রাকিবুল ইসলাম রাফি:
বছরের জুন কিংবা জুলাই মাস এলেই ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় রাজবাড়ীর পদ্মা পাড়ের শত শত মানুষ৷ এ বছরও এই জেলায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে৷
গত ১৩ জুলাই পদ্মার ভাঙনে ১০ মিনিটে বিলীন হয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটের মাঝামাঝি ১শ ৫০ মিটার এলাকা। যার মধ্য দিয়ে এবছর পদ্মার ভাঙনের সূচনা হয়।
এরপর গত ১৬ জুলাই রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোদার বাজার থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে শহর রক্ষা বাঁধের নদীর তীর এলাকার প্রকল্পের স্থানের কাজ শেষের দুই মাস না যেতেই প্রায় ৩০ মিটার এলাকা ভেঙে যায়।
পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলমান থাকাকালীন গত ২৭ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার গোদারবাজার এনজিএল ইট ভাটা এলাকায় রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়। যার ফলে ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে ইট ভাটা ও গোদার বাজার ঘাট এলাকার প্রায় ৬০ মিটার সিসি ব্লকসহ বাঁধ ধসে যায়। প্রায় ৬০মিটার সিসি ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ফলে ওই এলাকায় এনজিএল ইটভাটা সহ শতশত বাড়িঘর হুমকির মধ্যে।
সর্বশেষ সর্বগ্রাসী পদ্মার কবলে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পাশে মজিদ শেখের পাড়া। গত ৩০ জুলাই (শুক্রবার) সকাল ছয়টার দিকে সূর্যের আলো ছড়ানোর আগেই নদী ভাঙার শব্দে ঘুম ভাঙে তাদের। চোখের সামনে ভেঙে যায় বাপ দাদার আমলের বসত ভিটা আর তাদের এত দিনের জমানো স্বপ্ন। আতঙ্ক আর ভয় জাগানিয়া দৃশ্যে বিহবল হয়ে পরেন তারা। দ্রুত ছোটাছুটি শুরু হয় যার যা কিছু আছে সেটা রক্ষা করার প্রয়াসে। এই ভাঙনে নদী তীরবর্তী প্রায় ৩০মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
নদীপাড়ের গাছপালা, কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত নদীর খরস্রোতা জলে৷ জলের গভীর থেকে মাটির তলদেশের ভাঙ্গনে খসে পড়ছে সবুজ-সুন্দর গ্রাম৷ মজবুত কংক্রিটের স্থাপনা ধীরে ধীরে কিভাবে জলের অতলে ডুবে যায় সেই ভয়াল দৃশ্য আঁতকে উঠার মতো৷ সেই দৃশ্য সবাইকে হয়তো ছোঁয়ও না।
এখনো হুমকির মুখে রয়েছে শত শত ঘরবাড়ী ও অন্যান্য স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে নদীপার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের ঘরবাড়ী।
ভাঙন প্রতিরোধে পদ্মাপাড়ের বহু বাসিন্দার আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান সহ নানা কর্মসূচী পালন করা হলেও ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ।
গত ৩০ ও ৩১ জুলাই রাজবাড়ীর কয়েকটি ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অনেকেই তাদের শেষ আশ্রয়স্থল টুকু ভেঙে রাস্তায় নিয়ে রাখছেন। আবার কেউ কেউ মিস্ত্রি না পেয়ে নিজেরাই ভাঙার কাজ করছেন।
জেলার দৌলতদিয়া এলাকার ভাঙন কবলিত স্থানীয় বাসিন্দা টোকন বলেন, অব্যাহত পদ্মার ভাঙন রোধে কার্যকরি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। কয়েক বছর ধরে শুনে আসছি ভাঙন রোধে কাজ করা হবে কিন্তু কিছুই হয়নি। এমন ভয়াবহ ভাঙন ঠেকানো না গেলে পুরো দৌলতদিয়াই নদীগর্ভে চলে যাবে। হয়ত মানচিত্র থেকে চলেই যাবে দৌলতদিয়ার নাম রূপ নেবে জলে ভরা পদ্মায়। গত ১৫ বছরে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার ভেঙে নিয়ে গেছে সর্বগ্রাসী পদ্মা। তখন থেকে শুনে আসছি ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। বালুর বস্তা ছাড়া এখানে কোন কাজ হয়নি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের নদী ভাঙন থেকে বাঁচান।
আবার অনেকে অভিযোগ করে বলেন পদ্মা নদী থেকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে বছরের পর বছর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ ও ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ করেছিল বলেও জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, দৌলতদিয়ার লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, ঘাট সংলগ্ন কয়েকটি গ্রাম এবং ঘাটের উজানে আরো কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। ঘাটগুলো ছাড়াও হুমকিতে রয়েছে বহু পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি কিন্তু প্রতি বছর ভাঙন শুরু হলেই বালির বস্তা ফেলা ছাড়া তারা কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেননা।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আমি ভাঙন পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। আশা করছি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুনতাকিম হোছাইন
বার্তা সম্পাদক: ইকবাল হোছাইন
মেইলঃ bangladeshpaper71@gmail.com
অফিসঃ ০১৮৮-৬৬১০৬৬৬ বার্তা প্রধান ০১৮৫৭৬৭১৯৪৩
কপিরাইট আইন,২০০০ © অনুসারে বাংলাদেশ পেপার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত