বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আগস্টের শোক হোক বাঙালির শক্তি

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-০৮-১৫ ০৪:৪৪:৪২  

আগস্ট মাস বাঙালির পিতা হারিয়ে এতিম হওয়ার মাস। আলোর পথে অবিরাম ছুটে চলা একটি দেশ ও জাতিকে অন্ধকারে টেনে নিয়ে যাওয়ার মাস। সদ্য স্বাধীন একটি দেশ যখন ভাঙাচোরা অর্থনীতিকে মেরামত করে নিজ পাঁয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে তখনই মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও তাদের ভীনদেশী প্রভুরা নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। কখনো সৃষ্টি করা হয় মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ বা কখনো বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ। এসব কিছুই অত্যন্ত দৃঢ়তা এবং দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রার কারিগর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের এ উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রা যারা চায় নি, তারা যখন সকল ষড়যন্ত্রে প্রায় ব্যর্থ তখন তারা বেছে নেয় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম এবং নিষ্ঠুরতম পথ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় ১৩ বছর পাকিস্তানি জালেম সরকারের জেলে কাটিয়েছিলেন, বারবার ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত গিয়েছিলেন হাসি মুখে শুধুমাত্র বাঙালিকে ভালোবেসেছিলেন বলে। এ ভালোবাসা এবং বিশ্বাসই কাল হয়েছিল তাঁর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল ঘাতক বঙ্গবন্ধু সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে রক্তের হলিখেলায় মেতে ওঠে। নারী, শিশু, নববিবাহিত দম্পতি থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারী কেউই রেহায় পায়নি খুনীদের নির্মমতা থেকে। নির্মম, নিষ্ঠুর শব্দগুলোও ম্লান হয়ে যায় সেদিনের ঘটনা পরিক্রমার আলোচনায়। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে কেবল একদল দেশীয় দলছুট জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা জড়িত এমন আলোচনা হয়তো ইতিহাসের নির্মোহ পাঠে কিছুটা ঘাটতি থেকেই যায়। মোশতাক, তাহের উদ্দীন ঠাকুরদের সমর্থনে ডালিম-নুর-রাশেদ-ফারুক-হুদার সরাসরি হত্যাকান্ডে জড়িত হলেও, পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নেড়েছিল দেশী এবং বিদেশি চক্রান্তকারীরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মূল বেনিফিশিয়ারি হলো মেজর জিয়া এবং স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর জিয়াকে জানালে জিয়া শেভ করতে করতে বলে, ‘হু কেয়ারস! লেট দ্যা ভাইস প্রেসিডেন্ট টেইক ওভার।’ ইতিহাসবিদদের মতে জিয়া এ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আগে থেকেই অবগত ছিল। জিয়ার মতো দেশীয় ষড়যন্ত্রকারী ছাড়াও অনেক বিদেশি মোড়ল রাষ্ট্রও জড়িত ছিল। কারণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর প্রভাব অন্যান্য অনেক নেতার চেয়ে বেশী ছিল। সেইসময়ে বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙালিরই মহানায়ক নন, ততদিনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সারা বিশ্বের শোষিত নির্যাতিত মানুষের নেতা হিসেবে। সামরিক- বেসামরিক আমলাতন্ত্রের বিপরীতে সাধারণ জনগণের অবিসংবাদিত গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ফলে, বিদেশী কিছু এজেন্সি এবং শোষক রাষ্ট্রসমূহের চক্ষুশূলে পরিণত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ড হতে অল্পের জন্যে প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। ১৫ আগস্টে ব্যর্থ হলেও হত্যাকারীর বুলেট আজো তাদের পিছু ছাড়েনি। নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে তারা হত্যা চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সেই হত্যাচেষ্টার অংশ হিসেবে ঘটানো হয় ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা। প্রকাশ্য দিবালোকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্রেনেড এবং গুলি চালানো হয় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে। সেদিন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা গুলি গ্রেনেড বুকে নিয়ে মানবঢাল তৈরী করে বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া শ্রেষ্ঠ আমানত দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে রক্ষা করে। ২১ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারীরা ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারীদেরই উত্তরসূরি। তাইতো, ২১ শে আগস্ট নতুন কোন দিন নয়, ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতা মাত্র। ১৫ এবং ২১ আগস্টের উদ্দেশ্য একই। বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা থামানো এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে পাকিস্তানী ভাবধারার ব্যর্থ, অকার্যকর এবং সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এবারের শোক দিবস এমন এক সময়ে পালিত হচ্ছে যখন সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই, এবারের শোক দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়নের দর্শনে উজ্জীবিত হয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করে পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাব আমরা। ‘দিকে দিকে পাপমুক্তির আনন্দে/ মানুষ বেড়িয়ে পড়বে/ রাজপথ লিখবে আবার/ অভিশাপ মুক্তির কলঙ্ক মোচনের ইতিহাস। (খুনিদের প্রতি ঘৃণা- রবীন্দ্র গোপ)। সেই পাপমুক্তির পথে কিছুটা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব যদি বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা যায়। তারপরেও বাঙালি জাতি ও বিশ্বমানবতা খুনীদের ধিক্কার জানাবে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন। পিতা হত্যার পাপমুক্তি নাই, এ বিষাদের শেষ নাই।

লেখক-

সভাপতি,

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা