পাংশায় ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ

প্রকাশিত: ১:০৭ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২২

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের হরিনাডাঙ্গা বাজারে ভিজিএফের চাল বিক্রির ঘটনা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে একই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের পৃথক গুদাম ছাড়াও অন্য একটি স্থান থেকে ভিজিএফের চাল উদ্ধার করা হয়েছিল।

ভিজিএফ একটি মানবিক সহায়তা কর্মসূচি, যার মাধ্যমে সরকার দেশের দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য বিতরণ করে থাকে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের স্বাভাবিক জীবনধারা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করা হয়। উদ্দেশ্যটি যে মহৎ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় এর মূল উদ্দেশ্য যে ব্যাহত হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

প্রায় দুই সপ্তাহ পূর্বে ঈদকে সামনে রেখে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নে দুস্থদের মধ্যে ১০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়।

‍এদিকে, গত দুই সপ্তাহ পূর্বে বেলা ১১টার সময় ইউনিয়নটির হরিনাডাঙ্গা বাজারে স্থানীয় চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান প্রামাণিকের মেজো ছেলে মজিবর (৪২) এর চালের গোডাউন থেকে ভিজিএফের চাল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগের সূত্র ধরে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, মৌরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান প্রামাণিকের মেজো ছেলে মজিবর রহমান প্রামাণিক (৪২) পেশাগত ভাবে চালের ব্যবসায়ী। ঈদকে ঘিরে ভিজিএফের বিতরণের চালের একটা অংশ মজিবর রহমান তার দোকানে নিয়ে পাশের পাট্টা ইউনিয়নের বিলচতরা গ্রাম সহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করেন।

বিক্রির সূত্র ধরে বিলচতরা গ্রামের খলিল উদ্দিনের ছেলে জয়নাল, কাশেম মিস্ত্রীর ছেলে শুকুর সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, তারা মজিবর রহমানের কাছ থেকে দাম কম হওয়ায় ২০-৩০ টাকা কেজি দরে ভিজিএফের চাল ক্রয় করেছেন।

এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান প্রামাণিক বলেন, আমি ঈদের আগে ১৫৪৬টি স্লিপে ভিজিএফের চাল বিতরণ করেছি। এরমধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে দিয়েছি ৫০০ টি স্লিপ। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের জনপ্রতি দিয়েছি ৩০ টি স্লিপ, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্যদের (মেম্বার) জনপ্রতি দিয়েছি ২০ টি স্লিল, আমার মেজো ছেলে মজিবরকে ৫০ টি এবং বাকি স্লিপগুলো আমি নিজে বিতরণ করেছি। এক্ষেত্রে আমার ছেলে ভিজিএফের কোনো চাল বিক্রি করেছে কিনা আমার জানা নাই। আমি আমার কাছে থাকা প্রতিটি স্লিপের চাল নিজে বন্টন করেছি।

অন্যদিকে, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত দুস্থদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণের দাবি করা হলেও স্লিপ বিতরণে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান প্রামানিকের বিরুদ্ধে। স্বয়ং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান তার অনিয়মের কথা। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে ৫০০ টি ভিজিএফের চালের স্লিপ দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে ৩৪০ টির মতো স্লিপ দিয়েছে।

সূত্র জানায়, নাম-ঠিকানা বিহীন স্লিপের মাধ্যমে দুস্থ নারীদের দ্বারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছের লোক বারবার চাল তুলেছেন। আবার কার্ডে ওয়ার্ড উল্লেখ না থাকায় পাশের ওয়ার্ডের দুস্থদের দ্বারাও চাল তুলে নেওয়া হয়েছে।

তবে এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে সামনে রেখে ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় উপস্থিত থাকা ট্যাগ অফিসারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী বলেন, ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে। এরপরেও কোনো প্রকার অনিয়ম হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।