বাংলাদেশ, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার ছাত্রলীগ: পদ ভাগিয়ে নিতে মরিয়া মাদক মামলার আসামিরা

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-০৯-১৭ ১৫:৩২:৫৬  

জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার :

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ।

অভিযোগ উঠেছে, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির খবরে ‘পদ কিনে’ নিতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন ডজনের বেশি ইয়াবা কারবারি ও বিভিন্ন মামলার আসামিরা।

অভিযোগ আছে, সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ম্যানেজ করতে তাদের অনেকেই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।

তবে, মাদক মামলাসহ যেকোন মামলার আসামি বা বিবাহিত কাউকে পদে আনা হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মাদক মামলা ও বিজিবির ওপর হামলা মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন। ২০১৯ সালে ইয়াবাসহ আটক সহযোগিদের বাঁচাতে বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছিলেন তিনি।

অথচ সেই আনোয়ার ইতিমধ্যে মাদক মামলার বিষয়টি গোপন করে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন।

আনোয়ার উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম ফারির বিল এলাকার বাসিন্দা মৃত আহমদুল্লাহর ছেলে। কয়েক বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন কক্সবাজার মহিলা কলেজের ছাত্রী, স্থানীয় বিএনপি নেতা সোলাইমান মেম্বারের মেয়ে ছমিরা আক্তারকে।

আনোয়ারের ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলি আহমেদ পরপর দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

তবে মুঠোফোন আনোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে মামলাটির তদন্ত রিপোর্ট থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন।

শুধু আনোয়ার নয়, পুরো জেলায় মাদক কারবারি বা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া পরিবারগুলো পদ ভাগিয়ে নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ‘মাইম্যান’ বানাতে মরিয়া আওয়ামী লীগ নেতারাও।

ইয়াবায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে। তার দুই ভাই ইয়াবা মামলার আসামি। তিনি নিজে ছাত্রলীগকর্মীর ওপর হামলার মামলার আসামি।

রায়হান নামে অপর এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। নিজ বাড়ি থেকে অস্ত্রসহ র‍্যাব-১৫ এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রায়হান। শিবিরের সাবেক দুই নেতা দেলোয়ার হোসাইন, মোজাম্মেল হকের ছোটভাই আলমগীরও ছাত্রলীগের নেতা হতে মাঠে নেমেছেন আটঘাট বেঁধে।

টেকনাফ উপজেলার পদ পেতে মরিয়া হ্নীলার তারেক মোহাম্মদ নুর। তার মেঝ বোনের বড় ছেলে সামসুদ্দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি, নুরের ভাগিনা আয়াছ উদ্দিন ৭০ হাজার ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে কারাগারে আছেন। বড় বোনের ছেলে ১০ হাজার ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে কারাগারে আছেন।

ইয়াবাসহ আটক হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন হ্নীলার মো. আব্দুল্লাহ। কারামুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতার এক ভাইকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছের লোকজনদের কাছেও যাচ্ছেন তিনি।

সায়েদ আমিন নিশান নামের একজনকে নেতা বানাতে মরিয়া তার ভাই টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আব্দুল আমিন জিসান। এ জিসান বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিমের ব্যবসায়ীক পার্টনার। তার চাচাতো ভাই নুরসাত স্বঘোষিত ইয়াবা কারবারি। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। নিসানকে নেতা বানাতে পারলে তারা নির্বিঘ্নে ইয়াবা কারবার চালাতে পারবেন, এমন ধারণা থেকেই তারা বিপুল টাকা নিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদকের ছেলে রায়হান শরিফ, এক সন্তানের জনক হান্নান সহ কয়েকজন মাদকাসক্ত, অছাত্র নেতা হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ঈদগাঁও উপজেলায় সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিতে মরিয়া ইয়াবা মামলার আসামি সাদ্দাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক মারুপ আদনান বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন।
এ সংগঠনে কোন মাদক মামলার আসামি, মাদক সেবনকারী ও অছাত্রদের স্থান দেয়া হবে না। এ ছাড়া সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপক্ষা করে বিতর্কিত কাউকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনা হবে না।’

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কাউকে ছাত্রলীগের নেতা বানানোর আগে নাম-ঠিকানা স্থানীয় থানায় পাঠিয়ে যাচাই করা হবে। যাতে করে কমিটিতে কোন মাদক মামলা, নারী নির্যাতন মামলার আসামি আসতে না পারেন।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি রক্ষা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃত্বে আনা হবে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কক্সবাজারের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফৌজদারি মামলার আসামি হলে ছাত্রলীগের পদে আনার সুযোগ নাই। সেখানে মাদক মামলার আসামিদের নেতৃত্বে আনার কোন প্রশ্নই আসে না। এছাড়া অছাত্র, বিবাহিতদের নেতৃত্বে আনার সুযোগ নাই।’

ইয়াবা মামলার আসামি আনোয়ারকে নেতৃত্বে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আনোয়ারকে আমি চিনি। তবে সে যে ইয়াবা মামলার আসামি, সেটা আমার জানা নাই। মামলার কপি পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা