বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুদের অর্থ বিনিয়োগ করে জমি অধিগ্রহনে দালালি

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০৯-০২ ১১:৫৮:৩৪  

বিশেষ প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে যে’কজন শীর্ষ সুদের কারবারি আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মুহাম্মদ কায়সার নোবেল। কক্সবাজার শহরের ছোট বড় শত শত ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি তার সুদ ফাঁদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

এবার সেই সাবেক কাউন্সিলর নোবেেলর ২০ কোটি টাকা জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক কর্মকর্তার দাবী, কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দালালি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নোবেল সহ একটি চক্র। সেই টাকার সন্ধান নিতে গিয়ে কক্সবাজারে চারটি ব্যাংকের শাখায় তার একাউন্টে ২০ কোটি টাকার সন্ধান পায়। সেই টাকা জব্দ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ সেপ্টম্বর) দুদকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত একটি মামলার প্রেক্ষিতে জাবেদ কায়সার নোবেলসহ আরো কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধান করছে দুদক। অনুসন্ধানে জাবেদ কায়সার নোবেলের নামীয় বেসিক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় ২০ কোটির বেশি টাকার সন্ধান পাওয়া যায়।

ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কথিত মধ্যস্থতার (দালালি) নামে অবৈধ উপায়ে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই নোবেলের নামীয় এসব ব্যাংক হিসাব জব্দ বা টাকাগুলো জব্দ দেখানো হয়েছে।

এর আগে কক্সবাজারে কর্মরত সার্ভেয়ার ও সংশ্লিষ্টগণ একে অপরের যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে সুবিধা গ্রহণের দায়ে মোট দশ জনের ব্যাংক হিসাব বিবরণ চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে দুদকের নোটিশ পাঠানো হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুদের কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দালালি শুরু করেন সাবেক কাউন্সিলর নোবেল। দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসা এই দালালিতে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

দুর্নীতি দমন কমিশন এর উপ সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে কক্সবাজার জেলার ভূমি অধিহণের বিভিন্ন প্রকল্প হতে জমির মালিকদের নিকট থেকে ৯৩ লক্ষ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন পূর্বক ভোগ দখলে রেখে মানি লন্ডারিং অভিযোগে মোট দশ জনের ব্যাংক হিসাবের বিবরণ চাওয়া হয়।

যাদের হিসাব বিবরণ চাওয়া হয়েছে তারা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক ১০ নং ওয়ার্ড কাউসিলর জাবেদ মুহাম্মদ কায়সার নোবেল, নুরুল কবীর, ইনানীর আহমদ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান, মহিবুল্লাহ, মোফিজুর রহমান, আব্দুছ সাত্তার সহ আরও দুই জন।

নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৫ আগস্ট এর মধ্যে উক্ত ব্যক্তিদের রেকর্ডপত্র সত্যায়িত অনুলিপি উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের আদেশ দেয়া হয়।

নোটিশে আরও বলা হয়, উক্ত ব্যক্তিদের নামে অথবা তাদের পরিবারের কোন সদস্য অথবা তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাবের কেওয়াইসি, আগামী আগস্ট হতে অদ্যবধি হিসাবে হিসাব বিবরণী এবং ১ লাখ টাকার উর্ধেŸ প্রত্যেকটি লেনদেনের ডেবিট ক্রেডিট ভাউচারসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জমা দিতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মুহাম্মদ কায়সার নোবেলের ২০ কোটি টাকা জব্দ করেছে দুদক।

কক্সবাজার শহরের শীর্ষ সুদের কারবারিদের বেশির ভাগই মোহাজেরপাড়ার। মোহাজেরপাড়ার পরে বেশি সুদি ব্যবসায়ীদের অবস্থান বিমানবন্দর সড়কে। তবে শহরের সবাইকে টপকিয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছেন পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ কায়সার নোবেল। এটা যেন তার পেশা। তবে নোবেলের মত আরও কয়েকজন বর্তমান কাউন্সিলর সুদের ব্যবসা করেন। তাদেরও খোঁজ নিচ্ছে দুদক।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, নোবেল প্রতি লাখে মাসে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা সুদ নেন। তবে ফেরত দিতে চাইলেও মূল টাকা সহজে ফেরত নেন না। সুদের চক্র চলতে থাকে। তার সুদের ফাঁদের শিকার হয়ে ভিটেবাড়ি, ব্যবসা হারিয়ে এখন পথে বসেছে অথবা দেউলিয়া হয়ে গেছে অনেক মানুষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক কাউন্সিলর নোবেলের সুদের ফাঁদের শিকার একজন ব্যক্তি ভয়েসওয়ার্ল্ডের কাছে ফেসবুক ইনবক্সে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবী করেন, ‘নোবেলের কাছ থেকে তিনি ২০ লাখ টাকা সুদ নিয়েছিলেন। ২০ লাখ টাকার বিপরীতে ৩০ লাখ টাকা সুদ পরিশোধ করেছেন। কিন্তু লকডাউনে তিনি সুদ চালাতে পারেননি। সুদ চালাতে না পারায় নিয়মিত হুমকি ধমকি দিচ্ছেন নোবেল।’

তিনি আরও দাবী করেন, ‘২০ লাখ টাকার বিপরীতে ৩০ লাখ টাকা সুদ পরিশোধ করেও এখন পুরো টাকা পরিশোধ হওয়ার জন্য এককালীন ২৮ লাখ টাকা দাবী করছেন। এটা আদায়ের জন্য নিয়মিত মানসিক টর্চার করে যাচ্ছেন তাকে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী, মুদির দোকানদার, হ্যাচারী ব্যবসায়ী, পর্যটন উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়ী নোবেলের কাছে জিম্মি। সুদের মহাজন তাই, নোবেলকে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ীদের সমিতিতে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে।

নোবেলের সুদ কারবারের চক্র এমনভাবে বৃদ্ধি পায়, যে ব্যক্তি তার কাছ থেকে একবার সুদের টাকা নেন সেই ব্যক্তি পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে যান। টাকা দিতে না পারলে ভিটেবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেড়ে নেন। এছাড়াও সুদের টাকা আদায়ের জন্য নোবেলের টর্চার সেল এবং লালিত বাহিনী রয়েছে। তার সুদের কারবার বন্ধে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান সচেতন মহল।

জানা গেছে, কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় ওয়ান ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকসহ কয়েকটি চিহ্নিত ব্যাংকে। এলএ শাখার চেক লেনদেনে কমিশন পান ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরাও। তাই এসব ব্যাংকে সাধারণ গ্রাহকদের তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। এসব ব্যাংকেও নোবেলের একাউন্ট খতিয়ে দেখার জন্য দুদককে আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা