নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারুয়াখালীতে সাইমুন (১৫) নামের এক অটো রিকশা ( টমটম) চালককে জবাই করে হত্যা করেছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
গত ১১/০৮/২১ ইং কক্সবাজার সদর থানাধীন ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব ঘোনার পাড়া এলাকায় সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হকের বসত বাড়ির পূর্ব পাশে পাহাড়ের ঢালু থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শিশুর মামা বাদশাহ মিয়া চিহ্নিত সন্ত্রাসী ৫ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং- ২২/৫০২)
আসামিরা হলেন, ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের পূর্ব ঘোনার পাড়া মহিউদ্দিনের পুত্র মনির আহমদ (২০), ৬ নং ওয়ার্ডের করিম সিকদার পাড়া এলাকার জহির আহমদের পুত্র মোঃ শামীম (২০), ৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব ঘোনার পাড়া এলাকার মৃত রশিদ আহমদের পুত্র সিরাজুল হক (৪৮), একই এলাকার মৃত মোজাফফর আহমদের দুই পুত্র মহিউদ্দিন (৫০) ও মোঃ শাহীন (৩২)।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত মোঃ সাইমুন প্রতিদিনের ন্যায় ১১ আগষ্ট মিনি টমটম নিয়ে বের হয় জীবিকার তাগিদে। তাকে যাত্রী বেশে ঘোনা পাড়াস্থ গহীন অরণ্যে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী চক্র। সেখানে নিয়ে তাকে জবাই করে বস্তা বেধে ফেলে রাখে। পরে সাইমনের কাছ থেকে ছিনতাই করা টমটমটি চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী এলাকায় বিক্রি করতে যায় একই এলাকার মহি উদ্দীনের ছেলে চিহ্নিত ছিনতাইকারী মনির নামের এক যুবক। সেখানে মনিরের গতিবিধি সন্দেহ হলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে৷ বিষয়টি এলাকায় চাউর হলে নিখোঁজ সাইমনের স্বজনরা মনিরের বাড়ির আশেপাশের পাহাড়ের সম্ভাব্য স্থানে খোঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে ধানী জমির ওপর খুনি চক্রের চলাচলের অতিরিক্ত পায়ের চিহ্ন দেখতে পেয়ে সন্ধান চালায়। সন্ধানের এক পর্যায়ে পাহাড়ের নিচে জঙ্গলের ভেতর বস্তাবন্দি একটি বস্তু দেখতে পান। তাদের শোর চিৎকারের এলাকাবাসী এগিয়ে এসে পুলিশকে খবর দেন। রাত ৮ টার দিকে কক্সবাজার সদর ও রামু থানার দুইটি পৃথক টিম গহীন অরণ্য থেকে লাশটি উদ্ধার করে। এদিকে খবর পেয়ে সাইমনের নানার বাড়ি এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা ছিনতাইকারী মনিরের বাসায় আগুন লাগিয়ে দেয়।পরে খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এলাকাবাসীর দাবি, শিশু সাইমুনকে হত্যাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নিহতের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে। এঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। হত্যাকারী সন্ত্রাসীরা উল্টো এলাকার জনসাধারণের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা করেছে। এলাকায় অসহায় পরিবার এবং সাধারন মানুষের উপর প্রতিনিয়ত নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
নিহত সাইমনের মামা মামলার বাদী বাদশাহ মিয়া জানান, এই সন্ত্রাসীরা আমার বাগিনাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এলাকায় তারা খুব বেশি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। আমার ভাগিনা হারানোর শোক এখনো শেষ হয়ে উঠেনি, এর মধ্যে তারা উল্টো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকেসহ অত্র এলাকার ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে আদালতে। আমি, আমার পরিবার এবং এলাকার সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি আমার ভাগিনার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য মাননীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে অভিযান পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে আসামীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানাই।
তিনি আরো বলেন, এই ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে আমাদের অসহায় জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মানবতার মা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্যাকুল ভাবে আবেদন করছি।
ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, শিশু সাইমন হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত একটি হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক বিষয়। ছোট্ট একটি শিশুকে এভাবে হত্যা করা এটা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, সে সকল সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি, এ হত্যাকাণ্ডের আসামিদের মধ্য থেকে, উল্টো আমার এলাকার সাধারণ জনগনের উপর যে মিথ্যা মামলা বিজ্ঞ আদালতে করা হয়েছে, এই মিথ্যা মামলার নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক আরিফুল্লাহ নূরী বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একের পর এক চলছে অপ্রত্যাশিত হত্যাকাণ্ড। চকরিয়ায় নোবেল হত্যাকাণ্ড, ভারুয়াখালীতে শিশু সাইমন হত্যাকাণ্ড, কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর পুত্র হত্যাকাণ্ডসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাস দমনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো বেশি সোচ্চার হয়ে কাজ করা উচিত। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে শিশু সাইমন হত্যাকারীদেরসহ সকল সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানান।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মনির উল গিয়াস বলেন, শিশু সাইমন এর হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য অভিযান চলমান রয়েছে। সন্ত্রাসী যত বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন, শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এফএন
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুনতাকিম হোছাইন
বার্তা সম্পাদক: ইকবাল হোছাইন
মেইলঃ bangladeshpaper71@gmail.com
অফিসঃ ০১৮৮-৬৬১০৬৬৬ বার্তা প্রধান ০১৮৫৭৬৭১৯৪৩
কপিরাইট আইন,২০০০ © অনুসারে বাংলাদেশ পেপার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত