জসিম উদ্দিনঃ
বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি আর লোনাজলে উৎসব উদযাপন করেছেন ৫ লাখ পর্যটক। সৈকতের যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। ঈদের দিনের চেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল কয়েকগুণ বেশি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রীতিমতো তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। সকাল ও দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এ দৃশ্যের দেখা মিলেছে। পর্যটকের ভিড় ছিল কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর, ইনানী ও পাটোয়ার টেক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির এবং চকরিয়ার ডুলহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও।
পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ঈদের টানা ছুটি শেষ হলেও ৯ মে পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ১০ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবে বলে জানিয়েছেন তারা। দুপুরে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বুধবারের মতোই মানুষের ঢল।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি নাওশাত মাহমুদ ও কোনাল জানান, দুই বছর পর করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় বুধবার সকালে সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন তারা। উঠেছেন তারকা মানের হোটেল সি-গালে। এখানে এসে করোনামুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় উৎসাহিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ দম্পতি। পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে তাদের। এমন আক্ষেপ করেন সিলেট থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা মঈন উদ্দিন ও রায়হানসহ আরও অনেকেই। কক্সবাজার সৈকতে সমুদ্রের ঢেউয়ে বিপদাপন্ন হওয়া পর্যটকদের উদ্ধারে কাজ করা সি সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ঈদের দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিন কয়েকগুণ বেশি প্রায় ২ লাখ পর্যটক এসেছেন। ঈদের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার আরও বেশি পর্যটক কক্সবাজারে এসেছে। তিনি বলেন, বিকাল থেকে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট সমুদ্রপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সৈকতের বেশি গভীরে যাতে কেউ না যায় সেজন্য বারবার সতর্ক সংকেত দিয়ে পর্যটকদের সাবধান করা হচ্ছে বলে জানান ওসমান গণী।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, ঈদের দিন সৈকতে ৭০ থেকে ৮০ হাজারের মতো পর্যটকের উপস্থিতি ছিল। ঈদের দ্বিতীয় দিনে দুই লক্ষাধিক পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও দুই লাখের বেশি পর্যটক সৈকতে পরিলক্ষিত হয়েছে। সে হিসাবে তিন দিনে ৫ লাখের মতো পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। রেজাউল করিম বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হলেও ৯ মে পর্যন্ত একইভাবে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ১০ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে পারেন। এ বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সৈকতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা।
কক্সবাজার হোটেলের মালিকরা বলছেন, ঈদের টানা সাত দিনের ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে আসছেন অন্তত ১০ লাখ পর্যটক। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্ট ও কটেজের ৯০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ঈদের সাত দিনের ছুটিতে প্রতিদিন দেড়-দুই লাখ করে ১০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে কক্সবাজারে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনে বেচা-বিক্রি বেশি হওয়ায় খুশি সৈকতের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরাও। সৈকতের সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের দিন থেকে তাদের আশানুরূপ বেচা-বিক্রি হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা তাদের। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, প্রশাসনের সব বিভাগের সমন্বয়ে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী সাত দিন জেলাজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ নিশ্চিত করতে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া যেন আদায় না হয়, সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছে জেলা প্রশাসনের পৃথক চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুনতাকিম হোছাইন
বার্তা সম্পাদক: ইকবাল হোছাইন
মেইলঃ bangladeshpaper71@gmail.com
অফিসঃ ০১৮৮-৬৬১০৬৬৬ বার্তা প্রধান ০১৮৫৭৬৭১৯৪৩
কপিরাইট আইন,২০০০ © অনুসারে বাংলাদেশ পেপার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত