বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বাঁশের কঞ্চি দিয়ে স্ল্যাব, খালে ব্লক বসানোর নামে অনিয়ম

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০৯-১৭ ১৭:২১:৩০  

ডেস্ক নিউজঃ

স্ল্যাব তৈরির কাজে রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হল বাঁশের কঞ্চি। আবার খালখননের পর ব্লক বসানোর নামে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। এসব পুকুরচুরির বাইরেও টেন্ডার ছাড়াই নামে-বেনামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিজেরাই কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ কাজেই কোনো সরকারি তদারকি নেই। এভাবে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেবার নামে অর্থ লোপাটের রীতিমতো উৎসব চলছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানহীন সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্ল্যাব। উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০ এক্সটেনশনে বেশ কিছু বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয় স্ল্যাব। একইভাবে খাল খননের পর ব্লক বসানোর নামেও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। নামে-বেনামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নিজেরাই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন— রয়েছে এমন অভিযোগও। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে সাইট মেইনটেন্যান্স প্রকৌশল প্রজেক্ট (এসএমইপি)। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির অর্থায়নে খাল খননের কাজটি করে এসএমইপি এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাইট মেইনটেন্যান্স প্রকৌশল প্রজেক্টের (এসএমইপি) নামে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ইউএনএইচসিআরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাস্তা নির্মাণ, সাইট রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার, নিষ্কাশন চ্যানেল পরিষ্কার, পুনর্বাসন অ্যাক্সেস, নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০ এক্সটেনশনে বেশ কিছু বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ভাঙ্গা স্ল্যাব দেখা যায়। একইভাবে খাল খননের পর ব্লক বসানোর নামেও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। স্ল্যাবের ওপরের অংশে সামান্য সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে— যা কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। আইওএমসহ এনজিওগুলো ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র নিলেও রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে নিজেরাই কাজ করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসএমইপির প্রকল্প প্রকৌশলী হাসান তারেক বলেন, ‘শুরুর দিকে পরীক্ষামূলক বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ৫০০ পিস স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছিল। যা গুণগত মান যাচাইয়ের পরে আর করা হয়নি।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাল খননের কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান তারেক বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর, ডাব্লিউএফপি এবং আইওএম তিনটি সংস্থার অর্থায়ন ও যৌথ সমন্বয়ে এসএমইপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। খাল খননের বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। এটা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) কাজ।’

তিনি বলেন, ‘এসএমইপি মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গাড়ি চলাচল উপযোগী সড়ক তৈরি, প্রয়োজনীয় উপকরণ সাপ্লাই, প্রাথমিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সাইট প্রস্তুতির কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ডাব্লিউএফপি ব্যয়বহুল মেগা রোড, ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ করে। হাসপাতাল ও সড়কের ছোট-খাট অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর সংস্কার হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) অর্থায়নে। এছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবির অর্থায়নে ইউএনএইচসিআর এবং এলজিইডি যৌথভাবে ক্যাম্পে উন্নয়নমূলক কাজ করে।’

এসএমইপির প্রকল্প প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘এসএমইপি কোনো ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করে না। রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে নিজেরা কাজ করে এবং নিজেরাই মনিটরিং করে।’ এ পর্যন্ত এসএমইপি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কত টাকার উন্নয়ন কাজ করেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে এসএমইপি কাজ করছে। এর সঠিক তথ্য এ মুহূর্তে জানাতে পারছি না। ’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়া স্থানীয়দের কল্যাণে কোন কাজ করে কিনা জানতে চাইলে ওই প্রকৌশলী বলেন, ‘শুধুমাত্র রাজাপালং ইউনিয়নের ফলিয়াপাড়ায় একটি ব্রিজ ছাড়া অন্য কোথাও এ পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি।’

এদিকে এলজিইডি উখিয়ার সহকারী প্রকৌশলী সোহরাব আলী বলেন, ‘আমি এসব দেখাশোনা করি না। দায়িত্ব ভাগ রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে পারেন।’

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এসএমইপি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব কাজ নিজেরাই করে। এলজিইডি শুধুমাত্র খাল খননের কাজ করে থাকে। ইতোমধ্যে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে খাল খননের পুরো কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির অর্থায়নে খাল খননের কাজগুলো এলজিইডি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে করে আসছে।’

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবির অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং এসএমইপি যৌথ ভাবে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে। যদিও এনজিওগুলো নিজেরা নিজেদের মতো কাজ করছে বলে জানিয়েছেন উখিয়ার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সূত্রঃ সিপি


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা