বাংলাদেশ, , মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাদকের ব্যবসায় কোটিপতি ফরহাদ-হান্নান

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-১০-৩০ ০৮:৩৫:৪৬  

জসিম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের মধ্যেও চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না মাদক ব্যবসা।

উলটো নতুন ব্যক্তিরা এ ব্যবসায় জড়াচ্ছেন। সম্প্রতি কয়েকটি সংস্থার রিপোর্টে মাদক ব্যবসায় কোটিপতির তালিকায় উঠে এসেছে নতুন নতুন নাম। তার মধ্যে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আতিক ফরহাদ ও কক্সবাজার শহরের হান্নান নামের এক যুবকের নামও উঠে এসেছে।

জানা গেছে, ফরহাদ-হান্নান সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন কক্সবাজার থেকে মাদক এনে চট্টগ্রাম শহরের রিয়াজুদ্দিন বাজারে মজুদ করে। তারা চট্টগ্রামে গড়ে তুলেছেন ইয়াবার বিশাল সিন্ডিকেট। সেখান থেকে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারা দেশে মাদক পাচার করেন তারা। লোকসানের কারণে কক্সবাজার থেকে মোবাইল ফোনের দোকান গুটিয়ে নিলেও ফরহাদ প্রতি সপ্তাহ এক থেকে দুবার মাদকের চালান নিতে কক্সবাজারে আসেন। প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা মানের হোটেলে পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক মাদক কারবারি ও তার বন্ধুরা যোগ দেন।

সরজমিনে জানা গেছে, মাদক বিক্রির টাকায় ফরহাদ দুই কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করছেন রাজকীয় বাড়ি। বিভিন্ন এলাকায় কিনেছেন জমি। কিনেছেন একাধিক মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়ি। নিজ এলাকার পাশে চুনতি ইউনিয়নে হাইওয়ে সড়কের পাশে পরিবারের নামে কোটি টাকায় জমি কিনেছেন। চকরিয়া সিটি সেন্টারে অর্ধ কোটি টাকায় কিনেছেন দুটি দোকান। লোহাগাড়ায় কয়েকজনের সাথে শেয়ারে খুলেছেন চোরাই মোটরসাইকেলের শোরুম। সম্প্রতি মাদক ব্যবসার কথা জানাজানি হলে গা ঢাকা দিতে তার বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত।

এ ছাড়া মাদক ব্যবসা ঢাকতে চট্টগ্রাম শহরে চোরাই মোবাইল ফোনের দোকানে শেয়ারও কিনেছিলেন তিনি। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাগিয়ে নিয়েছিলেন আধুনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদ। চলাফেরা করেন বিভিন্ন ভিআইপিদের সাথে। মাদকের কালো টাকা সাদা করতে তার প্রবাসী বড় ভাই আরফাতের নামে করেছেন সবকিছু।

এলাকাবাসী জানান, ফরহাদের বাবা ভুট্টো কোম্পানি ব্যবসায় একের পর এক লোকসান দিয়ে বাড়িতে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। তার বড় ভাই আরফাত দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ব্যবসা করে কোনো রকমে সংসার চালান। ছোট ভাই রিয়াদ লেখাপড়া করছে। ফরহাদ কক্সবাজারে মোবাইল ব্যবসায় লোকসান দিয়ে কিছু দিন পর সৌদি আরব যান। সেখানে টিকতে না পেরে চলে আসেন দেশে। এসেই কক্সবাজার কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, ইয়াবা ব্যবসার ওপর ভর করে ফরহাদের পুরো পরিবারের ভাগ্য বদলে গেছে। কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার পাশাপাশি গাড়ি, বাড়ি ও অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।

অপর দিকে, হান্নান মাদকের কালো টাকা সাদা করতে সদস্য হয়েছেন লায়ন্স ক্লাব অব কক্সবাজার ফ্রিডমের। এ ছাড়া মাদকের টাকায় কিনেছেন একাধিক মোটরসাইকেল। প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তন করেন দামি ব্র্যান্ডের ফোন। চলাফেরা করেন বিমানে।

এলাকাবাসী জানান, হান্নানকে আগেও দেখেছি বেকার এখনো বেকার। দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই। কয়েক বছর আগে টাকার বিনিময়ে খুব জঘন্য একটি পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নিজকে আড়াল করে রাখেন। তবে হঠাৎ তার এত পরিবর্তন লক্ষণীয়। দামি গাড়ি, দামি মোবাইল, প্রতি সপ্তাহে বিমানে চলাফেরা সত্যি অবাক করার মতো।

জানতে জানতে চাইলে প্রতিবেদকের কাছে ফরহাদ অভিযোগ অস্বীকার করলেও হান্নানের সাথে ওঠাবসার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তার ইয়াবার ব্যবসার কথা শুনেছি। কিন্তু আমি কোনো দিন এ ফাঁদে পা দেইনি। তবে বিলাসবহুল বাড়ি ও কোটি টাকার সম্পদ কেনার অর্থের উৎসের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে হান্নান বলেন, আমার কিছু শক্র আমাকে সমাজের কাজে ছোট করতে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।

কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ফরহাদকে ইয়াবাসহ ধরার জন্য দীর্ঘদিন নজরে রেখেছেন তারা। একবার অভিযান চালালেও বুঝতে পেরে পালিয়ে যান ফরহাদ ও হান্নান।

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু মাদক কারবারি কক্সবাজার থেকে সড়ক ও নৌপথে মাদকের চালান নিয়ে যান বলে তথ্য রয়েছে। এ কারণে নজরদারির পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সূত্রঃ যুগান্তর


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা