বাংলাদেশ, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রদল নেতা থেকে ওসি—ক্ষমতা দেখিয়ে ‘সেয়ানা ট্যাক্স’, অবৈধ দোকান বানিয়ে নেন চাঁদা

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-০৮-১১ ১৭:৩৮:৪৯  

কথায় কথায় গলা উঁচিয়ে দেখান থানার ওসির ক্ষমতা। পকেটে রাখেন পুলিশ ও মাস্তানদের। সেজন্য পথে পথে সেয়ানা ট্যাক্সও নেন তিনি। রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের বড় বহর। মাসোহারা দেন পুলিশকে ও স্থানীয় মাস্তানদের। যত অপরাধ করুক না কেন, পার পেয়ে যান অনায়াসেই।

বলছিলাম বন্দর থানার বড়পোল এলাকার ‘সেয়ানা ছেলে’ নামে পরিচিত কাদের নামের এক যুবকের কথা। তবে তাকে অনেকে চেনেন বখাটে কাদের নামেও।

বড়পোল এলাকার সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে প্রতিদিনই চাঁদা তুলেন কাদের। এসব জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ৩০-৪০টিরও বেশি দোকান। নিয়মিতই চাঁদা তুলে শুধু নিজে খান না, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ওসির পকেটেও যায় টাকা।

জানা গেছে, ওসি জাহেদুল কবিরের বাড়ি চকরিয়ার পেকুয়া এলাকায়। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই পুলিশের নিয়োগ পান। জাহেদুল কবির পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। মূলত এ পদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই পুলিশের চাকরি পান তিনি।

এছাড়াও ছাত্রদলের রাজনীতিতে থাকাকালীন সময়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী তার নির্যাতনে শিকার হয়েছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা।

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সিএমপির বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির। বরং এসব বিষয় কথা জানতে থানায় আসার আমন্ত্রণ জানান তিনি।

এদিকে সরেজমিন নগরীর বড়পোল এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে নাটকীয়তায় ব্যস্ত বন্দর থানা পুলিশ। উচ্ছেদ অভিযানের নামে ভ্রাম্যমাণ দোকান সরিয়ে দায় সাড়তে ব্যস্ত তারা। আর মাদকের মূল স্পট ট্রাক স্ট্যান্ড এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পাশাপাশি মূল চাঁদাবাজ ও অবৈধ স্থাপনা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন ভাঙা-গড়ার নাটকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবিরের আশ্র‍য়-প্রশ্র‍য়ে মূল সড়ক দখল করে নগরীর বড়পোল এলাকায় সেয়ানা ট্যাক্স, চাঁদাবাজি ও মাদক বাণিজ্য করে যাচ্ছেন কাদের নামের নতুনপাড়ার স্থানীয় এক যুবক।

স্থানীয়রা জানান, এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় পুলিশের। নিয়মিত মাসোহারা নেওয়ার কারণে অভিযানের নামে দু’একটি ভাসমান দোকান সরিয়ে দায় সারে তারা। তবে পুলিশ বড়পোল এলাকার অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অন্তত ৩০-৪০টি দোকান ও ট্রাক স্ট্যান্ডের আড়ালে মাদক বাণিজ্য উচ্ছেদে আঙুলও লাগায় না। দায় সারতেই ৩ আগস্ট বিকালে বন্দর থানাধীন লাল গুদাম ফাঁফির ইনচার্জ তার টিম নিয়ে রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ট্রলি নিয়ে বসা দোকানগুলো সরিয়ে দেয়। কিন্তু মূল জায়গার ধারে কাছেও যায়নি তারা।

এই ব্যাপারে জানতে অবৈধ দোকান ও মাদক বাণিজ্যর নিয়ন্ত্রক কাদের প্রকাশ চেইন কাদেরকে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানদার বলেন, ‘যে স্থানে চাঁদাবাজির মূল কেন্দ্র বিন্দু সেই স্থানে না গিয়ে বরং ভ্রাম্যমাণ দোকানও সরিয়ে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে পুলিশ। আর এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজও ঘুরছে প্রকাশ্যেই।’

বড়পোলের স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলী বলেন, ‘এই? অবৈধ স্থাপনা ও ট্রাক স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে ফাঁড়ির পুলিশ। আর তারাই এসে ভাঙবে, এটা কী বিশ্বাসযোগ্য?’

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম বিভাগ) আব্দুল ওয়ারিশ  বলেন, ‘ছাত্রজীবনে যদি জাহেদুল কবির বিএনপি ও জামায়াতের কোনো অঙ্গ সংঠনের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বড়পোল এলাকায় ওসির ক্ষমতা দেখিয়ে সেয়ান ট্যাক্স ও চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

 


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা