বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইন পদ্ধতিতে বেচাকেনা: ভল্টের ৬২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বাতিল

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-০৯-১৩ ০৫:৪০:০১  

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের ভল্টে রাখা ৬২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র মূল্যহীন কাগজে পরিণত হয়েছে। অনলাইন পদ্ধতিতে বেচাকেনা শুরুর পর মুদ্রণকৃত এসব সঞ্চয়পত্র বাতিল করা হয়েছে। দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের ভল্টে বিভিন্ন স্কিমের এসব সঞ্চয়পত্র মজুদ রাখা ছিল।

পাশাপাশি এখন থেকে সঞ্চয়পত্র না ছাপানোর জন্য দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র মুদ্রণ বন্ধ থাকায় আমদানিকৃত ‘সিকিউরিটি পেপার’র প্রায় ১২ লাখ পিস শিট ও ৪ হাজার ৫০০ রিম বাতিল হয়েছে।

এর মধ্যে আমদানি প্রক্রিয়াধীন আছে ২ হাজার ১৬০ রিম। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এসব তথ্য। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়টি জানতে হলে অফিসে এসে কথা বলতে হবে। আমি এখন অফিসের বাইরে আছি। যে কারণে এ বিষয়ে কথা বলতে পারছি না।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের ভল্টে বিভিন্ন স্কিমের ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ১৫০ পিস সঞ্চয়পত্র আছে। এর অভিহিত মূল্য হচ্ছে ৫৬ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি ৫০০ টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা মূল্যের ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭০০ পিস রয়েছে।

এর মূল্য ৪৫ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার মূল্যের ১ লাখ ৭৭ হাজার পিস সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর মূল্য ৩ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র আছে ৮২ হাজার ৮৫০ পিস। যার মূল্য ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র আছে ১ লাখ ২৮ হাজার পিস, মূল্য হচ্ছে ৪ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

এছাড়া গাজীপুরে অবস্থিত দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন থেকে মুদ্রিত বিভিন্ন স্ক্রিমের সঞ্চয়পত্র আছে আরও ৩ লাখ ৭০ হাজার পিস। এর অভিহিত মূল্য হচ্ছে ৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক ১ লাখ টাকা মূল্যমানের ১ লাখ ৯৫ হাজার পিস সঞ্চয়পত্র আছে।

যার মূল্য ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এছাড়া ২ লাখ টাকা মূল্যের ত্রিশ হাজার পিস, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৪৫ হাজার পিস, ১ লাখ টাকা মূল্যের ৫০ হাজার পিস ও ৫ লাখ টাকা মূল্যের আরও ৫০ হাজার পিস।

এছাড়া মুদ্রণ সঞ্চয়পত্র ছাড়াও মুদ্রণের জন্য বিদেশ থেকে সিকিউরিটি থ্রেড পেপার আমদানি করা হয় সঞ্চয়পত্র ছাপানোর জন্য। এ ধরনের দেড় মিলি মিটার মাপের সিকিউরিটি থ্রেড পেপারের মধ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের জলছাপযুক্ত ৫ লাখ ৪ হাজার ৭৩১ পিস শিট ও ১ লাখ ৮ হাজার ৪০১ রিম কাগজ মজুদ রয়েছে।

আর ২ মিলিমিটারের শিট আছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৩১ পিস এবং ১ হাজার ৩৫২ রিম কাগজ। এছাড়া এলসি খোলার পর বিদেশ থেকে আমদানি প্রক্রিয়াধীন আছে ২ হাজার ১৬০ রিম। সংশ্লিষ্টদের মতে, নিরাপত্তাজনিত এসব পেপার বাইরে অন্য কোনো কাজে ব্যবহারযোগ্য না হওয়ায় এসব পেপার অচল।

সূত্রমতে, সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে মহাপরিচালক বলেন, অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বেচাকেনা শুরুর পর ৩১ মার্চ অর্থ সচিব মৌখিকভাবে এর মুদ্রণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর থেকে পত্রের মাধ্যমে গাজীপুর দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশনকে মুদ্রণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কর্পোরেশনের কাছে মুদ্রণ সঞ্চয়পত্র, ‘জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর’ লেখা জলছাপযুক্ত সিকিউরিটি পেপার, মুনাফা কুপন, মুদ্রণের লক্ষ্যে আমদানিকৃত অফসেট পেপার, ফিনিশড গুডস ও বিপুল পরিমাণ কাগজ মজুদ থাকে। প্রতিটি প্রডাক্টের পৃথক সংখ্যা ও পরিমাণ উল্লেখ্য করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন থেকে। এ বিষয়ে তিনি চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা চেয়েছেন।

প্রসঙ্গত সরকারি ব্যয় শক্তিশালীকরণ অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষায় (পিইএমএস) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ওয়েবভিত্তিক সঞ্চয়পত্র অনলাইন ব্যবস্থাপনায় বেচাকেনা শুরু হয়। মার্চে ঢাকা এবং পহেলা জুলাই থেকে দেশব্যাপী এটি চালু হয়। এর বাইরে সঞ্চয়পত্র লেনদেন না করার নির্দেশ দেয়া হয়।

উল্লিখিত এ সিস্টেমে দৈনিক সঞ্চয়পত্র বিক্রির বিবরণীর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাবে ডেবিট করে সরকারি হিসাবে ক্রেডিট করা হয়। আর এর মুনাফা ও আসল ‘বিইএফটিএন’র মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি প্রেরণ করা হয়। গ্রাহককে সিস্টেম জেনারেটের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র প্রিন্ট করে গ্রাহকদের দেয়া হয়। ফলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র মুদ্রণ, সংরক্ষণ, বিতরণের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যায়।

মুদ্রণ সঞ্চয়পত্রের ইতিহাস সর্ম্পকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সঞ্চয় ব্যাংকের জনক হিসেবে খ্যাত রেভারেন্ড হেনরি ডানকান ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডের এক গির্জায় প্রথম সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করেন। ইংল্যান্ডে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৬৫ বছর পূর্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারিভাবে ‘জাতীয় সঞ্চয় সংস্থা’ আত্মকাশ করে। বিশ্বযুদ্ধের পর জাতীয় সঞ্চয় সংস্থা ইংল্যান্ডের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। জনগণকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এ উপমহাদেশে ১৯৪৪ সালে ভারতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সর্বপ্রথম ‘জাতীয় সঞ্চয় সংস্থা’ কাজ শুরু করে। এ সংস্থার প্রধান কার্যালয় ভারতের সিমলায় অবস্থিত ছিল। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জাতীয় সঞ্চয়ের কার্যক্রম তদানীন্তন সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানান্তরিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সে সময় থেকে সঞ্চয়পত্র মুদ্রণ করে বেচাবিক্রি শুরু হয়।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা