

মোঃ ইসহাক মজুমদার , ক্যাম্পাস প্রতিনিধিঃ
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ৩৮ তম ব্যাচের কোম্পনি আইনের বিষয়ভিত্তিক দেওয়ালিকার প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারম্যান তানজিনা আলম চৌধুরী। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রক্টোর জনাব আহমেদ রাজীব চৌধুরী ,সহকারী-প্রক্টোর জনাব হিল্লোল শাহা ,
জনাব অনুপ কুমার বিশ্বাস,জনাব সঞ্জয় বিশ্বাস,জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ,জনাবা মেহের নিগার,জনাবা তাহমিনা সানজিদা , জনাবা তাকমিনা কামাল ,জনাবা হুমায়রা নৌশিন উর্মি, জনাবা ইয়াসমিন ফারজানা , জনাবা মাহবুবা সুলতানা ।
কোম্পানি আইনের শিক্ষিকা মেহেরুন্নেসা বেগমের সভাপতিত্বে এবং ৩৮ ব্যাচের ছাত্র চৌধুরী প্রদ্বীপ বড়ুয়ার সঞ্চালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
দেওয়ালিকা উদ্বোধনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইন অনুষদের চেয়ারম্যান ,জনাবা তানজিনা আলম চৌধুরী সহ বাকি শিক্ষিক-শিক্ষিকাবৃন্দ।
শিক্ষিক-শিক্ষিকার বক্তব্য শেষে, ব্যাচের ছাত্র -ছাএীদের পক্ষ হয়ে, দেওয়ালিকা উপস্থাপন করেন জুনাইদুর রহমান আহাদ ও তির্ণা কানুনগো । তাদের বক্তব্যে দেওয়ালিকার বিষয়বস্তু ,কিভাবে একটি কোম্পানি গঠন হয়ে থাকে ও তার পূর্বে কোম্পানির ইতিহাসটি তুলে ধরা হয়।
জুনাইদুর রহমান আহাদ বলেন ,
দাদ্বশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের ব্যাসায়ীদের দ্বারা গঠিত ‘মার্চেন্ট গির্ল্ড’নামক একটি বণিক সমিতির ধারাবাহিকতাই কোম্পানির জন্ম হয়।
প্রথমে আইনে তাদের নিজেদের দেশে প্রচলন করলেও পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে আইনটি ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের বিভক্তির পর, ১৯৭৩,১৯৭৪ ও১৯৭৭ সালের আইনের সংশোধন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর, আইনের যুগপযোগী
করার লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে ‘ ল রিফর্মস’ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন প্রণীত হয়,যা সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা ১৯৯৫ সালে ১লা জানুয়ারি
হতে কার্যকর করা হয়।এই আইনে সর্বমোট ৪০৪টি ধারা এবং ১২টি তফসিল সন্নিবেশিত করা হয়।
বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৯৪সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোম্পানি বলতে, আইনের আওতায় গঠিত ও নিবন্ধিত কোম্পানি বা বিদ্যমান কোম্পানিকে বুঝায়।
এ আইনের আওতায়,কোম্পানির যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যা আমাদের দেওয়ালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কোম্পানিকে নানাভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হলেও আজ আমরা দুই ধরনের কোম্পানির কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
১,পাবলিক কোম্পানি- নূন্যতম ৭জন এবং সর্বোচ্চ শেয়ার দ্বারা সীমাবদ্ধ, শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য, জনসাধারণের কাছে শেয়ার ও ঋণপএ বিক্রয়যোগ্য,
এবং ১টি চিরন্তন অস্তিত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত,
সে কোম্পানিকে পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড বলা হয়।
২প্রাইভেট কোম্পানি-সদস্য সংখ্যা ২থেকে ৫০জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে,
যারা ক্রয়কৃত শেয়ার হস্তান্তর করতে পারে না ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ডিবেন্ঞার ক্রয় করার জন্য জনগনের কাছে বিবরণপএ উপস্থাপন করতে পারে না,
তাকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলা হয়।
মূলত, কোম্পানি গঠনে ৩ধরনের ধাপ বিদ্যমান।
promotion of company
Registration and incorporation of a company
commencement of business
promotion of company
promotion of Company- বলতে, কোম্পানি গঠনের পূর্ব প্রস্তুতিককে বোঝায়।
এ ধাপে, promoters/ প্রবর্তক বিদ্যমান থাকেন, যারা কোম্পানি গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করে, ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র প্রস্তুত, মূলধন সংগ্রহ ও প্রাথমিক ঝুকিঁ বহন করেন।
যেহেতু কোম্পানি একটি কৃএিম বস্তু,
তাই promoters/ প্রবর্তকেরর মাধ্যমে কোম্পানির জন্ম হয়ে থাকে।
2,Registration and incorporation of a company- promoters / প্রবর্তকরা কোম্পানির জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রস্তুত করেন তার মধ্যে স্মারকলিপি ও পরিমেল নিয়মাবলী অন্যতম।
স্মারকলিপি/ memorandum of association- স্মারকলিপি বলতে কোম্পনির সংবিধানকে নির্দেশ করে কারণ এটি কোম্পানির ভিত্তি বা কাঠামো তৈরি করে। ১৯৯৪ সালেন আইননুসারে,
যেখানে একটি কোম্পানির গঠন, উদ্দ্যেশ ও কার্যাবলি সম্পর্কিত মৌলিক বিধানগুলো প্রকাশ হয়ে থাকে, যার উদ্দ্যেশ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, পাওনাদার, এবং কোম্পানির সাথে
লেনদেনকারী ব্যক্তিদেরকে কোম্পানি অনুমোদিত উদ্যোগ আত্ততা সম্পর্কে জানান।
আইনের ৬ধারায় স্বারকলিপিতে বিষয়বস্তু সম্পর্কিত যে ধারা প্রযোজ্য হবে-
নাম ধারা।
অবস্থান ও ঠিকিনা ধারা।
উদ্দ্যেশ ধারা।
দায় ধারা
মূলধন ধারা
ও সম্মতি ধারা।
তির্ণা কানুনগো তার উপস্থাপনায় বলেন ,
২য় গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি হলো, পরিমেল নিয়মাবলি বা article of association- এতে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ করা হয়।
এ দলিলে কোম্পানির পরিচালক ও কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক,ক্ষমতা, অধিকার,দায়িত্ব-কর্তব্য, কোম্পানির মূলধের পরিমাণ, শেয়ার মালিকদের ক্ষমতা, শেয়ার সংখ্যা,
পরিচলকের যোগ্যতা ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। পাবলিক কোম্পানির ক্ষেএে, আইনে বর্ণিত তফসিল-১ কে কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলী হিসেবে ধরা হয়।
ইতিহাসের পাতায়, ইংল্যান্ডদের রাজা কিং জনের স্বাক্ষরিত ম্যাগনা কার্টা চুক্তিকে বর্তমানের পরিমেল নিয়মাবলী বলা হয়ে থাকে।
এটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১২১৫খ্রিস্টাব্দে। ইংল্যান্ডদের কাছে একটি দ্বীপে তার সামন্তরা তাঁকে এ চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল।
এ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে রাজাদের শাসনে একটি শৃঙ্খলে আবধ্য করেন। ইতিহাসে বিখ্যাত এ আইন স্বাক্ষরিত রাজা কিং জন ইতিহাসে একজন খলনায়ক।
ম্যাগনা কার্টা চুক্তি দ্বারা রাজা ও প্রজাদের মধ্যে ক্ষমতার পরিমাণ সমান করা হয় এবং সকলের অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য উল্লেখ করা হয়।
যা ১৯৯৪ সালের আইননুযায়ী পরিমেল নিয়মাবলীতেও প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
স্মারকলিপি ও পরিমেল নিয়মাবলী ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো, বিবরণপএ/ prospectus-এ দলিলের মাধ্যমে প্রবর্তকরা জনসাধারণকে শেয়ার ক্রয় করার জন্য আমন্ত্রন জানিয়ে থাকে, যা মূলধন সংগ্রহের হাতিয়ার। তাই বিবরণপএে কোম্পানি সম্পর্কিত সকল তথ্য লিপিবদ্ধ থাকবে জনগনের কোম্পানি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার উদ্দ্যেশে।
Certificate of incorporation/কোম্পানির নিবন্ধনপএ- দেওয়ালিকায় অন্তর্ভুক্ত, কোম্পানির নিবন্ধনপএ ও কোম্পানির জন্য প্রয়োজনীয় দলিল।
যে পত্রের মাধ্যমে কোম্পানি অস্তিত্ব লাভ করে থাকে।১৯৯৪ সালের আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি কোঃ নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক।কোম্পানির প্রবর্তকরা নিবন্ধকের
কাছ থেকে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সহ জমা দিবেন,এবং নিবন্ধক যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে কোঃ নিবন্ধন পত্র ইস্যু করবেন।
উল্লেখিত বর্ণনানুযায়ী একটি কোম্পানি গঠন হয়ে থাকে। কিন্তু তা শুধু প্রাইভেট কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য, নিবন্ধনপএ পাওয়ার পর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে কার্য শুরু করার
একটি অনুমতিপত্র গ্রহণ করতে হবে, যাকে কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র / commencement of business বলা হয়।সুতরাং বর্ণিত উপায়ে কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে কোম্পানির সূচনা হয়ে থাকে।বর্তমান সরকার ১৯৯৪ সালের আইনের আরো একটি সংশোধনীর প্রস্তাব রাখে। যা ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক কালেরকন্ঠ পএিকায় প্রকাশিত হয়।
শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে উক্ত দেয়ালিকায় শুভেচ্ছা স্বাক্ষর করেন অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ।

চেয়ারম্যান ,জনাবা তানজিনা আলম চৌধুরী
প্রক্টর ও সহকারী অধ্যাপক জনাব আহমেদ রাজীব চৌধুরী

সহকারী অধ্যাপক জনাব অনুপ কুমার বিশ্বাস
পরিশেষে, দেওয়ালিকা সম্পর্কিত ছা্ত্র-ছাএীদের উদ্দ্যেশে বক্তব্য প্রদান করেন,শিক্ষিকা মেহেরুন্নেসা বেগম।