বাংলাদেশ, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

অরিত্রীকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছেন শিক্ষকরাই

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-১১-২৫ ১৮:১২:৩৩  

নাঈম হাছান জামি:

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

সোমবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলমের আদালতে তিনি এ সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। তবে এ জেরা শেষ না হওয়ায় আদালত ২ ফেব্র“য়ারি পরবর্তী জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।

আদালতে দিলীপ অধিকারী বলেন, অরিত্রী খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিল। কোনোদিন তার জন্য আমাকে স্কুলে যেতে হয়নি। ১৪ বছরের মেয়ের সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করেছে তার শিক্ষিকারা। বাবা-মার অপমান সহ্য করতে না পেরে অরিত্রী আত্মহত্যা করেছে। আমার সন্তানকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছেন তারাই (শিক্ষকরা)।

তিনি বলেন, ২ ডিসেম্বর ভুলবশত অরিত্রী বাসার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন স্কুলে নিয়ে যায়। সেদিন তার সমাজ পরীক্ষা চলছিল।

পরীক্ষার শেষে দিকে শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেন। পরদিন অরিত্রীকে অভিভাবক নিয়ে স্কুলে যেতে বলেন। অরিত্রী বাসায় এসে আমাদের বিষয়টি জানায়। পরদিন স্ত্রী বিউটি অধিকারীসহ আমরা স্কুলে যাই। শিক্ষিকা হাসনা হেনা আমাদের অধ্যক্ষের রুমের সামনে অভিভাববদের ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখেন। বেলা ১১টার দিকে শাখা প্রধান জিনাত আক্তারের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। রুমে যাওয়ার পর তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আপনার মেয়েকে টিসি দেয়া হবে। অরিত্রীর অপরাধ ক্ষমা করে তাকে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতে আমরা তিনজনই তাকে অনুরোধ করি।

তিনি বলেন, ডিসিশন হয়ে গেছে টিসি দিয়ে দেব। জিনাত আক্তারের কাছ থেকে পরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসের কাছে যাই। তার রুমে গিয়ে মেয়ের জন্য ক্ষমা চাই ও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করি। আমার সামনে অরিত্রীর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন তিনি। এরপর তিনি আমাদের রুম থেকে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পর আমরা আবারও তার রুমে যাই।

তখন তিনি বলেন, আবার কেন এসেছেন? এর কিছুক্ষণ পরই লক্ষ্য করি অরিত্রী সেখানে নেই।

তিনি আরও বলেন, স্কুলে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাসায় চলে আসি। এসে দেখি অরিত্রী বাসায়। দুপুর ১টার দিকে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই। বেলা ৩টার দিকে আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে বলে, অরিত্রী রুমের দরজা খুলছে না। রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। তখন আমার স্ত্রীকে বাসার কেয়ারটেকারকে ডাক দিতে বলি। কেয়ারটেকারসহ সবাই দরজা খোলার চেষ্টা করেন।

পরে ভেন্টিলেটর দিয়ে কেয়ারটেকার রুমের ভেতরে ঢুকে দেখেন অরিত্রী সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। প্রথমে তাকে কাকরাইল ইসলামিয়া হাসপাতালে নেয়া হয়।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।

৭ অক্টোবর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন আদালত।

এর আগে ১৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম আদালতের মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখা প্রধান জিন্নাত আরাকে আসামি করা হয়। চার্জশিটে ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা