কমেক’ হাসপাতাল আলোর মুখ না দেখা দুঃখজনক-স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২২

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেছেন, দেশে ৪৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ চলমান। বছরে ১১ হাজার শিক্ষার্থী চিকিৎসা বিদ্যায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। বেসরকারি ৭২টি মিলিয়ে বিদ্যমান ১১০টি মেডিকেল কলেজকে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরীর নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্টানে রূপ দিতে চাই সরকার। চিকিৎসার মতো মহৎ পেশা পৃথিবীতে আর নেই।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ (কমেক) পরিদর্শন শেষে সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।

তবে, আগে অনুমোদন পেয়েও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ (কমেক) হাসপাতাল আলোর মুখ না দেখা দুঃখজনক বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সভায় কমেক শিক্ষক ডা. শাখাওয়াত হোসেন ও ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের পক্ষে তাজমীর বলেন, ২০০৮ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাস দিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাস মিলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলেও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল না থাকায় ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। আবাসন সমস্যা প্রখট। চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। শুরুতে ৫৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও চলমান সময়ে ৭০ জন শিক্ষার্থী প্রতিবছর ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। পুরোনো শিক্ষার্থী মিলিয়ে সবার আবাসন সংকুলান হচ্ছে না হোস্টেলে। সবকিছু ছাপিয়ে ক্যাম্পাসটি এখন অনিরাপদই বলা যায়। কলেজের লাগোয়া হাসপাতাল না থাকায়, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন শেষে ক্লাসে ফেরা কষ্টকর।

জবাবে মন্ত্রী শিগগিরই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ কাজে হাত দেয়া হবে বলে জানান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কমেকে হাসপাতাল এতদিন না হওয়ার দায় আমাদের। বিদেশি ফান্ডের নির্ভরতায় আমরা ভোগেছি। আশা করছি তা অতিসহসা সমাধান হবে। শুরুতে ৫৮ জনের থাকার ব্যবস্তা করা হয়েছিল, এখন শিক্ষার্থী বাড়ায় আবাসন সমস্যা সমাধানেও কাজ চলছে।

কমেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, মেডিকেল কলেজের সাথে হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন। এখনও কমেকর নিজস্ব হাসপাতাল না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে প্রতিদিন সকাল-বিকাল অস্থায়ী ক্যাম্পাস কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে ক্লাস করতে হয় বলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, কমেকসহ দেশের চার মেডিকেল কলেজের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাসও হয়। ওই প্রকল্পে কমেক’র হাসপাতাল ভবনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ ধরা হয় ৬০০ কোটি টাকা। প্রকল্পে ছিলো, ১০ তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন (প্রতি ফ্লোরে স্পেস হবে ১ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার ফিট), ডক্টরস কোয়ার্টার, নার্সেস কোয়ার্টার, অডিটরিয়াম, কনফারেন্স রুম, আলাদা সড়ক, ছাত্রছাত্রী বাড়লে হোস্টেল নির্মাণ ইত্যাদি। কিন্তু একনেকে পাস হবার পর থেকে দেশের বাকি তিনটি মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালসহ অবকাঠামো নির্মাণ হলেও কক্সবাজার মেডিকেল হাসপাতাল নির্মাণ কার্যক্রম থমকে যায়। এরপরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। এরই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্য উর্ধতনরা আজ (৩ অক্টোবর) কমেকে এসেছেন।

কমেক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমেক। একলেজে এক বছর মেয়াদি হাতে-কলমে শিখনসহ (ইন্টার্নশিপ) স্নাতক পর্যায়ের পাঁচ বছর মেয়াদি ‘এমবিবিএস’ শিক্ষাক্রম চালু রয়েছে; যাতে প্রতি বছর ৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান। বর্তমানে এ মেডিকেলে ৩৪৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কোভিট-১৯ শুরুর পর ১ এপ্রিল ২০২০ হতে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ জন আর.টি.পি.সি.আর পরীক্ষার আওতায় এসেছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের মাধ্যমে কমেকের যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপ দিতে কক্সবাজার সদরের জানারঘোনায় ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ হয়। সীমানা প্রাচীর দিয়ে গড়া হয় মনোরম ক্যাম্পাস। ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, ২টি ছাত্রাবাস ও খেলার মাঠসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তবে অনুমোদন পাওয়া ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি এখনও গড়ে না ওঠায় জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে কমেক শিক্ষার্থীদের।