কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত ৫ হাজার ছাড়িয়ে, মৃত্যু ৭৯

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২০

কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে-৭০ জন স্থানীয় নাগরিক এবং ৯জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। আক্রান্তের তলনায় মৃত্যুর হার ১’৫৯% ভাগ। কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্বস্ত সুত্র মতে, কক্সবাজারের নাগরিক এমন আরো ৯ জন কক্সবাজারেই করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলার বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যূবরণ করেছেন। যাদের হিসাব কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রদত্ত তথ্যের মধ্যে নেই। এই ৯ জন সহ কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা মোট ৮৮ জন।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান মতে, ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ৫ হাজার ১০ জন করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে, স্থানীয় নাগরিক ৪৭০৪ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ৩০৬ জন। পুরাতন করোনা রোগীর ফলোআপ টেস্টে এ পর্যন্ত মোট ২৯৮ জনের রিপোর্টও ‘পজেটিভ’ এসেছে।

রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২৬ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে মোট ১লক্ষ ৭৯হাজার ৫৯১ টি পরিবারে ৮লক্ষ ১৯ হাজার ৭৮৭ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। যারা সব মিলিয়ে মাত্র ৬ হাজার ৫ শত একর ভূমিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। বিস্ময়কর বিষয় হলো, ছোট্ট জায়গায় এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরনার্থী বসবাস করেও করোনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে আকাশ ছোঁয়া সাফল্য এসেছে। কোভিড-১৯ সংক্রামনে কঠিন পরিস্থিতিতেও ৩৪ টি ক্যাম্পে প্রায় সোয়া ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাকে সরকারি ও ডাব্লিউএইসও এর সকল স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ এবং মানাতে পেরেছে। কক্সবাজার আরআরআরসি অফিস থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছিলো বহুমুখী জরুরি বিভিন্ন পদক্ষেপ। যার ফলে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ৩০৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মাত্র ৯ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী।

২২ অক্টোবর পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ২৩৯২ জন রোগী নিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা শীর্ষে অবস্থান করছে। ৭৩৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে উখিয়া উপজেলা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ৪৭৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে চকরিয়া উপজেলা তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে, ৪৪৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে টেকনাফ উপজেলা চতুর্থ অবস্থানে, ৩৫৯ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে রামু উপজেলা পঞ্চম অবস্থানে, ৩১৫ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে মহেশখালী উপজেলা ষষ্ঠ অবস্থানে, ১৮৩ জন করোনা রোগী নিয়ে পেকুয়া উপজেলা সপ্তম অবস্থানে এবং কুতুবদিয়া উপজেলা ৯৩ জন করোনা রোগী নিয়ে ৮টি উপজেলার মধ্যে সর্বনিম্মে অবস্থান করছে। তবে মাত্র প্রায় দেড় লক্ষ জনসংখ্যা অনুপাতে কুতুবদিয়া উপজেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একেবারে কমও নয়। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের প্রণীত দৈনিক ম্যাপিং থেকে এ তথ্য জানা যায়।

২২ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনা ভাইরাস এর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে মোট ৪৭৩০৩ জনের।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৪২০ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৮৮’৮৮% ভাগ। একইসময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ১৯ জন, রামু আইসোলেটেড হাসপাতালে ২ জন, টেকনাফ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১২ জন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ১৩৮ জন মোট ১৭১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

২২ অক্টোবরের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল :

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে বৃহস্পতিবার ২২ অক্টোবর ৩৪৫ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে ৪৬ জনের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলায় ৩৭ জন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ২জন, বাঁশখালী উপজেলায় ৬ জন ও আগে করোনা আক্রান্ত হওয়া ১জন পুরাতন রোগীর ফলোআপ টেস্ট রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ পাওয়া যায়। একইদিন বাকী ৩১৯ জনের স্যাম্পল টেস্টের রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ পাওয়া আসে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া  এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার জেলায় করোনা ‘পজেটিভ’ রিপোর্ট পাওয়া ৩৭ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৭জন, রামু উপজেলায় ১জন, উখিয়া উপজেলায় ৩জন, টেকনাফ উপজেলায় ৪জন ও মহেশখালী উপজেলায় ৯ জন এবং ১৩ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী।

এনিয়ে, কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৫০১০ জনে পৌঁছেছে। যা দেশে চতুর্থ সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।