বাংলাদেশ, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

গৃহকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২০-০১-১২ ০৮:৫৩:৫৬  

আমার পরিচিতি এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বাসায় এক মহিলা কাজ করেন।তিনি সম্মানিত কৃষক পরিবারের মেয়ে। অল্প বয়সে তার পিতা মারা গেছেন। পরে আর্থিক দৈন্যের কারণে অন্যের বাসায কাজ নিয়েছেন। তার বয়স প্রায় চল্লিশ বছর। কিন্তু বাসার মালিকের ছেলেমেয়েরা তাকে ‘তুমি’ বলে, ‘বুয়া’ বলে। যতটা জানি, বুয়া শব্দটি তুচ্ছার্থেইব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আমাদের দেশে বাসায় যারা কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগই কিশোরী বা মোটামুটি বয়স্ক নারী। তাদের বেশির ভাগই গ্রামেরকৃষক পরিবার থেকে এসেছেন। কৃষক সমাজ আমাদের দেশে সবচেয়ে সৎ
সমাজ। আমার মনে হয়, তাদের মধ্যে দুর্নীতি কম। কৃষক পরিবার থেকে আগত এসব মহিলা বা গার্হস্থ্য কর্মচারীর নাম ‘বুয়া’ হবে কেন? এটিও একটি কাজ বা জব যা ঘরে করা হয়। এটি বাইরের সার্ভিসের
মতোই একটি সার্ভিস বা পরিসেবা। কেন তাদের নাম গৃহ ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক হতে পারে না? রাসূল সা: এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল, তা আমাদের জানা উচিত। তিনি গৃহকর্মীকে আমার কন্যা বা আমার পুত্র বলতেন। আমরা যদি রাসূল সা: এর কাজের আলোকে দেখি, তাহলে আজকে যাদের আমরা গৃহভৃত্য বা চাকর মনে করি, তাদের পদবির অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া দরকার। যারা বাসায় সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করেন তাদের বেতন কিন্তু অনেক কম। তাদের বেতন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা হওয়া উচিত। অথচ তাদের বেতন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ হাজারেরও কম। আমি নিজের কাজের লোকের
বেতন বাড়িয়ে দিলে অন্যরা আপত্তি জানিয়ে বলে, আমি মার্কেট খারাপ করে দিচ্ছি। এতে তাদের অসুবিধা হবে। যেসব গৃহকর্মী সার্বক্ষণিকভাবে নয় বরং তিন-চার ঘন্টা হওয়া উচিত। বাসায় যারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করেন, তাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক ভাগে রয়েছেন সার্বক্ষণিক কর্মী। তারা সারা দিন কাজ করেন এবং সাধারণত ওই বাসায় থাকেন। দ্বিতীয় একদল গৃহকর্মী যারা তিন-চার
ঘন্টা কাজ করেন এবং বাসায় থাকেন না বরং নিজেরে বাসায় থাকেন।

প্রথম দলের সম্পর্কে বলতে চাই, তারা অল্প বয়স্ক হতে পারে অথবা মধ্য বয়সের হতে পারেন অথবা বৃদ্ধ হতে পারেন। বর্তমানে তাদের সারা দিন কাজ করতে হয়। কাজের সময় হতে পারে সকাল ৬ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত (১৬ ঘন্টা)। অথচ তাদের বিশ্রামের কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, তাদের দুপুরে বা বিকেলে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ দেয়া হয় না। অথচা মালিকেরা
ইচ্ছামতো ঘুমাতে পারেন। এই কর্মীদের কোনো ছুটি নেই। না সাপ্তাহিক না বার্ষিক, না অন্য ধরনের। তাদের যে খাবার দেয়া হয়, এর মান
অনেক সময় মালিকের খাবারের মান থেকে নিচু হয়। এমনকি তাদের অনেক ক্ষেত্রে বাসি পান্তা খেতে হয়। তাদের ওপর অনেক সময় নানা নির্যাতনের শিকার হয়, যা সচরাচর
মিডিয়াতে প্রায় সময়েই দেখা যায়। এসব কারণে অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অনেকে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন।

অন্য দিকে, যারা তিন চার ঘন্টা কাজ করেন তাদের বিশ্রামের দরকার পড়ে না। কিন্তু তাদের জন্যও একবেলা খাবারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। গৃহকর্মী ও শ্রমিকের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্ঠিভঙ্গিও পরিবর্তন হওয়া দরকার। কারখানা শ্রমিকের চলার মতো বেতন দিতে হবে। শ্রমিক অধিকার না মুনাফা,কোনটা বড়? আমার মতে, শ্রমিক অধিকার। আমাদের গৃহকর্মীর প্রতিআচরণ কেমন হবে এবং তার অধিকার সম্পর্কে গৃহকর্মী খসরা:বাংলাদেশ অসংখ্যা মানুষ গৃহকর্মী হিসেবে দেশে-বিদেশ বাসাবাড়িরকাজে নিয়োজিত রয়েছে যাদের সিংহভাগই হচ্ছে কিশোর-কিশোরী ওশিশু।

নিবন্ধন না থাকায় তাদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় না।জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় ২৩, ২৪ ও ২৫ অনুচ্ছেদে শ্রমিকের মানবাধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সকল কর্মী বা শ্রমিকের
সমমজুরি, বিশ্রাম, অবসয়, যুক্তিযুক্ত কর্মঘন্টাসহ শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার্থে সকল অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যুক্তিযুক্ত মজুরির
বিনিময়ে কাজের নিশ্চয়তা এবং যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন, অবকাশ ও প্রয়োজনীয় সামাজিক নিরাপত্তার অধিকারকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের মুলনীতি হিসেবে বিধৃত হয়েছে। এছাড়াও সকল নাগরিক সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী প্রত্যোক মানুষের এই সার্বজনীন অধিকারটি আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

শ্রমজীবি মানুষের আইনী সুরক্ষা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ বলবৎ রয়েছে। কিন্তু এ আইনে গৃহশ্রম এবং গৃহকর্মীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। যদিও নাগরিকের যে কোনো অনগ্রসর অংশের
অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়নের সুযোগ সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদে রয়েছে। নি¤œবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত- এসব পরিবারের অপরিহার্য কাজসমূহ সম্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সত্বেও এসকল গৃহকর্মীর মৌলিক ও মানবাধিকার নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সরকার গৃহশ্রমে নিযুক্ত এ বিপুল জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় গৃহশ্রম বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের প্রথম ধাপ হিসেবে নিয়োগকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ও গৃহকর্মীদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের প্রযোজনীয়তা অনুভব করছে। এ নীতিমালা গৃহকর্মে নিয়োজিত কর্মীদের এ নীতিমালা গৃহকর্মে নিয়োজিত কর্মীদের নিবন্ধন, কাজের শর্ত ও নিরাপত্তা, শোভন কর্মপরিবেশ, মজুরি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা, নিয়োগকারী ও গৃহকর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক সমুন্নত রাখা এবং কোন অসন্তোষ সৃষ্টি হলে তা নিরসনে দিক নির্দেশনা প্রদানসহ আমাদের সংবিধানে সমঅধিকার এবং সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিতকরনের মূলনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন দেশকে এগিযে নিয়ে যাবে।

গৃহকর্মী: “গৃহকর্মী” বলতে অন্যের বাড়িতে যিনি মৌখিক বা লিখিত যেভাবেই নিয়োগলাভ করুন গৃহকালীন নিয়োগকৃত ব্যক্তি বা কর্মী। নিয়োগকারী: “নিয়োগকারী” অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যিনি গৃহকর্ম
বা পরিবারিক কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ করেন। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ : দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নিয়োগ সহয়তাকারীদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন থেকে গৃহকর্মী সরবরাহের ক্ষেত্রে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই নীতিমালা হিসেবে গণ্য হবে।

নীতিমালা বাস্তবায়নে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রনালয় ও বিভাগসমূহ সহযোগিতা প্রদান করবে। এ সম্পর্কিত কোন ব্যাখ্যা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রদান করবে।
ক) নিয়োগকর্তার দায়িত: প্রত্যেক নিয়োগকারী তার গৃহ
নিয়োগকৃত গৃহকর্মীর বিষয়ে আচরণ বিধিতে উল্লেখিত দিক
নির্দেশনাসমূহ অনুসরণ করবেন:

অভিভাবকের সাথে চুক্তি:

গৃহকর্মে কিশোর বা কিশোরী (১৪ থেকে ১৮
বছর) নিয়োগ করতে হলে অভিভাবকের সাথে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হলে নিয়োগে
ইচ্ছুক ব্যক্তির সাথে নিয়োগকর্তার চুক্তি থাকতে হবে এবং উক্ত চুক্তিতে
উভয় পক্ষের নাম ঠিকানা ও স্বাক্ষরসহ নি¤েœাক্ত শর্তসমূহ উল্লেখ থাকতে
হবে:

নিয়োগের ধরণ, মজুরি, কর্মঘন্টা, বিশ্রামের সময় ও ছুটি, লেখা-পড়ার ব্যবস্থা, কাজের ধরন, থাকা-খাওয়া ইত্যাদি।উল্লেখ যে, অভিভাবকহীন কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে
লিখিত অবহিতকরণ চুক্তি বলে গণ্য হবে। নিয়োগ ও পরিচয় পত্র: প্রত্যেক নিয়োগকারী কর্তৃক পূর্ণকালীনগৃহকর্মীকে নিয়োগ এর সাথে সাথে তাকে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান
করবেন। পরিচয়পত্রের একটি কপি নিয়োগকর্তা সংরক্ষণ করবেন এবং একটি কপি নিবন্ধ কর্তৃপক্ষকে প্রদান করবেন। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অনুলিপি সমাজকল্যাণ দপ্তর/থানা/স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/কমিশনার কার্যালয় এ পাঠাতে হবে।

নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ: পরিচয়পত্রে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃক প্রত্যেক গৃহকর্মীকে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট নিবন্ধন করাবেন এবং
নিয়োগকর্তা উক্ত নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করবেন। নিয়োগকারীকে গৃহকর্মীর চাকুরির শুরু ও অবসান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথসময়ে নিবন্ধনকারী
দফতরে অবহিত করতে হবে।
মজুরি: মজুরি নির্ধারণ না করে কোন গৃহকর্মী নিয়োগ করা যাবে না।মজুরি অবশ্যই অর্থে নির্ধারিত হবে।

মজুরি প্রদান: নিয়োগকারী কর্তৃক গৃহকর্মীকে মজুরিকাল শেষ হওয়ারপরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে মজুরি পরিশোধ করতে হবে। নিয়োগকারীগৃহকর্মীর জন্য উৎসব ভাতা এবং বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করবেন।গৃহকর্মী ব্যতিত অন্য কাউকে গৃহকর্মীর প্রাপ্য মজুরি প্রদান করা যাবে না।

পূর্ণকালীন গৃহকর্মীর মজুরি: গৃহকর্মীর জন্য সরকার কর্তৃক ন্যুনতম মজুরি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষের আলাপ-অলোচনার ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। প্রত্যেক নিয়োগকারী চুক্তিতে উল্লেখিত মজুরি পরিশোধ করবেন। গৃহকর্মী ব্যতিত অন্য কাউকে তার প্রাপ্য মজুরি প্রদান করা যাবে না। গৃহকর্মীদের জন্য সরকার কর্র্তক ন্যূনতম মজুরি ঘোষিত হলে নিয়োগকারী তদনুযায়ী মজুরি প্রদান করবেন। শ্রমিকের ভরণ-পোষণ,থাকা ও চিকিৎসা ইত্যাদি ব্যয় নির্ধারিত মজুরির অতিরিক্ত বলে গণ্য হবে।

খন্ডকালীন গৃহকর্মীর মজুরি: খন্ডকালীন গৃহকর্মীর মজুরি ওপরে বর্ণিত
পদ্ধতিতে কাজ বা ঘন্টার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। যদি কোন
গৃহকর্মীকে আবাসন, খাবার প্রদান করা হয় তা মজুরির অতিরিক্ত বলে গণ্য
হবে।
কর্মঘন্টা, ছুটি ও বিশ্রাম: গৃহকর্মীর কর্মঘন্টা বিষয়েআন্তর্জাতিক শ্রম মান ও দেশীয় আইন অনুসরণ করতে হবে। প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘন্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যাতে তিনি ঘুম ও বিশ্রামের জন্য রাতে নুন্যতম ৮ (আট) ঘন্টা ও দিনে কমপক্ষে ৪ ঘন্টা বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য বিরতি পান। প্রত্যেক গৃহকর্মীকে সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন ছুটি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। কোন গৃহকর্মীকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন কাজে বাধ্য করা যাবে না। গৃহকর্মীর অভিভাবকের ও নিয়োগকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে সাপ্তাহিক ছুটির দিন গৃহকর্মীকে বাইরে যেতে দেয়া যাবে। তবে তা গৃহকর্মীর ইচ্ছার ওপর নির্ভারশীল।
গৃহকর্মীর বাৎসরিক ছুটি এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হতে যাতে স্ব-স্ব ধর্মীয় উৎসবসমূহ। বা এর অব্যবহিত পরে প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের
সাথে মিলিত হওয়ার জন্য বছরে মোট ২ সপ্তাহ (১৪ দিন) ছুটি ভোগ করতে পারেন। গৃহকর্মীর ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্থান নিশ্চিত করতে হবে।

গর্ভকালীন ও প্রসূতিকালীন সুবিধা: গর্ভবতী নারী গৃহকর্মীকে তার গর্ভকালীন ও প্রসূতিকালীন সময়ে মোট ১৬ (প্রসবের পূর্বে ৬ সপ্তাহ এবং প্রসবের পরে ১০ সপ্তাহ) সপ্তাহ সবেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি,
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ভারী কাজ থেকে বিরত রাখা এবং বিশ্রামের সুযোগ প্রদান করতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: গৃহকর্মীর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তার আগ্রহ অনুযায়ী
নিয়োগকারী কর্তৃক নিজ উদ্যোগে নিজ আবাসস্থলে বা সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। নিয়োগকারী কর্তৃক গৃহকর্মীর
স্ব-স্ব ধর্মের মৌলিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানে নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা: অসুস্থ অবস্থায় গৃহকর্মীকে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না।
তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ব্যয়ভার নিয়োগকারী বহন করবে। অসুস্থতার সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে গৃহকর্মীকে, বাড়ি পাঠানো যাবে না।

দূর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ: কর্মরত অবস্থায় কোন গৃহকর্মী দূর্ঘটনার শিকারহলে যথাযথ চিকিৎসাসহ দূর্ঘটনা ও ক্ষতির ধরণ অনুযায়ী নিবন্ধন কর্তৃৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে মহানগর এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের

আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্র্তৃক ধার্যকৃত
নিয়োগকারী কর্তৃক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের দায়িত্ব:
নিবন্ধন:
 সরকার কর্তৃক সার্কুলার/দাপ্তরিক আদেশ/পরিপত্র এর মাধ্যমে স্থানীয়
প্রশাসনকে গৃহকর্মীর নিবন্ধন
 প্রদানে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতিটি
অঞ্চলের জন্য নিবন্ধন কর্র্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট করবেন।
 সরকার আচরণবিধি জনগণের নিকট প্রচারের জন্য তথ্য ও গণমাধ্যমকে
কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
 সরকার গৃহকর্মীদের সহায়তার জন্য হেল্প লাইন সিস্টেম চালু করার
উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
 সরকার আচরণবিধি বাস্তবায়ন ও গৃহকর্মীদের অধিকার সম্পর্কে
সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্বুদ্ধকরণ।
 কর্মসূচি পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
মজুরি নির্ধারণ:
 সরকার গৃহকর্মীর জন্য নূন্যতম মজুরি ঘোষনা করবেন এবং উক্ত মজুরি
মাসিক ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
 প্রত্যেক গৃহকর্মীর জন্য মজুরির পরিমাণ ও মেয়াদ উল্লেখসহ একটি
মজুরি কার্ড থাকবে। প্রতি বারে মজুরি প্রদানের সময় মজুরি
কার্ডে শ্রমিক ও নিয়োগকারীর স্বাক্ষর থাকতে হবে।
 নিয়োগকারী অভিভাবকহীন কিশোল-কিশোরী গৃহকর্মীর মজুরি তার
সম্মতিক্রমে ব্যাংকে জমা রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে যাতে
গৃহকর্মী সঞ্চয়ে উদ্ব্ধুসঢ়;দ্ধ হয়।
নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা:
 গৃহকর্মীর প্রতি কোন প্রকার অশালীন আচরণ করা যাবে না এবং
কোন প্রকার দৈহিক আঘাত ও নির্যাতন করা যাবে না।
 গৃহকর্মীর ওপর কোন রকম হয়রানি ও নির্যাতন এর ক্ষেত্রে সুবিচার
নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকারের ওপর বর্তাবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে শ্রম ও
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র এবং
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ও সুস্পষ্ট নির্দেশবলী প্রদান করবে।
 কোন গৃহকর্মী নিয়োগকারী পরিবারের সদস্য বা আগত অতিথিদের
দ্বারা কোন প্রকার শারীরিক ও মানসিক, যৌন নির্যাতন বা অশ্লীল

আচরণের শিকার হলে নিয়োগকারী মানসিক, যৌন নির্যাতন বা
অশ্লীল আচরণের শিকার হলে নিয়োগকারী আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত
করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন, যেমন- থানায় জিডি বা
মামলা করা, তদন্তকারীর নিটক ঘটনার কারণ, পূর্বাপর পরিস্থিতি,
প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সহায়তা করে অপরাধ
দমনে সহযোগিতা করতে হবে।
 সংশ্লিষ্ট থানা যেন দ্রুত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করে সেজন্য
দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক
দাপ্তরিক নির্দেশনা জারি করবে।
 দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় গৃহকর্মীর প্রতি নির্যাতনের প্রতিকারে
আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে সরকারের কর্মকৌশল গ্রহণ করবেন।
পরিদর্শন:
 শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং
সেল, ঢাকা সিটি কর্পোরশেন এর ক্ষেত্রে আঞ্চলিক নিবার্হী
কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট
পৌরসভায় জেলা প্রশাসক মনোনীত প্রতিনিধির নেতৃত্বে
প্রয়োজনীয় সংখ্যাক মনিটরিং সেল গঠিত হবে।
 প্রতি জেলার জেলা, প্রশাসক ও প্রতি উপজেলায় ইউএনও-এন নেতৃত্বে
মনিটরিং সেল গঠিত হবে। মনিটরিং সেল কর্তৃক জেলা এবং উপজেলা
পর্যায়ের মালিক, শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয়
সরকারের প্রতিনিধির সমন্বয়ে পরিদর্শন টিম গঠিত হবে। তবে
জেলা/উপজেলা মনিটরিং সেল প্রয়োজন মনে করলে ইউনিয়ন পর্যায়ে
এক বা একাধিক পরিদর্শন টিম গঠন করতে পারবে।
 পরিদর্শন টিম সময় সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহকর্মীর প্রকৃত
অবস্থা পরিদর্শন করবেন এবং কোন অভিযোগ প্রাপ্ত হলে বা
নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিদর্শন প্রতিবেদনের
মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের প্রধানকে
অবহিত করবেন।
 নিয়োগকারীকে আচরণবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে মনিটরিং টিম
সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবেন।
অভিযোগ প্রাপ্ত হয়ে পরিদর্শন শেষে পরিদর্শন টিম-এর প্রকৃত
প্রতিবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাতে
দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে তার জন্য পরিদর্শন টিম সক্রিয়
ভূমিকা গ্রহণ করবেন, তবে প্রয়োজনে
সালিশের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারি বিভাগ, প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন টিম স্ব-স্ব
উপজেলা, জেলা পর্যায়ে প্রশাসকের
নিকট প্রতিবেদন পেশ করবেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় মামলা
দায়েরের ব্যবস্থা করবেন।
অভিযোগ জানানো:
 কোন গৃহকর্মী তার নিয়োগকারী অপর পক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত আচরণ
বিধি ভঙ্গের অভিযোগ বা অন্য কোনভাবে নির্যাতন বা বঞ্চনার শিকার
হলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মনিটরিং সেল/সংশ্লিষ্ট
দপ্তর/মানবাধিকার ও শ্রমিক সংগঠনসমূহে টেলিফোন বা লোক মারফত
বা চিঠির মাধ্যমে বা দরখাস্ত বা আবেদনের মাধ্যমে বা ব্যক্তিগতভাবে
হাজির হয়ে, মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করতে
পারবেন। সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত গৃহকর্মীদের সহায়তার জন্য হেল্প
লাইন সিস্টেমের মাধ্যমেও অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।
 নীতিমালায় যাই থাকুক না কেন গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায়
ফৌজদারী মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা/প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে
না।
 ১৪ বছরের নীচে কোন শিশুকে গৃহকাজে নিযোগ করা যাবে না। তবে
বিশেষ অবস্থায় ১২ বছর বয়ঃপ্রাপ্ত কোন শিশুকে গৃহকাজে নিয়োগ
করা যাবে যা তার স্বাস্থ্য ও উন্নতির জন্য বিপজ্জনক নহে, অথবা যা তার
শিক্ষা গ্রহণকে বিঘিœত করবে না। শিশু যদি বিদ্যালয়গামী হয তাহলে
তার কর্মসময় এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন এটি তার বিদ্যালয়
গমনকে বিঘিœত না করে।
 কোন গৃহকর্মীকে তালা বন্ধ করে রাখা যাবে না। তবে তার নিরাপত্তার
কথা বিবেচনা করে বাড়ি তালাবদ্ধ করতে হলেও একটি চাবি তার নিকট
রাখতে হবে যাতে আকষ্মিক দুর্ঘটানায় সে প্রতিবেশীর সহায়তায়
বাড়ির ভেতর থেকে বের হতে পারে।
 বয়স ও সামর্থ্যরে সাথে অসামঞ্জস্য বিবেচিত কোন ভারী ও বিপদজনক
কাজে কিশোর কিশোরী নিয়োগ করা যাবে না।
 কোন গৃহকর্মীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়োগ করা যাবে না এবং
কোন ধরনের অনৈতিক কাজ করানো যাবে না বা উদ্বুদ্ধ বা প্রস্তাব
করা যাবে না।

সানজিদা, সজিব, নাজিম, তিশা,

আনিকা, পিয়াল
আইন বিভাগ, ৩৮ তম ব্যাচ
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা