বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নতুন নেতৃত্বের সন্ধান চলছে ছাত্রলীগে

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-০৯-১৩ ০৫:৪৪:২৮  

ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্বের সন্ধান চলছে। বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

এ পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসতে পারে। এ নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সেক্ষেত্রে আগাম সম্মেলন, না কী আহ্বায়ক কমিটি?

না ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউকে কার্যকরী সভাপতি করে দায়িত্বভার অর্পণ- তিন প্রক্রিয়ার কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর যে কোনো একটি প্রক্রিয়ায় নতুন নেতা বাছাই হতে পারে।

দলের চারজনকে ছাত্রলীগের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এটি দেখছেন। তবে সবকিছু পরিষ্কার হতে পারে শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠকে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ১ বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা ওঠে আসে।

এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না করা অন্যতম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা, ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও আছে।

এর বাইরে রাতজাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কর্মসূচিতে বিলম্বে যাওয়া, প্রধান অতিথিদের বসিয়ে রাখা, জেলা সম্মেলন করতে না পারা, বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ও এ তালিকায় রয়েছে।

এসব দেখে এবং শুনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেন। সেদিন দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা বলেন, শেখ হাসিনা ভীষণ ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের ওপর। ‘আমি ছাত্রলীগের এমন নেতা চাই না, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে’- এমন ক্ষুব্ধ মনোভাবও সেদিন প্রকাশ করেন দলীয় সভাপতি।

এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ মনোভাব জানার পর সংগঠনটির পরবর্তী নেতৃত্বে কারা আসছেন সেই আলোচনা এখন সর্বত্র। বর্তমান কমিটির মেয়াদ যেহেতু আরও ১০ মাস রয়েছে- তাই আগাম সম্মেলন হবে, নাকি সম্মেলন ছাড়াই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে সেই আলোচনাও চলছে।

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা যুগান্তরকে জানান, আপাতত সম্মেলনে না গিয়ে নতুন নেতৃত্বের কথাই ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত করা হতে পারে। দলের হাইকমান্ড তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।

এক্ষেত্রে পারিবারিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সংগঠন পরিচালনার দক্ষতাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। বঞ্চিত নেতাদের জীবন বৃত্তান্তও নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে- ছাত্রলীগ নিয়ে সুপারিশ করতে গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি ছাত্রলীগ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বের (কমিটি বাতিল) সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের আগাম সম্মেলন দিয়ে দেবেন কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সম্মেলন দিতে হবে না।

শোভন-রাব্বানীকে আমি নেতা বানিয়েছি, পুরো ব্যাপারটা আমিই দেখছি। এখন সম্মেলনের আওয়াজ উঠলে জটিলতা আরও বাড়বে। কাজেই সম্মেলন নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।

বুধবার সচিবালয়ে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব বা আগাম সম্মেলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি পরিবর্তন, সংশোধন বা সংযোজনের বিষয় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দেখভাল করছেন। কোনো বিষয় সিদ্ধান্ত আকারে না আসার আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

তিনি বলেন, আমি এখন পর্যন্ত আগাম সম্মেলনের কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। এটি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পুরোপুরিভাবে নেত্রী নিজেই দেখছেন। যা করার তিনিই করবেন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, দলের চারজনকে ছাত্রলীগের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির পক্ষে সুপারিশ করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সাহস করছেন না। এমনকি সংগঠনটির কমিটি গঠনে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের চার নেতা নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখছেন। ‘এখন সময় ভালো নয়’- বুঝিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধানের কথ বলছেন কেউ কেউ।

গণভবন সূত্রে জানা যায়, শনিবারের পর সোমবার রাতেও গণভবণে প্রবেশ করতে পারেননি শোভন-রাব্বানী। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় চার নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বিএম মোজাম্মেলের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।

বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেখভাল করায় এ নিয়ে কোনো সুরাহা টানতে পারেননি নেতারা। এরই মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শোভন-রাব্বানীর গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত করা হয়েছে।

এরপর থেকে দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রতি যে সহমর্মিতা ছিল তা উঠে গেছে। বেশিরভাগই তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন।

আওয়ামী লীগের অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকালে ছাত্রলীগের চলমান বিষয়টি জানতে ও শোভন-রাব্বানীর জন্য সুপারিশ করতে গণভবনে যান আওয়ামী লীগের তিন শীর্ষ নেতা।

তারা হলেন- দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলার সাহস করেননি।

উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজেই উপস্থিত নেতাদের ছাত্রলীগ বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেন। একই সঙ্গে বিষয়টি তিনি নিজেই দেখছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের জন্য সুপারিশ করতে গিয়ে তাদেরও খালি হাতে ফিরে আসতে হয় গণভবন থেকে।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা