বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শাবি ছাত্রলীগের এক কমিটিতে অর্ধযুগ

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-০৭-২৭ ১৩:৩৪:২০  

হাছিব হোছাইনঃ

২০১৩ সালের ৮ মে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৭ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এর পর থেকেই শনির দশা কাটছে না ছাত্রলীগের এই ইউনিটটিতে। এক এক করে দুবার ঐহিত্যবাহী এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছে। তবে অদৃশ্য কারণে বিগত ছয় বছরের অধিক সময়েও নতুন নেতৃত্ব পাননি শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, গত ছয় বছরে সরকার ও সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে

এমন অনেক অপকর্মে জড়িয়েছেন বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বহিরাগত এক ছাত্রলীগকর্মীর জীবন বলি দিতে হয়েছে। শিক্ষক পিটিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে সরকারের ভাবমূর্তি কলুষিত করেছেন নেতাকর্মীরা। বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল কলেজছাত্রী খাদিজাকে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে ফের দেশে-বিদেশে সংগঠনকে কলঙ্কিত করেন। ২০১৭ সালে এক স্কুলছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তীকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয় সংগঠনটি। হত্যা মামলা থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই মামলার আসামি রয়েছেন ইউনিটটির দুই শতাধিক নেতাকর্মী। বিভিন্ন সময় অপকর্মে জড়িয়ে বিশ^বিদ্যালয় ও সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সংখ্যাও কম নয়। ইয়াবা-ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সেবনের প্রমাণ ও মাদকদ্রব্য বেচাকেনায় অনেকের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

শাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমটির ২১ সহসভাপতির মধ্যে ১৮ জনই অছাত্র, বিবাহিত ও চাকরিজীবী। যৌন হয়রানির ঘটনায় সভাপতি পার্থ বহিষ্কার হলে ২০১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান সহসভাপতি রুহুল আমীন। রুহুল ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইংরেজি ভাষার সার্টিফিকেট প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত রয়েছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান অছাত্র। ২০০৯-১০ সেশনে ভর্তি হলেও বিগত ৯ বছরে প্রথম বর্ষ সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। ফলে বিশ^বিদ্যালয়ে ১৪৯তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তার ছাত্রত্ব বাতিল করে প্রশাসন। ৯ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৭ জন অছাত্র, বিবাহিত ও বহিষ্কৃত। ৯ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ৬ জন অছাত্র, বিবাহিত ও একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ৪২ সম্পাদক ও উপসম্পাদকের মধ্যে ২৬ জন অছাত্র ও ৬ জন চাকরিজীবী। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে শিবির-ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অনেক পুরনো।

কমিটিতে পদপ্রত্যাশী এক নেতা জানান, ‘এই বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করার কোনো মানে আছে? সাত বছর ছাত্রলীগের রাজনীতি করে ৮-১০টি মামলার আসামি হলাম, অন্যায়ভাবে বহিষ্কারাদেশ পেলাম, কিন্তু কোনো স্বীকৃতি পেলাম না। মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

অপরদিকে গত সাড়ে ছয় বছরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সম্মেলনের মধ্য দিয়ে একাধিকবার পরিবর্তন হলেও ভাগ্য বদল হয়নি শাবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের। বছরের পর বছর অপেক্ষা করে রাজনীতি ছেড়েছেন অনেকে। ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। তবে ওই দিন কর্মিসম্মেলন করেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে হয় নেতাকর্মীদের। ২০১৮ সালে সোহাগ-জাকিরের পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন শোভন-রব্বানী। ছাত্রলীগের চলমান বড় কোনো সিন্ডিকেটের বাইরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পাওয়ায় আশায় বুক বাঁধতে থাকেন হাজারো নেতাকর্মী। এর আগে গত বছর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সিলেটে এসেই ঘোষণা দেন ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই হবে সম্মেলন। কিন্তু এক বছরেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি। দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দিতে আমি আন্তরিক।

ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, শিগগিরই কমিটি দিয়ে দেব। আপাতত ঢাকার ইউনিটগুলো নিয়ে কাজ করছি। কবে শাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শোকের মাস আগস্টে আমরা কোনো কমিটি দেই না। আশা করি সেপ্টেম্বরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দিতে পারব।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা