বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পুলিশ জনগণের বন্ধু কথাটি মিথ্যে প্রমানে ব্যস্ত আইসি সিদ্ধার্থ

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০৫-১৩ ০৫:০২:২৪  

নিজস্ব প্রতিবেদক:


ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধে আ’লীগ ও কমিউনিটি পুলিশের অভিযোগ


কক্সবাজারের ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিদ্ধার্থ সাহার বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারে সহযোগিতা, মানব পাচারকারীদের সাহায্য, ভূূূমি দখলে দিতে দখলবাজদের সাথে চুক্তি, ক্রস ফায়ার দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হয়রানি, বিচার প্রার্থীদের মারধরের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা। গত ২ মে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সিদ্ধার্থ সাহার বিরুদ্ধে সুনির্দ্দিষ্ট ৭টি অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধান, চট্টগ্রাম রেইঞ্জের ডিআইজি, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তারা দুর্নীতিবাজ পুলিশের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিত অভিযোগ তদন্তপূর্বক শাস্তি দাবি করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির আইসি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। অর্থের লোভে পড়ে মানব পাচার এবং ইয়াবা ব্যবসায় সহযোগি হয়ে জঘন্য অপরাধ করছেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জালিয়া পালং ইউনিয়নকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। প্রশ্নবিদ্ধ করছেন বাংলাদেশ পুলিশের সুনাম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধানসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো অভিযোগে তারা দাবি করেছেন, গত ১৪ এপ্রিল মনখালী গ্রামের মৃত অছিয়র রহমানের ভোগদখলীয় জমি প্রতিপক্ষের কাছে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দখল করে দেন।

 

১ মে ইনানী মৌজার খাস খতিয়ানের জমি জনৈক জালাল আহমদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমান উল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে দখল করে দেন। বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া ইয়াবার একটি অংশ আইসির (সিদ্ধার্থ সাহা) গাড়ি চালক মো: শফির বিল এলাকার মৃত জাফর আলমের ছেলে আবু তাহের ও মনখালী গ্রামের মৃত রহমত শরিফের ছেলে তোফাইল আহমদ’র (বিভিন্ন সময় পুলিশের হাতে আটক হন। একাধিক মামলার আসামী। সর্বশেষ মনখালীতে জসিম হত্যার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।) কাছে বিক্রির জন্য দেয়া হয়। আইসি সিদ্ধার্থ সাহা মো: শফির বিল এলাকার মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে আব্দু ছালামকে ক্রস ফায়ারে খুন করার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেছেন।

মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করতে অভিযুক্ত আইসি প্রকাশ্যে বলেন,“মেরিন ড্রাইভে বালিশ ছাড়া শোয়াইয়া দেব”।

অভিযোগে আরো বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে সিদ্ধার্থ সাহার সখ্যতা এমন যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে একমূহুর্তেও ভাবেন না। এমন কি দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে নিয়েও বিরুপ মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা। জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো: ইউনুছকে পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে প্রকাশ্যে মারধর ও গালিগালাজ করেন। জালিয়াপালং ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নুরুল আবছার নান্নুর বাড়িতে তার প্রতিপক্ষের সাথে নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারিদের মারধরের শিকার হয়ে নান্নুর মা’য়ের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা সহকারি পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান’র নেতৃত্বে তদন্ত চলছে।

এছাড়া সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধে নারী লোভীর অভিযোগও তুলে বলেন, প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে তদন্ত করলে এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে দাবি তাদের। সোনারপাড়া বাজারে জনৈক মনঞ্জুর ব্রাদার্স নামে একটি মুদির দোকানের কর্মচারিকে বিনা কারণে মারধর করার অভিযোগ করেছেন তারা।
তারা আরো বলেন, স্থানীয় জাগির হোসেন সিকদারের ছেলে আবু কাইছারের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ২০ বস্তা সিমেন্ট, শফিকুর রহমানের ছেলে তারেকুল ইসলামের কাছ থেকে ২৮০০০ টাকা, মো: উল্লাহর ছেলে আবু ছৈয়দ’র কাছ থেকে ১০০০০ টাকা, ফরিদ আহমদের ছেলে মো: মহিবুল্লাহর কাছ থেকে ৫০০০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। অভিযোগে ভোক্তভ‚গী সকলের মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো শত শত অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করে অভিযুক্ত পুলিশ ফাঁড়ির আইসির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগকারী হিসেবে আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন জালিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান এসএম ছৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল আমিন চৌধুরী রাশেল, উখিয়া উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি নুরুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি লিয়াকত আলী বাবুলসহ ১ হতে ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক।
এর আগেও সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধে গত ৫ মে জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সোনাইচড়ি এলাকার খাইরুল আমিনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার মরিয়ম লিখিত অভিযোগ দেন। উক্ত অভিযোগে তিনি দাবি করেছেন, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করে দীর্ঘ ১০০ বছরের দখলীয় পিএফ জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে হামলা চালান সিদ্ধার্থ সাহা। এ সময় অভিযোগকারী গর্ভপাত হওয়া এবং তার ৫ বছরের শিশু কন্যাকে মারধরের অভিযোগ আনেন।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল আমিন চৌধুরী রাশেল জানান,

ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সিদ্ধার্থ সাহা কেন জানি আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিপক্ষ করে কাজ করছে। কিন্তু হওয়ার কথা ছিলো একে অপরের সহযোগি। যারা (বিএনপি-জামায়াত) সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সমালোচনা করে তদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হয়রানি করা রহস্যজনক। একজন সরকরি কর্মকর্তা হয়ে সমাজের পালাতক আসামী ও জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের অনৈতিক সম্পর্কের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাই আমরা তার অপকর্মের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

কমিউনিটি পুলিশ উখিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার চৌধুরী জানান,

কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যরা এলাকার অপরাধ নির্মূলে পুলিশকে সহযোগিতা করছে প্রতিনিয়ত। জীবনের ঝুুঁকি নিয়ে চুরি, ডাকাতি, মানব পাচার রোধ, ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে কাজ করছে। সেখানে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা একজন আইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা দু:খজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কেন পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যদের সাথে সমন্বয় নেই, এটি তদন্ত করা দরকার। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রতিদিন নানা অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা