বাংলাদেশ, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজারে আবারো গণধর্ষণের অভিযোগ !

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২২-০৩-১৫ ১৩:০১:৪০  

এবার অস্ত্রের মুখে কক্সবাজারের আদালত পাড়া থেকে তুলে নিয়ে অসুস্থ এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সোমবার (১৪ মার্চ) বেলা ২টার দিকে আদালত পাড়ার মসজিদ মার্কেটস্থ আইনজীবী চেম্বারের সামনে থেকে তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পুলিশ ‘৯৯৯ নাম্বারে ফোন পেয়ে শহরের বাহারছড়া এলাকা থেকে ধর্ষিতা নারীকে উদ্ধার করেছে। পরে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে ধর্ষণের শিকার নারী ৪ জনের নাম উল্লেখ করে কক্সবাজার মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।

তবে, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজাহার পাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও তিনি সমস্যাটি স্বামী-স্ত্রীর সমস্যা বলে দাবি করেছেন। (প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগের একটি কপি সংরক্ষিত রয়েছে।)

অভিযুক্তরা হলেন, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের মধ্যম পোকখালীর রমজান আলী মেম্বারের ছেলে বর্তমানে ফকিরাবাজার এলাকায় বসবাসকারী ফিরোজ আহমদ (৪৭)। তিনি এক সময়ের দুধর্ষ ডাকাত ছিলেন। বর্তমানে তাকে দালাল ফিরোজ নামে চিনেন স্থানীয়রা। পোকখালী গোমাতলী এলাকার লোদা মিয়ার দুই ছেলে রাসেল উদ্দিন (৩৮) ও নুরুল ইসলাম এবং ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ফকিরা বাজার এলাকার মৃত আব্দুল গণির ছেলে মো. শরীফ। মামলায় অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরো ৪-৫ জনকে।

ভোক্তভূগী তরুনী অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত ফিরোজ ও রাসেল উদ্দিন দুইজনই পুলিশের সোর্স (দালাল) হিসেবে পরিচিত। তাই আশানুরূপ পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছেন না তিনি। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

মামলার এজাহারে বাদী বলেন, এজাহার নামীয় ১নং আসামী ফিরোজ আহমদ ও ৩নং আসামী মো. শরীফ বিভিন্ন সময় ধর্ষিতাকে উত্ত্যক্ত আসছিলো। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয় তারা। সর্বশেষ গত সোমবার (১৪ মার্চ) বেলা ২ টার দিকে কক্সবাজার আদলত পাড়ার মসজিদ মার্কেটস্থ অ্যাডভোকেট একরামুল হুদার চেম্বার থেকে বের হলে আসামীরা আমাকে ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত ফিরোজ ও শরীফ টানাহেঁছড়া করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাঁধা দিলে অজ্ঞাত পরিচয়ে আরো কয়েকজন এসে আমার হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে জোর করে একটি নোহা গাড়ীতে তুলে ফেলে।

এসময় পথচারীরা এগিয়ে এলে গাড়ি নিয়ে কক্সবাজার কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া ল্যাবরেটরি স্কুল সংলগ্ন ফিরোজের আত্মীয় জনৈক ফজল কাদেরের সেমিপাকা টিনশেড বাসায় নিয়ে একটি রুমে আটকিয়ে রাখে। সেখানে ফিরোজ ও শরীফ ধারালো অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় তার গলায় থাকা ১২ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন এবং সাথে থাকা টাকা নিয়ে ছিনিয়ে নেয়। তাদের ধর্ষণের পর অভিযুক্ত নুরুল ইসলামও ধর্ষণে যুক্ত হন। এক পর্যায়ে ক্লান্ত ও হতভম্ব হয়ে ফ্লোরে ঢলো পড়েন ধর্ষিতা। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করে ২নং আসামী রাসেল উদ্দিন। নিজেকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানালে এবং বেশী বাড়াবাড়ি করলে মানবপাচার মামলায় চালান করে দিবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে রাসেল উদ্দিনও তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। দলবদ্ধ ধর্ষণের ফলে তার গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তপাত শুরু হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর রাসেল ও শরীফ তাকে টানা হেছড়া করে গেইটের বাইরে এনে ধাক্কা দিয়ে গেইট বন্ধ করে দেয়। ধর্ষিতাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিক জাতীয় জরুরী সেবা নাম্বার ‘৯৯৯’ এ কল দিলে আসামীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় পুলিশের পরামর্শে থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছি না। এমনকি তারা আমাকে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন নি। আমাকে পরিক্ষা করলে ধর্ষণ করেছে কিনা প্রমাণ হবে। কিন্তু সেটি না করে আমাকে মানুষিক যন্ত্রণা দিচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, গত বছর বর্ষায় এক রাতে তার বাড়িতে দুর্বৃত্তের হামলায় তার নাক, ঠুট কেটে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে তাকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দীর্ঘ কয়েক মাস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরেন তিনি। উক্ত ঘটনায় দায়ের করা মামলার নির্ধারিত দিন ছিল ১৫ মার্চ। আসামীর জামিনের বিরোধিতা ও ন্যায় বিচার পেতে করনীয় নির্ধারণ বিষয়ে কথা বলতে আইনজীবীর সাথে আগাম পরামর্শের জন্য আদালত পাড়ায় আসেন তিনি। হয়তো এ জন্য তারা আমাকে তুলে নিয়ে হামলা চালিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, আমরা এখনো কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা জেনেছি এটি স্বামী-স্ত্রীর সমস্যা। প্রকাশ্য দিবালোকে ধর্ষণের কোন সুযোগ নেই। হয়তো শীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে। তারপরও যেহেতু অভিযোগ এসেছে, তাই লিখিত অভিযোগ পেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে পরিক্ষা করে দেখা হবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন একটি ঘটনার বিষয়ে এক নারী কল করেছিলেন। ৯৯৯-এ কল দেয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল জেনে এজাহার নিয়ে থানায় যেতে ভুক্তভোগীকে পরামর্শ দেয়া হয়। ওসিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, গুরুত্ব সহকারে যেন এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হয়।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা