আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যারা জাকাত দেয় তারা সফলকাম। (সূরা মু’মিনূন আয়াত- ৪)
জাকাত আরবি শব্দ। আভিধানিকভাবে শব্দটির কয়েকটি অর্থ দেখা যায়। যেমন পূত-পবিত্রতা, পরিশুদ্ধি-পরিচ্ছন্নতা,সুচিন্তা এবং প্রবৃদ্ধি ও ক্রমবৃদ্ধি।
জাকাতের পারিভাষিক সংজ্ঞায়নে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী বলেন- ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদের নিসাবপূর্তির পর, যে কোনো মুসলিম দরিদ্রকে শরীয়তের নির্ধারণ অনুযায়ী সেখান থেকে সম্পদ দেয়াই জাকাত।
ইসলামী শরীয়তের পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে জাকাতের সংজ্ঞা হচ্ছে- কোনো 'সাহিবে নিসাব' মুসলমানের তথা নিজ ও নিজ পরিবার পরিজনের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় বার্ষিক ব্যয় মেটানোর পর বছরান্তে যদি ন্যূনতম পক্ষে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তার সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকে, তবে ওই ধন-সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ (২.৫০%) আল্লাহর নির্ধারিত আটটি খাদে প্রদান করাকে জাকাত বলা হয়।
মোটকথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে জাকাত। জাকাত ইসলামী অর্থনীতির অনন্য রক্ষাকবচ। দরিদ্রতা নিরসনে জাকাত প্রবর্তন ইসলামী শরীয়তের একটি কার্যকর পদ্ধতি।
সুতরাং সম্পদশালীদের উচিত তার সম্পদ হকদারের মাঝে সুস্থভাবে বন্টন করা। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জিত হয়।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সোনা-রুপার মালিক তার উপর জাকাত ফরজ। আদায় না করলে আল্লাহর আদালতে তার সম্পদ একত্র করে আগুনের পাত তৈরী করে সেই পরিমাণে তার দেহকে প্রশস্ত করা হবে। অতঃপর সেই পাত জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে, তখন আবার উত্তপ্ত করে অনুরূপ দাগ দেয়া হবে এবং এভাবে ক্রমাগত চলতে থাকবে, যে দিনটির দৈর্ঘ্য ৫০ হাজার বছরের সমান হবে। অতঃপর হিসাব-কিতাব আরম্ভ হবে এবং নিজপ্রাপ্য স্থান জান্নাতে কিংবা জাহান্নামে যাবে।
জাকাত প্রদানকারীকে অব্যাহতি দান। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আত তাওবা আয়াত- ৫)
জাকাত প্রদানকারী মুমিনদের দ্বীনি ভাই। অতএব, যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে, এবং জাকাত প্রদান করে, তবে দ্বীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই। আর আমি আয়াতসমূহ যথাযথভাবে বর্ণনা করি এমন কওমের জন্য যারা জানে। (সুরা আত তাওবা, আয়াত- ১১)
রাসুলে কারীম (সা.) বলেছেন, পরকালে সে সব সম্পদশালী লোকদের ধ্বংস ও আফসোসের সীমা-পরিসীমা থাকবে না, জাকাত ফরজ হওয়ার পরেও যারা গরীব মিসকিনদের অধিকার নষ্ট করেছে। অধিকারবঞ্চিতরা সেদিন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলবে,এরা আমাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আপনার নির্ধারিত ফরজ পরিত্যাগ করে আমাদের উপর জুলুম করেছে।
আল্লাহ বলবেন আমার সম্মান ও প্রতাপের শপথ, আমি তাদের থেকে অবশ্যই তোমাদের অধিকার আদায় করব এবং তাদের আমার দয়া থেকে বহুদূরে নিক্ষেপ করব।
জাকাত আদায়ের এই পদ্ধতি ঠিক নয়
কাপড়ের দোকানে লেখা থাকে এখানে জাকাতের কাপড় পাওয়া যায়। মাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়ে মানুষের সামনে ইটিয়ে ইটিয়ে কাপড় দেয়া হয়, তাতে পদদলিত হয়ে অনেক প্রাণ ঝরে যায়। এটি মানবতার চরম অবক্ষয়।
আসুন! সঠিক পদ্ধতিতে জাকাত প্রদান করি, এতে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সুন্দর একটি সমাজ প্রতিষ্ঠত হবে- ইনশাআল্লাহ।
লেখক: খতিব, প্রাইম গ্রুপ জামে মসজিদ
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মুনতাকিম হোছাইন
বার্তা সম্পাদক: ইকবাল হোছাইন
মেইলঃ bangladeshpaper71@gmail.com
অফিসঃ ০১৮৮-৬৬১০৬৬৬ বার্তা প্রধান ০১৮৫৭৬৭১৯৪৩
কপিরাইট আইন,২০০০ © অনুসারে বাংলাদেশ পেপার কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত