খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত বৃহত্তর ফরিদপুর। একসময় পদ্মা কন্যা খ্যাত এই রাজবাড়ী ছিল বৃহত্তর ফরিদপুরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বৃহত্তর ফরিদপুর থেকে ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে ক্রমান্বয়ে জেলার খেজুরের গুড়ের সেই ঐতিহ্য আজ বিলীয়মান। আছে কেবল নামে। গাছ কমে যাওয়াসহ নানা কারণে ঐতিহ্য হারিয়ে বিলীয়মান খেজুর গুড়। যেন সর্বত্রই ভেজালে ভরপুর।
এক সময় এ জেলা থেকে আশপাশের জেলায় খেজুর গুড় পাঠানো হতো। কিন্তু এখন এ জেলা থেকে পাঠানোতো দূরে থাক নিজের জেলার চাহিদা মেটাতেই অন্য জেলা থেকে গুড় আমদানি করতে হয়। তবে কৃষি বিভাগের দাবি ঐতিহ্য ফেরাতে প্রতি বছর রোপণ করা হচ্ছে খেজুর গাছ।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় শীত মৌসুমে দেশের গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি হতো নানা রকমের বাহারি পিঠাপুলি ও পায়েস। নানা ধরনের পিঠা তৈরিতে খেজুর গুড়ের জুড়ি মেলা ভার। শীতের সময় খেজুর গুড়ের পিঠা তৈরি করে আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত করে খাওয়ানোসহ আত্মীয়বাড়ীতে পাঠানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকজন গাছি জানান, নানা কারণে কমছে গাছ। গাছ কমে যাওয়ায় এখন অনেক দূরে গিয়ে রস সংগ্রহ করতে হয়, যা কষ্টসাধ্য। এছাড়া উৎপাদন খরচ অনুযায়ী মূল্যও পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ গাছিদের।
তারা দাবি করেন, বাজারজুড়ে রয়েছে চিনি মিশ্রিত ভোজাল গুড়। যা প্রতিকেজী মাত্র ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয় গাছি ও গুড় তৈরিকরা পরিবারগুলোকে এক কেজি গুড় উৎপাদনে মান অনুসারে দুইশ থেকে তিনশো টাকা খরচ হচ্ছে। এতে তারা ভেজাল গুড়ের প্রভাবের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। তারপরও এখনো কেউ কেউ তৈরি করছেন উৎকৃষ্টমানের খেজুর গুড়।
পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের খামারডাঙ্গা গ্রামের গাছি চাঁন মিয়া বলেন, এখন আসল খেজুর গুড় পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তারপরেও যদি কেউ আসল গুড় নিতে চায় তাহলে অবশ্যই দ্বিগুণ মূল্য তথা প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দিতে হবে।
গাছি মো. মনিরুল বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে তারা রাজশাহীর চারঘাট থেকে বালিয়াকান্দি উপজেলায় এসে গুড় তৈরির কাজে করেন। এই এলাকা থেকে প্রায় ৫/১০ জন ভাগ হয়ে উপজেলার ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় গাছ কাটেন। এটিই তাদের এ মৌসুমের ব্যবসা। স্থানীয় বাসিন্দাদের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে, তা থেকে পাটালি, গুড় ও স্থানীয় ভাষায় লালিগুড় (জুলাগুড়) তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন।
তিন বলেন, কয়েক বছর থেকে গাছের সংখ্যা কমেছে। এ মৌসুমে প্রায় শতাধিক খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করছি। যে রস সংগ্রহ করি তা দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি পাটালি গুড় তৈরি হয়। এক হাড়ি রস ২৫০ টাকা এবং এক কেজি পাটালি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছি।
পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ বলেন, কয়েক বছর আগেও জেলার বিভিন্ন স্থানে যেদিকে তাকাতাম খেজুর গাছ দেখতাম। শীতের দিনে গাছে গাছে হাঁড়ি দেখতাম। গাছ কাটার কাজ করত গাছিরা। রস কেনাবেচা আর গুড় বানানোর ধুম পড়ত। রসের জন্য মানুষের সিরিয়াল পড়ত। কিন্তু এখন আর সেই চিত্র নেই। রস ও গুড়ে ভেজালে ভরপুর অবস্থা।
পাংশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ততন কুমার ঘোষ বলেন, উপজেলায় মোট ৪ হাজারের বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। এ বছর সঠিক সময়ে শীত পড়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা আগাম খেজুর গাছগুলো প্রস্তুত করে রেখেছেন। এখান থেকে গাছিরা রস আহরণ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। তবে উপজেলার চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা থেকে খেজুরের পাটালি ও গুড় আমদানি করতে হয়।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, এটা ঠিক আগের সেই সুদিন আর নেই। বাজারে ভেজাল ও ভালো গুড় দুটোই আছে। তবে খেজুর গাছ রোপণের পাশাপাশি তার যৌবন ফেরাতে গবেষণার মাধ্যমে অধিক পরিমাণে রস সংগ্রহযোগ্য খাটো জাতের গাছ উদ্ধাবন করা প্রয়োজন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের সবধরনের পরামর্শ ও সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুনতাকিম হোছাইন
বার্তা সম্পাদক: ইকবাল হোছাইন
মেইলঃ bangladeshpaper71@gmail.com
অফিসঃ ০১৮৮-৬৬১০৬৬৬ বার্তা প্রধান ০১৮৫৭৬৭১৯৪৩
কপিরাইট আইন,২০০০ © অনুসারে বাংলাদেশ পেপার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত