বাংলাদেশ, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পাংশায় প্রতিবন্ধী স্কুল খুলে একের পর প্রতারণা প্রতারক মামুনের

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-০৫-২৭ ২০:১৭:৩৯  

রাজবাড়ীর পাংশায় এক প্রতারক প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল খুলে নিয়োগ বাণিজ্য সহ নানা প্রকার প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কয়েক বছরে আল মামুন সিদ্দিকী নামের ওই ব্যক্তি একাই ১৫ জনকে স্কুল সরকারি করণের প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন স্কুলে শিক্ষা দানের নামে অর্থ নিয়ে বিভিন্ন ভাতা কার্ড করিয়ে দেওয়ার চাকরি।

বিভিন্ন প্রকার অভিযোগের সূত্র ধরে করা হয় অনুসন্ধান। অনুসন্ধানে জানা যায়, আল মামুন সিদ্দিকী শুরুতে ছিলেন ন্যাশনাল সার্ভিস প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত একজন সদস্য। কর্মকালীন সময়ে পোস্টিং নেন পাংশা ভূমি অফিসে। সেখানে যোগদানের পর একাধিক মানুষের কাছ থেকে জমি মিটিশন ও বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টে লোক নিয়োগের কথা বলে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে এই সকল অভিযোগ প্রমাণিত হলে তৎকালীন পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রজেক্ট থেকে ছাটাই করেন।

পরবর্তী সময়ে কয়েকমাস বেকার থাকার পর বাহাদুরপুরে নিজের বসতবাড়ির একটি দুই রুমের টিনের ঘরে সাইনবোর্ড লাগিয়ে খোলেন আহম্মদ আলী মোল্লা মেমোরিয়াল অরফ্যান্স ডিসএ্যাবল্ড স্কুল এন্ড কলেজ নামের একটি প্রতিবন্ধী স্কুল। সেখানে নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে বাহাদুরপুর ও আশপাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে অসহায় ও দুস্থদের বিধবা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ভাতা কার্ড করে দেওয়ার নামে অর্থ আদায় কার্যক্রম। এরপর স্কুলটিতে ভর্তি করা হয় ৬-২২ বছর বয়সী বেশকিছু এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশু-যুবকে। স্কুল খোলার দুই মাস না পেরোতেই সরকারি করণের প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয় বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে। অসহায় ও দুস্থদের বিধবা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ভাতা কার্ড দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। শুধু তাই নয়, টাকা ফেরত চাওয়ায় উল্টো মামলা দেওয়া হবে বলেও তাদের অনেককে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। গত তিন বছর ধরে পাংশা উপজেলা সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলা ও পাবনা, কুষ্টিয়া জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার অন্তত ছয় শতাধিক অসহায় নারী ও পুরুষকে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ভাতা কার্ড করে দেওয়ার প্রলোভন দেন। বিনিময়ে তিনি তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা নেওয়ার পর কয়েকজনকে ভাতা কার্ড করে দিলেও এখনও অধিকাংশেরই ভাতা কার্ড না দেওয়ায় ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চান। মামুনের স্কুলে গেলে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। অনেকের কাছ থেকে আবার নিজের একাধিক বিকাশ নম্বরে ভাতায় বরাদ্দ আসা প্রথম কিস্তির অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগও আসে মামুনের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানের সূত্র ধরে আরো জানা যায়, স্কুলটির জন্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত চার বছরে বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও ব্যক্তি বিশেষে অনুদান এসছে প্রায় কোটি টাকা। যার কিছুটা স্কুলের জন্য নামমাত্র খরচ দেখিয়ে বাকিটা নিজের পকেটে তোলে মামুন। স্কুলে কর্মরত শিক্ষকসহ সর্বস্তরের জনগণকে মামুন জানিয়েছে প্রতিষ্ঠার মাত্র ৩ বছরে স্কুলটির নামে কিনেছেন ১০০ শতাংশ জমি। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায় জমির পরিমাণ ১০০ শতাংশ নয় ১৭ শতাংশ তাও আবার মামুনের নিজের নামে। এইরকম বিভিন্ন ক্ষেত্র বিবেচনায় দেখা যায় স্কুলটির নামে সাইনবোর্ড ছাড়া নেই কোনো প্রকার সম্পদ। চলতি বছরে রাজবাড়ী ২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব জিল্লুল হাকিম স্কুলটির জন্য ক্রয়কৃত জায়গায় গর্ত ভরাটের জন্য ১লক্ষ টাকা ও রাজবাড়ী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন দিয়েছেন ১ লক্ষ টাকা। কত টাকার এবং কত ট্রাক মাটি ফেলা হয়েছে জমিটিতে মামুনের কাছে জানতে চাইলে কোনো প্রকার জবাব দিতে পারেনি প্রতারক মামুন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায় ১৫-১৬ হাজার টাকার মাটি ফেলা হয়েছে জমিটিতে।

এখানেই শেষ নয় মামুন নামের প্রতারকের প্রতারণা ও জালিয়াতি। বিভিন্ন সময় নিজের স্বার্থ হাচিলের লক্ষ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে ব্যবহার করেছেন সরকারি দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের নাম। অনুমতি ছাড়া স্কুলের উপদেষ্টা পরিষদেও ব্যবাহার করেছেন তাদের নাম এবং স্কুল পরিচালনা কমিটিতে বড় বড় পদে রেখেছেন নিজের পরিবারের সদস্যদের। ইতোপূর্বে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশের পরেও তাঁর দাপট থামেনি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের ঘুষ প্রদানের চেষ্টা করেন এবং এবং ঘুষের অর্থ না নেওয়ার কারণে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মৃত্যুর হুমকি প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, মামুন একজন প্রতারক। ওর এইসকল অপকর্ম আর প্রতারণার ব্যাপারে খুব দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা