কক্সবাজারের ২৯ জেলে ভারতে কারাবন্দী,স্বজনদের আর্তনাদ

প্রকাশিত: ১২:০১ পূর্বাহ্ণ, মে ২৯, ২০২২

শাহেদুল ইসলাম মনির, কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

বাবার জন্য কাঁদছে সন্তান, সন্তানের জন্য কাঁদছেন মা। স্বামীর জন্য স্ত্রী কাঁদছেন, ভাইয়ের জন্য ভাই। বলছি গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে গিয়ে ঘন কুয়াশায় ভারতীয় জলসীমায় ডুকে পড়া কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার ২৯ জেলে র কথা। ৩ মাসেও মুক্তি মেলেনি এ জেলেদের। ভারতীয় কারাগারে থাকা জেলেগুলোর জন্য পরিবারের সদস্যদের শুধু কান্না আর কান্না। এছাড়া আর যেন কোনো উপায় নেই তাদের। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো মানবতার মা। আপনি কি আমাদের কান্না শুনতে পান না? ফিরিয়ে দিন পরিবারের সদস্যদের।

স্থানীয় ও জেলেদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারী বড়ঘোপ ইউনিয়নের মুরালিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের মালিকানাধীন ২৯ জেলেসহ এফবি আল রাফি নামের ফিশিং ট্রলার মাছ শিকারে যান। ঘন কুয়াশায় গভীর সমুদ্রে পথ হারিয়ে ভারতীয় জল সীমানায় প্রবেশ করে ট্রলার। এসময় ভারতীয় কোস্টগার্ড ট্রলারে থাকা জেলেদের আটক করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। আটক এসব জেলেরা উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

ভারতে বন্দি কুতুবদিয়ার জেলেরা হলেন- কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মৃত আবুল কালামের ছেলে মো. ইউনুছ(৫০), তোতা মিয়ার ছেলে মো. এরশাদ (৩৫), আবদু ছাত্তারের ছেলে মো. জমির উদ্দিন (৩০), মৃত ছালে আহমদের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৪৩), মো. আলমগীরের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩), মৃত কালু মিয়ার ছেলে শাহাদাৎ হোছাইন (৩৪), মফিজুর রহমানের ছেলে নুরুল বশর (৩৮), নুরুল আবছারের ছেলে একরামুর হক (২৫), মো. বকসুর ছেলে জমির উদ্দিন(৩৪), মোহাম্মদ ছৈয়দের ছেলে জাফর আলম (৩৯), জকির আহমদের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৩৬), মো. হোসেনের ছেলে খোরশেদ আলম (২৫), আবু তাহেরের ছেলে মো. ইব্রাহিম(৩৩), আনোয়ার হোছাইনের ছেলে আরাফাত হোছাইন (২৩), আবু তাহেরের ছেলে রফিক উদ্দিন (২৫), আবুল হোসেনের ছেলে আলা উদ্দিন (৩৭), ফজল করিমের ছেলে মোহাম্মদ রুবেল (২৯), কবির আহমদের ছেলে মাহাবুব আলম (৫০), ইব্রাহিম খলিলের ছেলে মো. মামুন (৩১), মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. আকাশ (৩২), অনিল দাশের ছেলে রম্ভস দাশ (৩৫), নুরুল আবছারের ছেলে মহি উদ্দিন(২৬), পেঠান কান্তি দাশের ছেলে প্রভাত কান্তি দাশ (৪০), আবু তাহেরের ছেলে আবু মুছা (৩১), নুরুল ইসলামের ছেলে অলি উদ্দিন (২৪), নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুল আলম (২২), মো. শেরজান খানের ছেলে মো. শহীদ উদ্দিন রাসেল (২৬), ইদ্রিস হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৪) ও রাশেদ মিয়ার ছেলে মাহামুদুল করিম।

এফবি আল রাফি ট্রলারের মালিক জসিম উদ্দিনের ছেলে সুমন বলেন, ট্রলারের জামিন হয়েছে। আগামী জুনের ১ তারিখ জেলেদের জামিন হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় উকিল।

এদিকে, জেলে পল্লী অমজাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভারতে আটক ২৯ জেলে পরিবারের কান্না থামছে না। অন্যদিকে, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। দক্ষিণ অমজাখালী জমির উদ্দীন লিটনের স্ত্রী ফেরদৌস বেগম বলেন,তার স্বামী সাগরে গিয়ে পথ হারিয়ে ভারতের জেলে আটকা পড়ে আছে। তাকে ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।

কুতুবদিয়া ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রকৃত পক্ষে জেলেদের ফিরিয়ে আনা জরুরি। কারণ ওই সকল জেলে পরিবারে আর কোন কর্মক্ষম লোক নাই। তাই হতদরিদ্র জেলে পরিবারের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে তাদের মুক্ত করতে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ হাই কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।

কুতুবদিয়া থানার ওসি ওমর হায়দার বাংলাদেশ পেপার’কে বলেন, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছে। ওই সময় ২টি জিডি করা হয়েছে। আমরাও বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি।কক্স