বাংলাদেশ, , মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

মায়ের সেবা করে ‘মমতাময়’ খেতাবে ভূষিত হলেন যুবক সানি

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-১০-০২ ১৪:৫২:২৫  

বিশেষ প্রতিবেদকঃ

জন্ম দিয়ে বড় করা এবং স্বাবলম্বী হওয়া সন্তাদের পুরো দায়িত্ব পালন করেন পিতা-মাতা। সন্তানদের জন্য তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করেন। আবার পিতা-মাতা যখন অক্ষম হয়ে যায় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সন্তাকেই পুরো দায়িত্ব কাঁদে নিতে হয়। এটাই ধমীয় ও সামাজিক রীতি। কিন্তু অনেক সময় রীতির ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে। বার্ধক্য বা অসুস্থতাসহ অন্য কোনো কারণে অক্ষম পিতা-মাতাকে অনেক সন্তান সেবা ও দেখভাল করে না। কিন্তু অধিকাংশই সন্তানই পিতা-মাতার সেবা ও দেখভালো করে। এই ভালো সন্তানদের মধ্যে অনেক আছেন একেবারে ব্যতিক্রম। তারা পিতা-মাতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে দেন অনায়সে। বিসর্জন দেন নিজের সুখ ও শান্তি। তেমনি এক যুবক আসাদুল হক সানি। মৃত্যুপথযাত্রী টিউমার আক্রান্ত মাকে দীর্ঘ দুই বছর সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা ও সেবা দিয়ে আবার ফিরিয়ে এনেছেন স্বাভাবিক জীবনে। মায়ের সেবা-যত্নের
স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার ঘোষিত প্রথমবারের ‘মমতাময়’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন সানি।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রশাসকের কাযালয়ের শহিদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এই খেতাবের সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সানিকে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

জানা গেছে, সানির বাবা ২০০৬ সালে মারা যান। মা বিমানবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা হোসনে আরা বেগম, দুই বছর আগে পেটে টিউমার নিয়ে ক্যান্সারের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলেন। চলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর কাছাকাছি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের চিকিৎসায় তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আশা ছাড়েননি ‘মমতাময়’পুত্র সানি। তিনি মাকে বাঁচাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে পড়েন। মাকে নিয়ে গেলেন ঢাকার নামকরা হাসপাতালে। মায়ের রোগের অবস্থা অত্যন্ত জটিল পর্যায়ে চলে যাওয়ায় দেশের প্রধান প্রধান চিকিৎসকদের নিয়ে কয়েকটি হাসপাতালের সমন্বিত চিকিৎসা দেয়া হয়। হয় জটিল অপারেশন। মমতাময় পুত্র সানির মাকে বাঁচানোর ফরিয়াদ আল্লাহ শুনেছিলেন। অপারেশন সাকসেস হয়ে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেছে মা। ধীরগতির চিকিৎসা অব্যাহত রেখে এবং সন্তানের নিরলস সেবা পেয়ে সানির মা আজ শত ভাগ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবুও এখনো প্রতিমাসে তাঁকে চেকআপের জন্য ঢাকা নিয়ে যেতে হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মায়ের অন্তিম মুহুর্তে একটুও দুর্বলবোধ বা অবহেলা করেননি সানি।

যুবক সানি বলেন, বাবাকে হারিয়ে আমরা অনেক একা হয়ে গিয়েছিলাম। মা-ই ছিলো আমরা দুই ভাইয়ের শেষ সম্বল। অসুস্থ হয়ে মাও আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন- তা আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই যেকোনো মূল্যে মাকে বাঁচানোর যুদ্ধে নামি। মাকে বাঁচাতে চিকিৎসা ও সেবার কোনোটির বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখিনি। যখন যা দরকার হয়েছিল, সবই করেছি। অনেক টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু আমার মনস্থির ছিলো নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও মাকে বাঁচাতে হবে। সেভাবে মায়ের চিকিৎসা সেবা করেছি। আল্লাহ আমার মাকে আবারো আমাদের মাাঝে স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই জন্য মহান আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া।

তিনি আরো বলেন, আমরা দুই ভাই। আমার ভাইটা পুরোভাবে স্থায়ী অসুস্থ। তাই মায়ের চিকিৎসা এবং সেবা দুটোই আমাকে একা করতে হয়েছে। সব করেছি নিরলসভাবে। কোনোদিন কখনো ক্লান্তিবোধ হয়নি আমার। প্রতিটি সন্তান যেন মা ও বাবাকে এভাবে যত্নে রাখেন, এটাই আমার প্রত্যাশা। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। মা যেন শতভাগ সুস্থ হয়ে উঠেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,“বয়সের সমতার পথে যাত্রা ” প্রতিপাদ্যে আর্ন্তজাতিক প্রবীন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে র‌্যালী ও এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এনজিও সংস্থা “রিক” এর সহযোগীতায় র‌্যালীটি বের করা হয়।

র‌্যালী শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: মাসুদুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রীতম চৌধুরী, রিক কর্মকর্তা এম এ হালিমসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

এ সময় পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ দেড়শতাধিক প্রবীণ, জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রবীণ হিতৈষীদের মাঝে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। মা-বাবাকে সেবা করতে সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তার জন্য মা-বাবার সেবক সন্তানদের ‘মমতাময় ও মমতায়ী’ খেতাবে ভূষিত করা হচ্ছে। বিশ্ব প্রবীণ দিবস উপলক্ষ্যে এই খেতাব ও সম্মাননা দেয়া হয়।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা