মৎস্য বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় খাত একুরিয়াম

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২১

রাকিবুল ইসলাম রাফি

বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের ভেতরের শোভা বৃদ্ধির জন্যে আমাদের দেশের মানুষের একুরিয়াম মাছ পালার শখ আছে। তবে এই শখটি নতুন এক বাণিজ্যেকে প্রসারিত করেছে। একুরিয়াম শুধুই একটি কাচের শোপিস নয়, এটি অনেকের জন্য এখন উপার্জনের উৎসও বটে।

খাওয়ার জন্য নয়, পালনের জন্য যে মাছ যেমন, গোল্ডফিশ, এঞ্জেল, শার্ক, টাইগার বার্ব, ক্যাট ফিশ, ঘোষ্ট ফিশ, মলি, গাপ্পি, ফাইটার (বেট্টা), সাকার ইত্যাদি চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের চাষীরা। ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়াসহ বেশকয়েকটি জেলায় হচ্ছে বাহারি জাতের এসব একুরিয়াম ফিসের পোনা উৎপাদন ও চাষ। বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। গবেষকরা বলছেন এসব মাছের বড় অংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে দেশে এর চাষ ব্যাপক হারে করা গেলে রয়েছে চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির সুযোগ।

বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের ভেতরের শোভা বৃদ্ধির জন্যে আমাদের দেশের মানুষের একুরিয়ামে মাছ পালনের শখ রয়েছে। তবে এই শখটি নতুন এক বাণিজ্যেকে প্রসারিত করেছে। একুরিয়াম শুধুই একটি কাচের শোপিস নয়, এটি অনেকের জন্য এখন উপার্জনের উৎসও।

খুলনা শহরের খান জাহান আলী রোডের ফারাজি পাড়ায় বেশ কয়েকটি একুরিয়াম ফিসের দোকান রয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা একুরিয়াম ফিসের কদর ক্রমশ বাড়ছে। এখানকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাসির হোসেন জানান, একুরিয়াম ফিসের প্রতি কম বয়সের ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। বাসায় নিজেদের সাধ্যমতো শখে মাছ পালন করছে অনেকেই। সরঞ্জামের দাম একটু বেশি। আর মাছের জাত বাড়ানো আরও বাড়ানো গেলে বিক্রি আরো বাড়বে। এই ব্যাবসায় তিনি আরো বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। একই স্থানের আরেক ব্যাবসায়ী রশিদ বলেন রঙিন মাছের বেশির ভাগ বিদেশি তাই দামও বেশি। এসব মাছ যদি দেশে উৎপাদন হতো তাহলে শোভাবর্ধনকারী অনেক মাছই ক্রেতার হাতের নাগালে থাকতো। তিনি জানান স্থানীয়ভাবে কিছু চাষ হয় যা তিনি কম দামে দিতে পারছেন। এতে ক্রেতারাও খুশি হচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, দামি মাছের ক্রেতারা হচ্ছেন দেশে গড়ে উঠা রিসোর্টগুলো। যারা রিসোর্টের শোভা বৃদ্ধিতে জলাশয়ে রঙিন মাছ রাখেন। জানা গেলো বছরে গড়ে বিশ লাখ টাকার এই মাছ বিক্রি করেন তিনি। যেখানে লাভের পরিমাণ মোট বিক্রির ত্রিশ শতাংশ।

কুষ্টিয়ার লাভলী টাওয়ার সংলগ্ন লোকাল মার্কেটের একুরিয়াম ফিসের ব্যবসায়ী রেজাউল বলেন, স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও এখন দিনে দিনে তার বাজার বাড়ছে। তিনি তার চাষ করা একুরিয়াম ফিস বেশ কয়েকটি একুরিয়াম শপে সরাসরি সাপ্লাই দেন। দোকানদার ঘরে বসেই তার মাছ পেয়ে যায়। তার ব্যাবসারও দ্রুত প্রসার ঘটছে। তিনি বলেন, ‘এসব মাছ নিয়ে দেশে গবেষণা করে দেশেই একুরিয়ম ফিসের জাতের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। সহজ চাষ পদ্ধতি বের করা গেলে আমাদের নতুন আয়ের এ পথ আরও গতি পেত। নতুন নতুন উদ্যোক্তা আগ্রহী হতো।’

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মাছ চাষী লিজন জানান, ‘দেশে চাষ করা মাছের রঙের উজ্জলতা একটু কম থাকে। এটি হয়তো পানির সমস্যা বা খাবারের মাত্রার হেরফের। এই সমস্যা সমাধান করে যদি মৎস বিভাগ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে উৎপাদন বাড়বে, পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি কমবে একুরিয়াম ফিসের।’

কথা হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুবাইদা নাসরীন আখতারের সাথে। ‘তিনি বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন ও থাইল্যান্ড উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি লাভ করেছে এ ধরনের মাছ চাষ করে। বাংলাদেশে এখনও একুরিয়াম ফিসের বড় অংশই বিদেশ থেকে আসে। তবে দেশের মাছ চাষীদের এই সেক্টরে আগ্রহী করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা যাবে বিদেশেও। বিদেশে এধরনের মাছের ব্যাপক চাহিদা আছে আর যেহেতু বাংলাদেশ মাছ চাষে বিশ্বে অনেক এগিয়ে। তাই এই খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন খাতও হতে পারে দেশের জন্য।’

তিনি নিশ্চিত করেন এ লক্ষ্যে, বাংলাদেশে মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিউট কাজ করছে। বিদেশি মাছের পাশাপাশি দেশীয় কিছু মাছের জাতও আছে যা একুরিয়ামের জন্য চাহিদা রয়েছে। তাই একুরিয়াম ফিস হিসেবে দেশীয় প্রজাতির কিছু মাছের প্রজনন ও চাষ পদ্ধতি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন তারা।