বাংলাদেশ, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইনে শিক্ষা নাকি ব্যবসা ?

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০৫-১১ ০১:২৭:৩৫  

সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা,

সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো অলরেডি এই ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন যে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। আমেরিকা আর কানাডা তো রীতিমতো অসহায়ের চেয়েও খারাপ। সেখানে ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের এই গরীব দেশটি প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে করোনার সংক্রমণ কমাতে…অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশও কার্যত লকডাউন। সরকারী-বেসরকারী অফিস,আদালত সব বন্ধ শুধুমাত্র জরুরী সেবা প্রদানকারী সংস্হাগুলো এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর কাজ চলতেছে। অবশ্যই প্রয়োজনের তাগিদে পরবর্তীতে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। কিন্তু গত মার্চ থেকেই দেশের সকল স্কুল, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ চলতেছে, আগামী ১৬ই মে পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটি চলবে।
যেই উদ্দেশ্যে আমার এই লিখা, তা হল গত ৩০শে এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)’ র এক অনলাইন মিটিং সম্পন্ন হয়। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে এই করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস,পরীক্ষা এবং ভর্তি কার্যক্রম চালাতে পারবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে এই অনলাইনে কার্যক্রম চালাবে সেটা তারা বসে ঠিক করবে এবং ইউজিসি থেকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাইডলাইন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এবং আরো সিদ্ধান্ত হয় যে শিক্ষার্থীদের উপর টিউশন ফি নিয়ে চাপ দেওয়া যাবেনা মর্মে।

খুবই ভাল সিদ্ধান্ত, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষগুলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে। আসলেই কী তারা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে নাকি তাদের এই ব্যবসায়িক প্রজেক্ট ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে এই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা???

আসুন কিছু হিসেব মিলিয়ে নিই, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে,তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র উপর নির্ভরশীল। এখন তারা নাকি বাধ্য হয়েই এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস,পরীক্ষা এবং ভর্তি কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট যে তারা শুধুমাত্র টিউশন ফি আদায়ের জন্যই এই অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

আমি নিজেই একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের উপর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার সুবাদে এবং ছাত্র রাজনীতি করার বদৌলতে মোটামুটি ধারনা আছে যে প্রতিটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথাপিছু শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি বাবদ তারা কতটাকা আয় করে সেটা। আর আইনেই লিখা আছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্ট কতৃক পরিচালিত হবে, এবং ট্রাস্টের আয়ের টাকাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে আর শিক্ষার্থীদের কল্যানে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ভিন্ন চিত্র, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে হযবরল অবস্থা, অধিকাংশ কম্পিউটারগুলো অকেজো,লাইব্রেরিতে নতুন কোন বই নেই,গবেষণাধর্মী কোন কার্যক্রম তো নেই বললেই চলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন আর শিক্ষার্থীদের কল্যানে কোন টাকাই বিনিয়োগ হয়না এখানে, যা হয় তা মালিকপক্ষের ভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, দুদকের সময় হয়না এসব দেখার!!!!

আমি যেটা বুঝি সেটা হল ট্রাস্টগুলোর একাউন্টে যা টাকা জমা আছে তা দিয়ে এরকম কয়েক বছর শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন তারা অনায়াসেই দিতে পারবে, তবে একদম নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কথা ভিন্ন।

একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধুমাত্র ধনীর দুলালেরা পড়ালেখা করেনা, এখানে অনেক মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা নিজেরাই টিউশন করে,পার্ট টাইম জব করে তাদের সেমিস্টার ফি’র টাকা যোগাড় করে পড়াশোনা করে আসছে। আবার এখানে ব্যবসায়ীর সন্তান, আর ব্যবসায়ী মানেই বিজিএমইএ এর হাই প্রোফাইল ব্যবসায়ী নয়, অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সন্তানও পড়ালেখা করে অনেক আশা নিয়ে। দেশে যেহেতু কার্যত লকডাউন, কোন ব্যবসা নাই, টিউশনি নাই, পার্ট টাইম জব নাই এখানে অনেক ছেলে মেয়েই এই সেমিস্টার গ্যাপ দেওয়ার চিন্তা করতেছে টাকার অভাবে সেখানে কতৃপক্ষ আসছে অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষার নাম দিয়ে সেমিস্টার ফি হাতানোর।

ইউজিসি যদিও বলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি’র জন্য চাপ দিতে পারবেনা, হুমমম তারা চাপ দিবেনা তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই ফি জমা না দিলে জরিমানাসহ জমা দিতে হবে পরবর্তীতে।

আমরা ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিকট আকুল আবেদন জানাব, এই সেমিস্টারে যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধ সেহেতু ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ বিল নাই,পানির বিল নাই আরও অন্যান্য বিল থেকেও তারা মুক্ত এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে এই সেমিস্টারে টিউশন ফি অর্ধেক করে দেওয়া হোক, এবং যারা এই সেমিস্টারে টিউশন ফি দিতে পারবেনা তাদের উপর যাতে জরিমানা করা না হয়।
এতটা জুলুম যাতে আমাদের ছোট ছোট ভাই বোনদের প্রতি করা না হয়। তাদের অভিভাবকদের প্রতিও এই মিনিমাম মানবিকতাটুকু দেখাবেন এই আশায় আমার এই লেখা। আমরা ইউজিসির পক্ষ থেকে কোন দায়সারা গাইডলাইন চাইনা, আমরা টিউশন ফি কমানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা চাই,একদম নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে কি করবেন সেটা আপনারা মন্ত্রণালয়ের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিন।

আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কতৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।

লেখক,
মিশকাতুল কবির,
আহবায়ক,
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা