বাংলাদেশ, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ডুবে ৫ জনের মৃত্যু

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০২-১৪ ২০:১৩:৪১  


রাঙ্গামাটি সদরের কাপ্তাই হ্রদে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতরা হলেন- রিনা আক্তার (২২), শীলা বেগম (২৭), আফরোজা আক্তার (২৪), আসমা বেগম (২৫)। আরেক জন পুরুষ। তার নাম জানা যায়নি। ভালোবাসা দিবসে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই হ্রদে ঘুরতে গিয়েছিলেন তারা।


জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরী সিইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানার ৫০ জন শ্রমিক রাঙ্গামাটি বেড়াতে যান। তারা ভাগ হয়ে দুটি ইঞ্জিচালিত নৌকায় কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে বের হন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। কিছুদূর যেতেই জেলা প্রশাসক বাংলোর সামনে একটি বোট উল্টে ডুবে যায়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনাস্থল গিয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট ও রোভার স্কাউট দল। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত বোঝাই হওয়ার কারণে বোটটি উল্টে যায়। রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শওকত আকবর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পাঁচজনের মরদেহ রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ছিল।

নৌকায় ছিলেন এমন একজন জানান, পর্যটন ঘাট থেকে দুই নৌকায় ভাগ হয়ে তারা যাত্রা করেন। নৌকা দুটি পাশাপাশি চলছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর দুই নৌকার যাত্রীদের মধ্যে কামরাঙ্গা ভাগাভাগি হয়। এ সময়ই একটি নৌকা উল্টে যায়। নৌকাটিতে ২০-২২ জন ছিলেন। তারা সবাই পানিতে পড়ে যান। অনেকে সাঁতরে এবং নৌকা ধরে থাকলেও পাঁচজন তলিয়ে যান।

আবদুর রহিম নামে আরেকজন বলেন, আমরা চট্টগ্রাম প্যাসিফিক জিন্স গার্মেন্ট থেকে প্রায় ৫০ জনের একটি দল রাঙ্গামাটি পিকনিকে আসি। কথা ছিল সবাই একসঙ্গে ঝুলন্ত সেতু দেখতে যাব। কিন্তু কোনো কিছুই হল না। ফিরতে হচ্ছে শোক নিয়ে।

উদ্ধারকারী দলের রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্ঘটনার শিকার লোকজনকে উদ্ধারে দুর্ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের ডুবুরি নেই। উদ্ধার দলে যারা ছিলেন, তাদেরকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাৎক্ষণিক পানিতে নামিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাই। পরে একে একে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করি। তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি।

রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, মূলত অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে নৌকাটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এছাড়া নৌকাটির ফিটনেস আর অনুমোদন কোনোটিই নেই।

রাঙ্গামাটি যাত্রীকল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, ফিটনেসবিহীন সব ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি। তা না হলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনাস্থল গিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। চোখের সামনে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করতে দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে পড়ি। যতটুকু জানতে পেরেছি, দুটি নৌকা পাশাপাশি যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে দুই নৌকার লোকজন কামরাঙ্গা ভাগাভাগি করছিলেন। ঠিক তখনই একটি বোট নৌকা উল্টে যায়। ওই ধরনের ছোট নৌকায় ছাদ থাকতে পারবে না। তা নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে। ফিটনেসবিহীন সব ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।

এদিকে এদিন সকালে জেলার কাপ্তাই উপজেলা সদরের কর্ণফুলী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে ধর্মীয় উৎসব পালনকালে নৌকা ডুবে তিন জন নিখোঁজ হন। তারা হলেন- টুম্পা মজুমদার (৩০), তার ছেলে বিজয় মজুমদার (৫) ও দেবলীলা (১০)। এর মধ্যে ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী স্থানীয় ৫৩ জন নৌকায় করে উৎসব পালন করছিলেন। হঠাৎ নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার কেটে পাড়ে উঠতে পারলেও তিনজন নিখোঁজ হন। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, তিনজনের মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলে।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা