শীতে খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত রাজবাড়ীর গাছিরা

প্রকাশিত: ৪:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২০
শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস আহরণে রাজবাড়ীর প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন।
যারা খেজুরের রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে গাছ কাটায় পারদর্শী স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে গাছি বলা হয়। এ গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছেন।
কয়েক দিন পরই গাছিদের মাঝে খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যাবে। শীত মৌসুম এলেই সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হয়। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ অঞ্চলের গাছিরা। তাদের মুখে ফুটে ওঠে রসালো হাসি। শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও নলেন গুড়ের ম-ম গন্ধ। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে বোঝানো যায় না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েসতো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রসের তৈরি খাদ্যের আয়োজন চলে। শীতের সকালে বাড়ির উঠানে বসে সূর্যের তাপ নিতে নিতে খেজুরের মিষ্টি রস যে পান করেছে, তার স্বাদ কোনো দিন সে ভুলতে পারবে না। শুধু খেজুরের রসই নয় এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি, গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার। খেজুর গুড় বাঙালির সংস্কৃতিক একটা অঙ্গ। নলেন গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।
স্থানীয়রা বলছেন, আর মাত্র কয়েক দিন পরই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে। রস থেকে গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। হেমন্তের প্রথমে বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও গুড়। অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছের কদর এখন অনেক বেশি।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের খেজুর রস সংগ্রহকারী জিল্লু বলে, খেজুর রস ও গুড় আজ বিলুপ্তির পথে। কারণ ১ কেজি গুড় তৈরি করতে শ্রম ও জ্বালানিসহ আমাদের খরচ হয় ৬০-৬৫ টাকা। আর প্রতিকেজি গুড় বর্তমান বাজারে বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এ কারণে আমরা এই গুড় বানাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছি।
কালুখালি উপজেলার মহিসভাঙা গ্রামের মনির বলেন, আগের মতো খেজুর গাছ আর নেই। প্রতিদিন ইটভাটায় জ্বালানির কাজে নিধন হচ্ছে এলাকার শত শত খেজুর গাছ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরেও আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কেবল গুড়, সুস্বাদু খাবার ও শুধু রসনা তৃপ্তির সুমিষ্ট রসের জন্যই নয়, আমাদের জীবনের প্রয়োজনে, পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় আমাদেরকে খেজুর গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃঞ্চ দাস জানান, রাজবাড়ী জেলায় মোট ৮০ হাজার ৮৩৯ টি খেজুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৪৫০টি গাছ, দাকালুখালি উপজেলায় ১৭ হাজার ২০০টি গাছ, পাংশা উপজেলায় ২১ হাজার ১২৭টি গাছ, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৯ হাজার ৫১১ ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৮ হাজার ৭১২টি খেজুর গাছ রয়েছে। যা থেকে এ বছর ০.৯০ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন গুড় উৎপাদন করা হবে।