বেতন-ভাতার সুযোগ-সুবিধাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মো. নবী আলম।
তিনি জানান, গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম অধিদফতরের সামনে নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এর আগে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি হলো-
১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা
২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান
৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান
৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ
৫. এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ
৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ
৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান
৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন
৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা
১০. নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং
১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এর আগে গত শনিবার শ্রমিক ধর্মঘট প্রত্যাহার ও তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে এতে নৌ-পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিন ও শ্রমিক নেতারা অংশ নেন। সভায় নৌযান মালিকদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা অংশ নেননি।
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেছিলেন, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি নন। তারা আলাদাভাবে বৈঠকে বসবেন। দু’পক্ষ একসঙ্গে না বসায় ধর্মঘট স্থগিতের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছি। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, ধর্মঘট পালন মুখ্য নয়, মুখ্য বিষয় হচ্ছে আমাদের দাবি আদায়। দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে এলেও তা মানেননি মালিকরা। বৈঠকেও তারা এলেন না। তিনি বলেন, অন্তত খোরাকি ভাতা দিলেও আপাতত ধর্মঘট স্থগিত করা যায়। কিন্তু কোনো দাবি না মানলে এ অবস্থান থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যা-প) সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুবউদ্দীন আহমদ বীরবিক্রম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন কোনো সিবিএ সংগঠন নয়। আমরা বলেছি, এটি সিবিএ রূপ নিয়ে আসুক তারপর বৈঠকে বসব।
দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন কাঠামো নিয়ে ২০১৬ সালে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ওই গেজেটের কার্যকারিতা রয়েছে। ওই সময়ের পরে ভাতার দাবির বিষয় আসতে পারে, এর আগে নয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় নৌপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইন প্রয়োগের নামে নৌযান শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ, নৌ-শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, জীবন বীমা প্রবর্তন, প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুনতাকিম হোছাইন
বার্তা সম্পাদক: ইকবাল হোছাইন
মেইলঃ bangladeshpaper71@gmail.com
অফিসঃ ০১৮৮-৬৬১০৬৬৬ বার্তা প্রধান ০১৮৫৭৬৭১৯৪৩
কপিরাইট আইন,২০০০ © অনুসারে বাংলাদেশ পেপার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত