
ইস্কুল পালানো ছেলেবেলা থেকে আমার চিঠি লিখা শুরু।নিজের ঘর ও ইস্কুল ঘরের পরে, যে ঘরটি’কে ঠাকুর ঘর ভাবতাম তার নাম ডাকঘর।একটি চিঠি ডাকবক্সে ফেলার শব্দ ধ্বনি এবং ফিরতি চিঠির প্রতিক্ষায় প্রহর গোনার চাতক সময়ের অনুভূতি কেমন!তথ্য প্রযুক্তির সর্বাধুনিক বর্তমানে বুঝিয়ে বলা মুশকিল।
সময়ের বদলে জীবনের খেলাঘরে এখন ডাক পিয়ন দরোজার কড়া নাড়েনা! ডাকঘর এখন ভূতের বাড়ী।হলুদ-নীল খাম,কতো রঙিন কাগজ-কালি,কবিতা কিংবা গানের দুটো লাইনে নবীন কিশোরের চিঠি কিশোরীর পাঠ্য বইয়ের ভাঁজে রাখার মতো দুরুদুরু প্রেম এযুগে বড়ো বেমানান।বিগত সময়ে ভালোলাগার- ভালোবাসার প্রেয়সীকে এক নজর দেখার অবাক কান্ড-কারবার এসময়ে চিন্তা করা ভুল!
“দিন গুলো মোর সোনার খাঁচার রইলোনা” এমনই আক্ষেপ শুধুমাত্র রবি ঠাকুরের নয়,আমাদের সকলের।দিনগুলো সোনার খাঁচায় না থাকলেও দিনলিপি স্মৃতির খাঁচায় থাকে।সিনেমা হলে ঢুকতে,ইষ্টিশনের রেলগাড়িতে চড়তে টিকিট লাগে।বন্ধুর কাছে পত্র দিতেও টিকিট লাগে।চিঠির খামে লাগানো টিকিটের নাম ডাকটিকিট।
আমার বন্ধু এক সময়ের আলোচিত প্রেমিক হিসেবে সুপরিচিত, সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা শাহাদত হোসেন জুয়েল।তার সংগ্রহে কোন চিঠি পত্র এখনো সংরক্ষিত আছে কিনা জানিনা।তবে তার কাছে ডাকটিকিটের বিরল সংগ্রহশালা আছে।১৯৭১ সালের ২৯জুলাই মুজিব নগর সরকার ৮টি ডাক টিকিট প্রকাশ করে;যে টিকিট গুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিলো।তখন থেকে ২৯জুলাই জাতীয় ডাকটিকেট দিবস হিসেবে পালিত হয়।
কিশোর বয়সে অনেকের অনেক রকম শখ জাগে।শখের বসে কেউ লিখে,আঁকে,বই পড়ে, খেলে,ভ্রমণ করে,গান গুণে,ছবি দেখে।বয়স বাড়ার সাথে শখও রঙ বদলায়।কিন্তুু জীবনের অমোঘ নিয়মকে মিথ্যে প্রমাণ করে সেই কৈশোর থেকে ডাকটিকেট সংগ্রহের যে শখ পূরণের যাত্রা শুরু তা এখনো চলমান।যারা ডাকটিকেট সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে অবগত তারা নিশ্চিত জানে;এই সহজ নয়,অত্যন্ত কঠিন।
সীমাহীন ব্যতিব্যস্ত সময়কালে এসেও এই কঠিন কাজটি বিগত ৩দশক যাবত চলমান রেখেছে বন্ধু শাহাদত হোসেন জুয়েল।৭১সালে মুজিবনগর সরকারের প্রকাশিত প্রথম ডাকটিকেট থেকে শুরু করে গতকাল(২৯জুলাই,২০১৯)জাতীয় ডাকটিকেট দিবসে প্রকাশিত টিকিটও তার সংগ্রহে রয়েছে।বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের প্রত্যেক সময়ে প্রকাশিত সকল ডাকটিকেট তার সংগ্রহে রয়েছে।যার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার।
প্রতিটি ডাকটিকেটের উপর যে অঁঙ্কন চিত্র রয়েছে,তা সময়ের চিত্র শুধু নয়,আবহমান বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি,ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কালের অমূল্য নিদর্শন।একজন মননশীল সৃষ্টমূখর তারুণ্যদীপ্ত প্রাণ ছাড়া এই ইতিহাস ধারণ ও লালন করা অসম্ভব।দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনের নির্দশন শুধু নয়,স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর দর্শনও ধারণ ও লালন করে চলছে আমার সহযোদ্ধা বন্ধু জুয়েল।
আসুন একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের প্রদীপ্ত প্রত্যয়ে মহান মুক্তযুদ্ধের চৈতন্যে- আত্ম করি জয়।কারণ স্বপ্ন শূণ্য মানুষ আর ইতিহাস শূণ্য জাতী মহাবিশ্বে অস্থিস্তহীন।
(-মির্জা ওবাইদ রুমেল,লেখক-সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা,কক্সবাজার।)