বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাস পার হলেও অপরাধী,ধরাছোঁয়ার বাইরে

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০১৯-০৯-০৭ ১৩:৩১:৪৩  

নিজস্ব প্রতিবেদক:


কক্সবাজার মনখালীর জসিম হত্যায়
এক মাসেও আটক হয়নি সন্দেহজনক অপরাধীরা


কক্সবাজারের উখিয়ার মনখালীর জসিম হত্যার একমাস পার হলেও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহজনক দুই মাদক কারবারি আব্দুর রহিম ও তোফায়েলকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ভোক্তভূগী পরিবারের মাঝে। তারা দ্রুত জসিম হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহবাজন মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে জসিম হত্যাকারিদের সাথে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির কর্তা অফিসারের বাম হাতের লেনদেন রয়েছে। যার ফলে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও তোফায়েল ও রহিমকে আটক করছে না পুলিশ এমন অভিযোগ নিহতের পরিবারের। এ অবস্থায় মামলা তদন্তকারি অফিসার পরিবর্তনেরও কথা বলছেন তারা।
জানা যায়, গত ২৮ জুলাই রাতে জসিমকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় রহিম ও তোফায়েল। ধারণা করা হচ্ছে রাতেই জসিমকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তারা। পরের দিন দুপুরে মনখালী মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে জসিমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় উদ্ধার করা হয় নিহত জসিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি। উক্ত মোবাইল ফোন থেকে জসিমকে করা সর্বশেষ ফোন নাম্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। যদিও নিহতের ছোটভাই সাহাব উদ্দিন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জসিম হত্যার পর থেকে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় মনখালী গ্রামের গোলাম শরিফের ছেলে ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি সোলতান আহম্মদের ছোটভাই শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম এবং উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জুহুর আহম্মদ চৌধুরীর ছোটভাই ইয়াবা বেন্ডার তোফায়েল আহম্মদ। মামলা দায়েরের কয়েকদিন পর নিহতের পরিবারের সদস্যরা তোফায়েল আহম্মদের রক্তমাখা শার্টও উদ্ধার করে। যা মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে আলামত হিসেবে রয়েছে। এছাড়া জসিমকে যে নাম্বার থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা তোফায়েলের বলেও নিশ্চিত করেছে পুলিশ। অথচ এক মাস অতিক্রম হওয়ার পরও জসিম হত্যার সন্দেহভাজন দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের উদাসিনতার সুযোগ নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রহিম ও তোফায়েল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টেকনাফ বাহারছড়া শামালাপুর এলাকার শীর্ষ মাদককারবারী পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাবিব উল্লাহ ছিলেন রহিম, তোফাইল এবং নিহত জসিমের গডফাদার এবং রহিমের ভগ্নিপতি। টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে রহিমের বাড়িতে রাখা হতো। পরে সুবিধা মতো সময়ে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করতো। এছাড়া এ তিন জনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট মেরিন ড্রাইভ সড়কে বিভিন্ন সময় ইয়াবা ছিনতাই করতো। হাবিবের মৃত্যুর পর এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেয় রহিম ও তোফায়েল। ধারণা করা হচ্ছে ইয়াবা বিক্রির টাকার ভাগ ভাটোয়ারার দ্বন্ধ নিয়ে জসিমকে হত্যা করা হতে পারে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তোফায়েলের বড়ভাই হত্যাসহ ডজন মামলার পালাতক আসামী জহির আহম্মদ চৌধুরীর এক মেয়ে ইনানী পুলিশ ফাঁড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করেন। সে সুবাধে তোফায়েলের পরিবারের সাথে পুলিশের রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। যার ফলে তোফায়েলকে আটক করছে না পুলিশ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিহত জসিম এবং হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন তালিকার অন্যতম রহিম এবং তোফায়েল নিকট আত্মীয় হয়। মামলা থেকে রেহাই পেতে মোটা অংকের মিশনে নেমেছে তারা। একই সাথে সন্দেহভাজন খুনিরা তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল বাদিকেও ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করছে। আর খুনিদের রক্ষায় বাদি ও পুলিশের সাথে সমযোতার চেষ্টা করতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জুহুর আহম্মদ চৌধুরী ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সোলতান আহম্মদ।
আমাদের প্রতিনিধির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে খুনিদের রক্ষা করার চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
আমাদের প্রতিনিধির অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, খুনের সন্দেহভাজন তোফায়েল ও রহিমকে বাঁচাতে বাদির পরিবারের সাথে কয়েক দপা বৈঠক করেছে বিএনপি নেতা জুহুর আহম্মদ ও সোলতান। এমন কি টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার অপচেষ্টাও করছে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে, টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে নিহতের ভাই কামাল উদ্দিন। কারণ হিসেবে তারা জসিমের মোবাইল ফোনে ঢেকে নেয়াসহ রক্তমাখা শার্ট উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছেন। যা তদন্তকারি পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তারপরও অভিযুক্ত কাউকে আটক করতে পারিনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাদির পরিবার।
নিহত জসিমের বড়ভাই কামালের দাবি, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী তোফায়েল ও রহিমকে গ্রেফতার করলে জসিম হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে তোফায়েল এবং রহিম আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে জড়িত থাকার অনেক তথ্যপ্রমাণ পুলিশের কাছে দিয়েছি। কিন্তু কি কারণে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।
জানতে চাইলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনচুর বলেন, অপরাধী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দ্রæত সময়ের মধ্যে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।

সূত্রঃ আলোকিত কক্সবাজার


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা