সম্প্রীতির বন্ধনে সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন

প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২০

সিয়াম সোহেলঃ

স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব মূখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে সম্প্রীতির বন্ধনে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। এসময় শ্রদ্ধা ভালোবাসায় মাতৃবিদায়ের বিষাদপূর্ণ অশ্রæ অঞ্জলির মাধ্যমে সাগরের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সৈকতের বালিয়াড়িতে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে তৈরি হয় সম্প্রীতির সেতুবন্ধন। আর এ বন্ধনে সকলেই এক সুরে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার।

করোনা ভাইরাসের কারণে দুর্গা পূজা উদযাপনে নানা বিধিনিষেধ ছিল। এবার প্রতিমা বিসর্জনে বাদ দেয়া হয়েছে শোভাযাত্রা। রাখা হয়নি কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। তবুও প্রতিমা বিসর্জন অবলোকনে সৈকতের বালিয়াড়িতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি দুপুর থেকে আসতে থাকে নানা ধর্মের মানুষ। তাদের সাথে যোগ দেয় পর্যটকেরাও। বেলা ৩টা থেকে জেলার রামু, উখিয়া, সদর উপজেলা, কক্সবাজার পৌর এলাকা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে প্রতিমা বহনকৃত সারি সারি গাড়ি আসতে শুরু করে। গাড়ি থেকে নামানোর পর আরতি ও আরাধনা শেষেই বিসর্জন দেয়া হয় স্ব স্ব মন্ডপের প্রতিমা। এসময় ঢোলের তালে তালে ‘মা দুর্গা কি জয়’ শ্লোগানে মুখরিত ছিল সমুদ্র পাড়। প্রতিমা বিসর্জনের পাশাপাশি ভক্তদের নাচে-গানে সৃষ্টি হয় আনন্দঘন পরিবেশ ।

বিসর্জন ঘিরে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। আয়োজকেরা জানান, সৈকতের এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ৩০০টির অধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।

প্রতিমা বিসর্জন চলাকালীন সৈকতের বিজয়া মঞ্চে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিত দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল শর্মার সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস, মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়া, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর।

শুভেচ্ছা বক্তব্যকালে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, বাংলাদেশ শান্তি সম্প্রীতির দেশ। একথা প্রমাণ করে প্রতিমা বিসর্জন উৎসবকে ঘিরে মানুষের সম্প্রীতি আর উচ্ছ¡াসের ঢেউ। কক্সবাজার সৈকতের এই উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলন উৎসব। এবার করোনার মধ্যে উৎসববিহীন শুধু পূজা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকলের আন্তরিক প্রয়াসে কোন রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। মনে রাখতে হবে অশুভ শক্তির বিনাশ ও সত্যের আরাধনাই দুর্গোৎসবের বৈশিষ্ট্য।
পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ও টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে ৫দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় পুলিশ নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জনে টুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। আগামীতেও সব ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুলিশ অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় কাজ করবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব বাঙালির ঐতিহ্যের অন্যতম চিহ্ন। শত শত বছর ধরে বাঙালি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এই ঐতিহ্য ধারণ করে আসছে। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এখানে হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানরাই যোগ দেন বেশি। এভাবেই মির্মল ভালোবাসায় দূর্গাকে বিসর্জন দিয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আর সেই মিছিলে যোগ দিয়েছেন মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ আর নাম না জানা অনেক ধর্মাবলম্বী মানুষ।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের দুর্গাপূজা জেলাব্যাপী পূজা অর্চনা করা হয়েছে। পূজারীরা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব যেন করোনামুক্ত হয় তার জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছে। সবার সচেতনতায় করোনা সংকট মোকাবেলা সহজ হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরস্বতি বাড়ি পরিচালনা কমিটির ট্রাস্টি অ্যাড. তাপস রক্ষিত, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি রতন দাশ, বিপুল সেন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সরূপম পাল পাঞ্জু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা দীপ্তি শর্মা, শহর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বেন্টু দাশ, সাধারণ সম্পাদক মিঠুন কান্তি দে, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক দাশ, সাধারণ সম্পাদক বাবলা পাল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য স্বপন পাল, বলরাম দাশ অনুপম, শুভ দাশ, রামু পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক স্বদীব শর্মা, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বিবেকানান্দ শর্মা, উখিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন শর্মা রনি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রবীন্দ্র দাশ।