বাংলাদেশ, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছোটলোক বড় হইলে অপরকে কাঁদায়-মাহবুবা সুলতানা শিউলি

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০৩-২৮ ১১:১৭:২৯  

মাহবুবা সুলতানা শিউলি

এসিল্যান্ড সাইয়েমা তিন বৃদ্ধ দিনমজুরকে নিয়ে যা করলেন তা একজন বিবেকধারী মানুষ হিসেবে আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিনা।

প্রিয় পাঠক শুভাকাংখীদের মতে ইদানীং আমি খুব কম লিখছি। আসলে বিশ্বময় যা শুরু হয়েছে তাতে কেউ তার কোনো কাজে সঠিক মনোনিবেশ করতে পারছেন না। সবারই একমাত্র চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯। আমরা এমন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি যা কল্পনাতীত। সর্বদা এমন এক আতংক বিরাজ করছে, পরম করুনাময়ের কাছে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করি “ হে আল্লাহপাক এমন মৃত্যু দিওনা প্রিয়জনরা আমায় ছুঁতেও ভয় পাবে..!!!”
ক্ষমা চাইবেন আল্লাহর কাছে, নিজের সকল ভয়, দীনতা, দূর্বলতা সবকিছু প্রকাশ করবেন একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে তাই বলে করোনা’র ভয়ে আপনার বিবেক, বুদ্ধি, মনুষ্যত্ববোধ লোপ পেয়ে আপনি একজন অমানুষের মতো আচরণ করতে পারেন না। ভুলে যাবেন না আপনি রাষ্ট্রের কর্মচারী মাত্র। জনগণের সেবা করার জন্যই রাষ্ট্র আপনাকে মাসিক বেতনের বিনিময়ে এই কাজে নিয়োগ দিয়েছেন। ভুলে যাবেন না আপনি এ রাষ্ট্রের জনগণের সেবা করার জন্য একজন বেতনভুক্ত চাকর বৈ আর কিছু নয়। কানেধরে ওঠবস করিয়েছেন বাপ দাদার বয়সী মুরব্বী বয়োজ্যেষ্ঠজনদের হোক তারা ঠেলাচালক মুটে মজুর কিন্তু মানুষ তো! আমাদের মুরব্বী তো! রিক্সা চালিয়ে, দিন মজুরের কাজ করে তাদের অনেকের সন্তান আপনাদের মতো বিসিএস ক্যাডার হয়েছে!!!! আপনি যা করেছেন সেজন্য আপনি বাহবা পাবেন মনে করেছেন! সেজন্য নিজের মোবাইলেও সেই চিত্র ধারণ করেছেন! আপনি ভেবেছেন, আপনার এই কৃতকর্ম দেখে দেশবরেণ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুশী হবেন! ধিক্ আপনাকে !! আমি একজন মেয়ে হয়ে আপনার মত মেয়ের এহেন কর্মে ধিক্কার জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমার মতো প্রতিটি মেয়েকে আপনি লজ্জিত করলেন। আমরা মেয়েরা কখনো বাবার বয়সী কোন মুরব্বিরকে কান ধরে ওঠবস করাতে পারি না, পারবো না। আপনাদের মতো সরকারি ঘুষখোর অফিসারদের ঘুষ খাওয়ার অপরাধে আপনি কি কখনো কানধরে ওঠবস করাতে পারবেন? ঐ বৃদ্ধগুলোর কি অপরাধ যে আপনি তাদের এত্ত বড় অপমান করবেন!! তারা কি ধর্ষক!!! আমার দৃষ্টিতে আপনি একজন মহিলা ধর্ষক। ঐ মানুষগুলোকে আপনি যেভাবে অপমান করলেন তা ধর্ষণের সমান অপরাধ মনে করছি। আপনি আইন শিখাতে এসেছেন! কই আপনার হাতে গ্লাভস কোথায়? চোখে চশমা কোথায়? এতজন মানুষ আশেপাশে, যথেষ্ট প্রটেকশন নিয়ে বের হননি কেন রাস্তায়? করোনার জার্ম এর বিষয়ে আপনি অবগত নন!!?

