাদের ভোটার করেছেন তিনি। অথচ ভোটার হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের পিতা/মাতার পরিচয়ও সঠিক নয়।

হামিদ হোসেন ছাড়াও এ তালিকায় যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে জাহেদ হোসেন, নুর আলম, আইয়ুবুল হক, মোঃ করিম, আজিজুল হক, মোঃ রশিদ, আলী হোছন, ইউসুফ নবী, জিয়াবুল হক, হামিদ হোসেন, মোঃ সেলিম, ছৈয়দ আলম, জন্নাত আরা বরগম, আনজুমা বেগম, আমিনা খাতুন, ছমিরা খাতুন, ছেনুয়ারা বেগম, জোসনা আক্তার কাজল, নুর বাহার, মো ইব্রাহীম, সুফিয়া আক্তার ও উমর ফারুখ (তারা দুইজনই ভকইবোন) নুর ফাতেমা ও মোঃ রফিক (তারাও ভাইবেন এবং হাবিবুর রহমান (প্রতিবেদকের কাছে তথ্য সংগৃহীত রয়েছে)। এদের সবার ভূঁয়া পরিচয় জানার পরও নিজ স্বার্থে চেয়ারম্যান ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় হৈ ছৈ হলেও কার্যত তার বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে অনেকটা স্বেচ্ছাচারি হয়ে উঠেন তিনি।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, চেয়ারম্যান আজিজ জন্ম নিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ, প্রত্যায়নপত্র এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে প্রতিজনের কাছ থেকে এক থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করতেন। আবার পাসপোর্টের কাগজে সত্যায়িত করতে পৃথক টাকা আদায় করতেন চেয়ারম্যান। সরকারি দল সমর্থীত চেয়ারম্যান হওয়ায় কেউ সহজে প্রতিবাদ করেন না।

এদিকে, টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সনদ ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণসহ নানা অভিযোগ এনে গেল বছরের ১ নভেম্বর চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উত্তর ঘুমধুম এলাকার রশিদ আহমদের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম নামে এক যুবক।

অভিযোগে তিনি দাবি করেন, ২০১৪ সালের জুন থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ, জন্ম নিবন্ধন, প্রত্যায়নপত্র প্রদানপূর্বক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করণসহ বাংলাদেশী পাসপোর্ট করিয়ে রাষ্ট্র ও দেশের সার্বভৌম বিরোধী কাজ করে শপথ ভঙ্গ করেছেন। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এ অপকর্ম করেছেন দাবি করে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অভিযোগকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চেয়ারম্যান আজিজ রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করতেন নিজেই। সরকারি দল সমর্থীত চেয়াররম্যান হওয়ায় ধরাকে সারা জ্ঞান করে দেশ বিরোধী ঘৃণ্য কাজটি করেছেন চেয়ারম্যান। তাই বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জন্য আবেদন জানিয়েছি।

অভিযোগ সম্পর্কে ধুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আমার আগে যিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁর দেয়া জন্ম নিবন্ধনের উপর অনেককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনেকে স্থানীয় লোকজনের আত্মীয় পরিচয়ে ভোটার হয়েছেন। রোহিঙ্গা পরিচয় পাওয়ার পর অনেকের ভোটার আইডি কার্ড জব্দ করে রাখা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে সব কাগজপত্র সংগ্রহে রয়েছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) এসে দেখতে পারেন। মূলত সবকিছু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কমিশনার আবু জাফর ছালেহ বলেন, আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসে নি। যদি অভিযোগ পায় তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্রঃ আলোকিত কক্সবাজার


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা