বাংলাদেশ, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

দোকান ফুলের,ব্যবসা মাদকের

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-০৯-০৫ ১৬:৩৯:৩৪  

বিশেষ প্রতিবেদক, কক্সবাজার ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ঃ

বছর দুই এক আগেও কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা মসজিদ মার্কেটে অন্যের মালিকানাধীন ফুলের দোকানে চাকুরি করতেন। বাবা ছিলেন দিন মজুর।

এক সমযের ফুলের দোকানের কর্মচারী জসিম কয়েক বছরের ব্যবধানে হঠাৎ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার জীবনের গতি পাল্টে যাওয়া গল্প এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে। গড়েছেন বাড়ি। নিজের ব্যবহারের জন্য নিয়েছেন প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। রয়েছে একাধিক সিএনজি, ছারপোকা গাড়ি, মাছ ধরার ট্রলার সহ কিনেছেন জমিও।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফুল ব্যবসার আড়ালে নিষিদ্ধ ইয়াবা ব্যবসা করে কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন জসিম প্রকাশ ফুল জসিম।

সম্প্রতি নিজের বিধমা মা’কে নির্যাতন করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক নিউজ পোর্টালে সংবাদও প্রচার করা হয়েছে।

জসিম উদ্দিন কক্সবাজার খুরুশকুল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আলী আহমদের ছেলে।

পরিবারের দেয়া তথ্য মতে, আলী আহমেদ ২০০৭ সালে মৃত্যুর আগেও কৃষি কাজ করেছেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে জসিম পড়ালেখা করতে পারেন নি। তবে বাবার মতো কৃষক না হয়ে ৩০০ টাকা বেতনে ‘চকরিয়া আজিজিয়া পুষ্প বিতানে’ চাকুরি শুরু করেন। সেখানে কয়েক বছর চাকুরি করার পর টেকনাফে আরেকটি ফুলের দোকানে যোগ দেন। সেখান থেকে আবারো চলে আসে কক্সবাজার শহরের মসজিদ মার্কেটস্থ জিয়া ফুল ঘরে।

মূলত টেকনাফে থাকতে জসিম জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। ইয়াবা ব্যবসাটি এমন যে চোখের পলকেই পাল্টে গেল চলার গতিপথ। ইয়াবার ছোঁয়াই জসিম এখন টাকার কুমির। ধীরে ধীরে কোটপতির খাতায় নাম লিখিয়ে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই দুটি ফুলের দোকানের মালিক হন। কক্সবাজার শহরের মসজিদ মার্কেট ‘জসিম পুষ্প বিতান ও ফুলবাগান নামে দুটি ফুলের দোকানের মালিক তিনি।

 

দোকান দুটিতে বিনিযোগ রয়েছে অর্ধকোটি টাকা। রয়েছে চারটি সিএনজি অটোরিক্সা। যার আনুমানিক মূল্য ১৬ লাখ টাকা। মালামাল পরিবহণের জন্য ক্রয় করেছেন একটি ছারপোকা (গাড়ি নং কক্সবাজার-৭৩১০)। যার মূল্য আনুমানিক আট লাখ টাকা। গাড়িটি ২০১৯ সালে মরিচ্যা বিজিবির যৌথ চেকপোস্টে ইয়াবাসহ জব্দ হয়েছিলো।

লকডাউনের শুরুতে ৩৫ লাখ টাকা দামের ‘এফবি আরোহী’ নামে একটি মাছ ধরার ট্রলার কিনেছেন। কথিত রয়েছে মাছ ধরার ট্রলারে করে মিয়ানমার ও টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসে জসিম।

 

এছাড়া প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করেছেন বসত বাড়ি। নিজের ব্যবহারের মোটরসাইকেল (এভেঞ্জার কোম্পানি) রাখলেও সম্প্রতি সমালোচনা এড়াতে বিক্রি করে দিয়েছেন প্রাইভেট কারটি। চট্টগ্রামের কাচারি পাহাড়ের ‘মাধবী লতা’ ফুলের দোকানের স্বত্বাধিকারী মহি উদ্দিনের কাছে গাড়িটি বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া খুরুশকুল বঙ্গবন্ধু বাজার, গুচ্ছ গ্রাম, আদর্শ গ্রাম কয়েক একর জমিও ক্রয় করেছেন বলে জানা যায়।

 

অন্যের দোকানে চাকুরি করা জসিমের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন নিয়ে নিজ এলাকা খুরুশকুলের মানুষও হতভম্ব হয়ে আছেন। স্থানীয়দের সমালোচনা এড়াতে মূলত প্রাইভেট কারটি বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

তার ভাই শফিউল হক বলেন, পারিবারিকভাবে আর্থিক টানাপোড়েনে ছিলাম। তাই জসিম ২০০৬ সাল থেকে ফুলের দোকানে নামে মাত্র বেতনে চাকুরি শুরু করে। শুরুতে সাজঘর নামে একটি দোকান দেয় জসিম। এরপর থেকে দিন দিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে আমার ভাই। অবৈধ টাকা থাকায় পারিবারিকভাবে আমাদের উপর খবরদারি করে জসিম। সে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে নিজের মা’কেও নির্যাতন করে ঘর থেকে বের করে দিতে হাত কাঁপেনি তার।

এক সময়ে শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা থাকা জসিম ইয়াবা ব্যবসা ও নিজের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করতে বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকেন। দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে ডোনেশন দিয়ে থাকেন জসিম।

খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান বলেন, বেশ কয়েক বছর আগেও তাদের অবস্থা তেমন ভাল ছিলো না। এখন সে স্বচ্ছল হয়েছে। জসিম গাড়ি, দোকান ছাড়াও ভূ সম্পত্তির মালিক হয়েছে বলে জেনেছি।

ফুলের দোকানে চাকুরি করার কথা  স্বীকার করেছেন জসিম। তিনি বলেন ২০০৪ সাল থেকে চাকরি করেছি। পরে নিজের আয় দিয়ে উপভাড়ায় দুটি দোকান দিয়েছি। এত টাকার উৎস কি জানতে চাইলে উত্তর দেন নি।

তবে, ইয়াবা ব্যবসার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।

মাদক ব্যবসায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা