রাজমুকুট কোহিনূর রয়েছে টাওয়ার অফ লন্ডনে

প্রকাশিত: ৭:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০১৯

বিশ্বের প্রাচীনতম যেসব ক্যাসল বা দুর্গ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’। যেখানে রয়েছে ভারতবর্ষ থেকে সংরক্ষিত পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রাজমুকুট ‘কোহিনূর’। ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ হল মূলত বেশ কয়েকটি টাওয়ারের সমন্বয়ে গড়া একটি প্রাচীন দুর্গ।

প্রাচীন স্থাপত্যকলার সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা এ টাওয়ারগুলো দেখতে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় বছরজুড়েই লেগে থাকে। মধ্যযুগীয় রাজাদের আমলে ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ রাজকীয় রাজপ্রাসাদ হিসেবে গড়ে উঠলে এক সময় এটি অত্যাচার, শাস্তি আর শিরশ্ছেদের মতো নানা ভয়ানক ও হৃদয়বিদায়ক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ পৃথিবীব্যাপী অতিপরিচিতি হওয়ার আরও অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ইংল্যান্ডের সব রাজকীয় গয়না ও সম্পদের অন্যান্য ভাণ্ডার এটি। রানীর সব মুকুট এখানেই সুরক্ষিত হয়ে বিশাল নিরাপত্তার আবরণে রয়েছে। শত শত বছরের পুরনো সেসব অলঙ্কারের পাশাপাশি স্বর্ণের কারুকাজ সম্বলিত রাজপ্রাসাদের আসবাসপত্র প্রতিনিয়তই বিশ্বপর্যটকদের কাছে টানছে। ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ এ প্রবেশ করে ঠিক মধ্যখানে কড়া নিরাপত্তার আদলে ঢাকা ‘দ্য ক্রাউন জুয়েল’ যেখানে রক্ষিত আছে রাজপরিবারের মহামূল্যবান রত্ন ভাণ্ডার।

রানীর রত্ন সম্ভারের মধ্যে সেরা হল ‘কোহিনূর’, ‘স্টেট ইম্পিরিয়াল ক্রাউন’, ‘ব্লাক প্রিন্সেস রুবি’, ‘কালিনান হীরে’ এরকম বেশকিছু রাজমুকুট। এর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ কোহিনূর। দিল্লীর সম্রাটদের রত্নভাণ্ডারের এ হীরক খণ্ডটি ইংরেজরা ভারতবর্ষ থেকে নিয়ে যায়। সেটাতে পরপর ছয়টি রত্নখচিত। মুকুটের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বিশেষ কোনো মুহূর্তে রানী এ মুকুট পরে থাকেন। তাছাড়া ‘স্টেট ইম্পিরিয়াল ক্রাউন’ নামের মুকুটটি রানী প্রতি বছর পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর দিন পরেন। এ মুকুটের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে ৩ হাজার ছোট ছোট মণি-মুক্তার গোছায়।

পুরো ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের ইতিহাস জানতে আপনাকে ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ এ যেতেই হবে। বিশাল বিশাল বেশ কয়েকটি প্রাসাদ বর্তমানে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছরের জীবন্ত ইতিহাস হয়ে। এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে এক হাজার বছরের পুরনো এ দুর্গে কৃষক অভ্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা আক্রমণ, রাজবন্দিদের হত্যা-নির্যাতনসহ নানা স্মৃতিকথা আজও বহন করছে। লোকমুখে এখনও এ দুর্গটি ঘিরে রটছে নানা ভৌতিক গল্প।

লন্ডন ব্রিজের কাছে ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ নামের এ দুর্গটি রয়েছে। এরই মধ্যে এখানকার সল্ট টাওয়ার, ব্রড আ্যরো টাওয়ার, কনস্টেবল টাওয়ার, মার্টিন টাওয়ার, বিউক্যাম্প টাওয়ার, লোয়ান উইকফিল্ড টাওয়ারসহ বেশকিছু টাওয়ার নিয়ে গড়ে ওঠা ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’। এ দুর্গটি টেমস নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। দুর্গটির আরও একটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে কৃত্রিম তৈরি পপি ফুলের গাছ। ৮ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৬টি সিরামিকের তৈরি পপিগাছের লাল ফুল দূর থেকে ভেসে উঠে রক্তের স্রোতধারা। দৃষ্টিনন্দন এ প্রাসাদ থেকে বের হয়েই চোখে পড়বে লন্ডন ব্রিজ। পড়ন্ত বিকালে টেমস নদীর তীরে হাঁটতেও ভীষণ ভালো লাগে।

যারা ইংল্যান্ড বেড়াতে আসেন তারা কখনও ভুল করেন না ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ দেখতে। আসা করি আপনি ইংল্যান্ড বেড়াতে এলে কালের সাক্ষী ইংল্যান্ডের হাজার বছরের জীবন্ত ইতিহাস ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ দেখে যাবেন।

যুক্তরাজ্য থেকে