বাংলাদেশ, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কারাগার থেকে লাফিয়ে পালিয়েছিল বন্দি রুবেল

বাংলাদেশ পেপার ডেস্ক ।।  সংবাদটি প্রকাশিত হয়ঃ ২০২১-০৩-০৯ ১২:৩৬:৪৩  

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালানোর জন্য একটি ভবনের চারতলা থেকে লাফ দেন বন্দি ফরহাদ হোসেন রুবেল। এর আগে তিনি ভবনের পাঁচতলার কক্ষ থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে চারতলায় পৌঁছেন। কারাগারের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কারা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

সোমবার (৮ মার্চ) রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান ও খুলনা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) ছগীর মিয়া গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, কারাগারের সেলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, ভোর ৫টার আগেই ফরহাদ হোসেন রুবেল ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে নেন। এরপর তাকে ওই সিসি ক্যামেরায় আর দেখা যায়নি। পরে আরেকটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, কর্ণফুলী ভবনের নিচতলা থেকে রুবেল বের হচ্ছেন। ভোর সোয়া ৫টায় আরেকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে বন্দি রুবেলকে কারাগারের ফাঁসির মঞ্চের পাশের নির্মাণাধীন চারতলা ভবন থেকে সীমানা দেয়ালের বাইরে লাফ দিতে দেখা গেছে।

ছগীর মিয়া বলেন, রুবেল ছাদ থেকে লাফিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তার পালানোর বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট। তবে এ কাজে তাকে কেউ সহযোগিতা করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল সোমবার ফায়ার সার্ভিস ডেকে কারাগারে দিনভর তল্লাশি পরিচালনা করে রুবেলের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি।

চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানা এলাকায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান রুবেল। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মীরেরকান্দি গ্রামের শুক্কুর আলী ভাণ্ডারীর ছেলে। গত শনিবার কারাগারে বন্দি রুবেলের খোঁজ মিলছিল না। এর আগেও তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। রুবেল কর্ণফুলী ওয়ার্ডের পঞ্চম তলায় পানিশমেন্ট ওয়ার্ডে থাকতেন।

রুবেল কারাগার থেকে পালিয়েছেন—এই তথ্য নিশ্চিত করে এক কারা কর্মকর্তা বলেন, ‘রুবেল পালিয়েছে, এটি সিসি ক্যামেরার তথ্য অনুযায়ী নিশ্চিত। সে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে পারে। কারণ এত উঁচু থেকে লাফ দেওয়ার পর নিশ্চিতভাবেই সে আহত হয়েছে—এটা বলা যায়।’

রুবেল যে স্থান দিয়ে লাফ দিয়েছেন, সেই ভবনের পাশেই আরেকটি নির্মাণাধীন ভবন আছে। উচ্চতা পর্যালোচনা করে কারা কর্মকর্তাদের মনে হয়েছে, রুবেল ৪০ ফুটের বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দিয়েছেন। এত উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ায় তাঁর আহত হওয়ার কথা। এ কারণে রুবেল কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রুবেল যে স্থান দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়েছেন, সেই স্থানের অদূরেই চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজনের কার্যালয়। সেই কার্যালয়ে নিয়মিত প্রহরী থাকেন। তাঁদের দৃষ্টিতেও রুবেলের লাফ দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েনি। এ ছাড়া কারাগারের চারপাশে উঁচু টাওয়ার আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে কারাগারের প্রহরীরা চারদিকে দৃষ্টি রাখেন। তাঁদেরও দৃষ্টি এড়িয়েছে রুবেলের লাফ দেওয়ার বিষয়টি। এই পরিস্থিতিতে কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

বন্দি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার দিন শনিবার সকালে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পুলিশ। রাতে একই ঘটনায় মামলা করা হয়। বন্দি নিখোঁজের ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ পৃথক আদেশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদাতকে প্রত্যাহার করেছে। এ ছাড়া দুই কারারক্ষীকে বরখাস্ত এবং একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে কারা অধিদপ্তর গঠন করে তিন সদস্যের কমিটি। এই কমিটির প্রধান হিসেবে আছেন খুলনা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. ছগীর মিয়া। তাঁর সঙ্গে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের সুপার ইকবাল হোসেন ও বান্দরবান কারাগারের জেলার ফোরকান ওয়াহিদ। এই কমিটি গতকাল ফায়ার সার্ভিস ডেকে দিনভর তল্লাশি পরিচালনা করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ কার্যালয়ের কন্ট্রোল ইনচার্জ কফিল উদ্দিন গতকাল রাতে বাংলাদেশ পেপারকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয়েছে। পুরো কারাগার তন্নতন্ন করে খুঁজেও রুবেলকে পাওয়া যায়নি।


পূর্ববর্তী - পরবর্তী সংবাদ
       
                                             
                           
ফেইসবুকে আমরা