শিক্ষা আর জ্ঞান এক বিষয় নয়। শিক্ষিত হলেই যে জ্ঞানী হতে হবে তা নয়। তা আপনি প্রমান করলেন। আপনার সুশিক্ষার অভাব ছিল।

রাষ্ট্র দেশের জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাউকে না কাউকে ক্ষমতা প্রদান করেন। তাই শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্র যাদের দিয়েছেন তারা প্রয়োজনীয় শাস্তি দিবেন এইটাই নিয়ম ও স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে বয়োজ্যেষ্ঠকে কান ধরানো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তারা না জানলে না মানলে তাদের আটক করা হোক, জরিমানা করা হোক, বল প্রয়োগ করা হোক, কিন্তু রাস্তায় প্রকাশ্যে অপমান করার কোন বিধান নাই।
কাউকে কান ধরে উঠবস করানো সম্পূর্ণ বেআইনী, অসাংবিধানিক, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কান ধরে উঠবস করানোর মতো অমর্যাদাকর দন্ড প্রদান নিষিদ্ধ।
কোনো অজুহাতেই প্রকাশ্যে মানুষকে এমন অমর্যাদাকর, লাঞ্ছনাকর দন্ড প্রদান করার এখতিয়ার কারোরই নেই, এমনকি সাক্ষ্যপ্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও কোনো বিচারিক আদালতেরও নেই। জরুরী অবস্থানকালীন সময়েও সংবিধানের এই মৌলিক অনুচ্ছেদটি শিথিলযোগ্য নয়। হ্যাঁ, মানলাম দেশে একটা জরুরী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে মানুষকে ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সাথে সচেতন করুন। খুব প্রয়োজন হলে মানুষকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ এর ক্ষমতাবলে আটক করুন; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই মানুষকে এমন অমর্যাদাকর, অমানবিক শাস্তি দেয়া যাবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে তিনিই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যে যতটুকু দায়ী, তার ততটুকু সাংবিধানিক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
সাধারণ মানুষেরাতো আর সংবিধান, আইন মুখস্ত করে বড় হয়নি।
কিন্তু যারা প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বে থেকে আইনের দোহাই দিয়ে আইন ভাঙছেন তাদের দায়টা সবার আগে দেখতে হবে।

যার কৃতকর্ম এতক্ষণ ধরে বললাম তার পরিচয় ও করোনা পরিস্হিতিতে সে যা করেছে সেই কাহিনী তুলে ধরলাম।

যশোরের মণিরামপুরে মাস্ক না পরায় শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তিনি কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি মোবাইলে ধারণ করেন। রাতে এ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
জানা যায়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন প্রথমে দুই বৃদ্ধ। এরমধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তবে তাদের মুখে মাস্ক ছিল না। এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে সাইয়েমা হাসান শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এছাড়া পরবর্তীতে অপর এক ভ্যান চালককে অনুরূপভাবে কান ধারিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন।

এসি ল্যান্ড সাইয়েমা হাসান এ শাস্তি দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।
কান ধরিয়ে দাঁড় করানোর বিষয়টি দুঃখজনক উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।

যশোরের সিনিয়র সাংবাদিক সাজেদ রহমান যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, রাষ্ট্রের মালিকের সাথে, রাষ্ট্রের কর্মচারির আচরণ। কান ধরে উঠবস করানো বৃদ্ধটি ভ্যানচালক। নাম বললাম না। পেটের দায়ে সংসারের চাল-ডাল কিনতে এসেছিলেন যশোরের মণিরামপুরের চিনেটোলা বাজারে। উপজেলার এসিল্যান্ড সাইমা হাসান জনসম্মুখে তাকে কান ধরে উঠবস করালেন। আবার মজার ঘটনা মনে করে তিনি ছবি তুললেন নিজের মোবাইলে। এসিল্যান্ড দেশের সামান্য একজন কর্মচারি। এই ছবি দেখে আমি স্থির থাকতে পারছি না। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা